জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে \ রাজধানীর মিরপুরের কালশী থেকে তেজগাঁও শিল্প এলাকায় নিজ ব্যবসায়িক কর্মস্থলে পৌঁছাতে ঘন্টাখানিক রাস্তায় অপেক্ষার পরও কাঙ্খিত বাসের দেখা পাননি জহিরুদ্দীন। আরও কিছু সময় অপেক্ষার পর অধৈর্য্য হয়ে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য বিকল্প রাস্তা ধরে ট্রাস্ট পরিবহনে উঠে বসেন তিনি। কর্মস্থলে পৌঁছানো এবং গন্তব্যে ফিরতে দৈনিক তার খরচ লাগত ৪০টাকা। সরাসরি সাতরাস্তার বাস না পাওয়ায় শুধু কর্মস্থলে পৌঁছাতেই জহিরের খরচ হয়েছে ৬০ টাকা। অর্থাৎ ট্রাস্টে কালশি থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ৩০ টাকা এবং সেখান থেকে রিকসায় শাহিনবাগে যেতে আরও ৩০ টাকা। শুধু জহির একা এই সমস্যা-সংকটে পড়েছে তা নয়; শনিবার (৬ আগস্ট) গণ-পরিবহনের ভরসায় গন্তব্যে যাওয়ার জন্য যারাই ঘর থেকে বের হয়েছিলেন সবাইকে একই সমস্যা ও ভোগান্ত্রি পোহাতে হয়েছে। কারণ শুক্রবারের তুলনায় এদিন গণ-পরিবহন কম ছিল সড়কে। এর আগে শুক্রবার দিনগত রাতে দেশে সব ধরণের জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়িয়েছে সরকার। জ্বালানির বিপরীতে বর্ধিত ভাড়া সরকার থেকে নির্ধারিত না হওয়ায় অনেক কোম্পানী তাদের গণ-পরিবহন রাস্তায় নামায়নি। এতে চরম ভোগান্ত্রিতে পড়তে হয়েছে রাজধানীর গণ-পরিবহনে চড়া সাধারণ মানুষদের। সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচল করা গণ-পরিবহনের বিভিন্ন স্টাফ ও সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। সাভারের হেমায়েতপুর-গাবতলী-মিরপুর-কালশী-ইসিবি চত্বর-যমুনা ফিউচার পার্ক হয়ে ডেমরা চলাচল করা রাজধানী পরিবহনে বাসভাড়া পাঁচ টাকা বাড়ানো হয়েছে বলে কথা বলে জানা যায়। রাজধানীর আরও কয়েকটি এলাকায় কিছু কিছু করে বাস ভাড়া নিজের থেকেই বাড়ানো হয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে পূর্বের নির্ধারিত ভাড়া নিয়েও অনেক বাস চলেছে শনিবার রাজধানীতে। এ ধরণের একটি কোম্পানী হচ্ছে প্রজাপতি পরিবহন। এটি মোহাম্মদপুর বছিলা-মিরপুর হয়ে উত্তরা চলাচল করে থাকে। আর গাবতলী-উত্তরা হয়ে গাজীপুর চলাচল করা বসুমতি পরিবহনসহ অন্যান্য রুটে চলাচল করা বাসগুলো পুরনো ভাড়ায় নিয়েছে যাত্রীদের কাছ থেকে। কালশী থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ট্রাস্ট পরিবহনে আগের মতই ভাড়া নিয়েছে ৩০ টাকা। অনেক যাত্রীকে গন্তব্য যেতে বর্ধিত ভাড়া নিয়ে বাস স্টাফদের সঙ্গে কথাও বলতে দেখা গেছে। তবে ট্রাস্ট পরিবহনের স্টাফ (নাম প্রকাশ করতে চাননি) বলেছেন, মালিক চেয়েছেন তাই চালাচ্ছি। রবিবার (৭ আগস্ট) থেকে শুনেছি বাস ভাড়া বাড়ানো হবে। বর্ধিত বাস ভাড়া ছাড়া যাত্রী বহন করলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে মালিকরা বলেও জানান ওই বাসের কন্ট্রাক্টার। এদিকে, বর্ধিত ভাড়া আদায় না করলেও সরকারের উপরে চাপ সৃষ্টি করার জন্য অধিকাংশই রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচল করা কোম্পানীর মালিকরা তাদের বাস শনিবার রাস্তায় নামায়নি। সীমিত সংখ্যক বাস থাকায় সাধারণ নাগরিকদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে বাসস্ট্যান্ডে। এর পরও কাঙ্খিত বাসেন দেখা মিলেনি এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাই অনেককে বিকল্প পথের বাসে চড়তে হয়েছে। রাস্তায় বাসের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে অনেকের সূর্যের প্রখর তাপে অস্বিস্তি প্রকাশ করতে দেখা যায়। এদের মধ্যে শিশু ও বয়স্ক মানুষদের শরীর থেকে ঘাম ঝরতে দেখা গেছে বেশি। বাসষ্ট্যান্ডে বসেই অনেকেই অসন্তোষ জানিয়েছেন। এদিকে, সরকার জ্বালানি তেলের বৃদ্ধির বিপরীতে বাস ভাড়া নির্ধারণে শনিবার সভা করেছে। সাধারণ যাত্রীসহ চালকরা আশঙ্কা করে শনিবার বলেছেন, রবিবার থেকে বর্ধিত ভাড়া নিয়েই আরও ঝামেলা বাড়তে পারে। গণ-পরিবহন সংকট আরও বাড়তে পারে। রাজনৈতিক নেতারাও এই জ্বালানি বৃদ্ধির সমালোচনা করেছেন। সংসদের বিরোধী দল জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের এটাকে নজিরবিহীন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। সাধারন মানুষতো শুক্রবার রাত থেকেই ক্ষোভ ও অসন্তোষ জানিয়ে যাচ্ছে। সরকারি চাকরিজীবীদের বাইরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের জন্য এই জ্বালানি বৃদ্ধিতে বড় ধাক্কা বলেও মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ। এমনিই একজন জসিম উদ্দিন। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী। তুরাগ বাসে চড়ে সায়দাবাদ থেকে এসে নামলেন রামপুরায়। আগের ভাড়ার সঙ্গে বাড়তি পাঁচ টাকা গুনতে হয়েছে তাকে। এ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন জসিম। বলেন, এক টাকা বেতন বাড়েনি খরচ বেড়েছে, সংসার চালানোই কঠিন হবে। রাজধানীর কাকরাইলে মোহাম্মদপুরগামী তরঙ্গ প্লাস বাসের কন্ডাকটর খায়রুল ইসলাম বললেন, আমাদের গাড়ি মোহাম্মদপুর পর্যন্ত যায়। সেখান থেকে আবার ছাড়ে। মোহাম্মদপুর থেকে বিভিন্ন রুটে গাড়ি যায়, বেশিরভাগ গাড়িই ছাড়ছে না। কারণ তেলের দাম বেশি, কিন্তু যাত্রীরা বাড়তি ভাড়া দিতে রাজি হয় না। আমরা পাঁচ টাকা করে ভাড়া বাড়িয়েছি। বাড়তি এই ভাড়াই মানুষ দিতে চায় না। মানুষের সঙ্গে ঝামেলা হয়। কিন্তু মালিক পক্ষ বলছে, তেলের দাম বেশি, ভাড়া বাড়াতে হবে। না হলে মনে হয়, রবিবার বাস নামাতে দিবে না মালিক। কিন্তু আজ অফিস আদালত বন্ধ হলেও রবিবার অফিস খোলা, যাত্রীর চাপ থাকবে, অনেক ঝামেলা হবে মনে হয়। মহাখালী বাস টার্মিনাল কেন্দ্রিক বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক এ প্রসঙ্গে বলেন, তেলের দাম বাড়ার সঙ্গে আনুষঙ্গিক জিনিসেরও দাম বেড়েছে। তাই এই মুহূর্তে তেলের দাম সমন্বয় করে আমাদের ভাড়া নির্ধারণ করলে হবে না। স্পেয়ার পার্টসের দামও এর সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। তবে, -বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, আমাদের সমন্বয় কমিটি আছে, তারা যেটা নির্ধারণ করবে, সেটা নিয়েই আলোচনা হবে। আপাতত আর কিছু বলতে পারছি না।