সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৪৪ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
সাতক্ষীরা আহছানিয়া মিশনের ক্ষমতা কুক্ষিগতকারী বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদের সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জ্বলসহ দুর্নীতিবাজদের বিচারের দাবীংেত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ সাতক্ষীরা শহর শিবিরের উদ্যোগে আন্ত:থানা ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আশাশুনি উপজেলা জামায়াতের কমিটি গঠন আশাশুনি সমাজ কল্যাণ পরিষদে অর্থে ভিক্ষুক পুনর্বাসন ও অনুদান বিতরণ নূরনগর আমীরের শপথ মজলিশে শূরা নির্বাচন ও কর্ম পরিষদ গঠন আশাশুনি টঙ্গী ইজতেমায় হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন সাতক্ষীরা উলামা পরিষদের মানব বন্ধন সাতক্ষীরায় কৃষি ঋণ কমিটির সভা নেহালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অসুস্থ ছাত্রীর বড়ীতে \ উচ্ছ্বাসিত শিক্ষার্থী পরিবার বটিয়াঘাটায় ইজতেমায় হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন

প্রতি সাড়ে তিন মিনিটে ভারতে সড়ক দুর্ঘটনায় একজনের মৃত্যু

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় সোমবার, ৮ আগস্ট, ২০২২

এফএনএস বিদেশ : প্রতি সাড়ে তিন মিনিটে ভারতে সড়ক দুর্ঘটনায় একজন নাগরিকের মৃত্যু হয়, এমন তথ্য দিচেছ দেশটির সরকারি পরিসংখ্যান। একবছরে দেশটিতে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় দেড় লাখ মানুষ। তবে সেটি আরও বেশি হতে পারে অন্যান্য সংস্থার হিসাবমতে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য বলছে, ভারতে বছরে তিন লাখ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে যা দ্বীপ রাষ্ট্র বার্বাডোসের জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। তবে ভারতের বিশাল জনসংখ্যা বলে এত বেশি দুর্ঘটনা, ব্যাপারটি এমন নয়। চীনেরও জনসংখ্যা ভারতের মতোই কিন্তু দেশটির কর্তৃপক্ষ বলছে, সেখানে ৫৮ হাজার হতাহতের ঘটনা ঘটে প্রতিবছর। ডব্লিউএইচও-র সূত্র ধরে বিশ্ব ব্যাংক বলছে, প্রকৃতপক্ষে, ভারতে বিশ্বের নিবন্ধিত যানবাহনের মাত্র ১০ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনায় ২২ শতাংশ মৃত্যুর জন্য দায়ী। এটিকে নিত্যদিনের গণহত্যা বলা যায়, যেটি জনসম্মুখে ঘটে। এটা কোনো গোপন বিষয় নয় যে ভারতের রাস্তাগুলো চরম বিপর্যস্ত। চালকরা লেনের চিহ্ন উপেক্ষা করেন। ট্রাফিক লাইট নাম মাত্র কাজ করে। এমনকি পথচারীরাও দ্রুত রাস্তা পারাপার হন। শুধু প্রাইভেট কার নয়, ওভারলোড করা লরি, অটোরিকশা, স্কুটার, এমনকি মোটরসাইকেল চলে একই সড়কে। ফলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির তৈরি হয়। অনেক শহরের রাস্তায় বিক্রেতারা রাস্তার অর্ধেক জায়গা দখল করে দোকান-পাট বসান। হাইওয়েতে রাস্তার ভুল দিকে গাড়ি চালানো অস্বাভাবিক কিছু নয়। এতেই ঘটে বিপত্তি। সড়কে বিশৃঙ্খলা একটি কাঠামোগত সমস্যাকে চিহ্নিত করে। গরীব দেশগুলোতে যানবাহনের সংখ্যা কম, যা খারাপ রাস্তায় ধীরে ধীরে চলে। ফলে জনসংখ্যার তুলনায় তুলনামূলকভাবে কম মৃত্যু হয় সেখানে, যদিও নিরাপত্তার মান কম হতে পারে। দুর্ঘটনা কমাতে ধনী দেশগুলো নিরাপত্তার জন্য প্রশাসনিক সক্ষমতা ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করতে পারে এবং কঠোর নিয়মের ব্যবস্থা করতে পারে। দ্রুত বর্ধনশীল দেশগুলোর প্রচুর যানবাহন ও কিছু ভাল রাস্তাঘাটও রয়েছে, কিন্তু নিরাপত্তার জন্য খুব বেশি অর্থ বিনিয়োগে মনোযোগ দেয় না। সেসব দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। নিরাপদ বিনিয়োগের সংকটের ক্ষেত্রে তিনটি প্রধান দিক রয়েছে। প্রথমটি হলো, রাস্তা ও গাড়ির মৌলিক অবকাঠামো। অনেক যানবাহন পুরোনো এবং সিটবেল্ট, অনেক কম এয়ারব্যাগের মতো প্রয়োজনীয় জিনিস রয়েছে। অনেক রাস্তার সঠিক চিহ্ন বা ক্র্যাশ ব্যারিয়ার নেই। পথচারীদের ট্র্যাফিক থেকে দূরে রাখার জন্য ফুটপাতগুলোও খুব কম ব্যবহার হয় এবং দখল হয়ে যায়। আমেরিকার একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউটের মাধব পাই বলেছেন, ‘মৌলিক সমস্যা’ হলো যে অনেক দরিদ্র দেশে রাস্তার নকশা ধনী বিশ্বের আদলে তৈরি করা হয়েছে, যেখানে গাড়ি এবং লরিগুলোই সড়ক দখলে রাখে। কিন্তু ভারতে মোটরসাইকেল ও স্কুটারের ব্যবহার ৭০ শতাংশ। এসব যানবাহন একটি গাড়ির তুলনায় ৩০ গুণ বেশি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ধ্বংস হতে পারে। তবুও ভারতীয় রাস্তাগুলো দুই চাকার গাড়ির জন্য আলাদা লেন নির্ধারণ করে না। দ্বিতীয় ব্যর্থতা হলো শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ। ২০১৭ সালে পরিচালিত একটি সমীক্ষায় জানা যায়, প্রতি দশজন ভারতীয় চালকের মধ্যে ছয়জন তাদের লাইসেন্স পাওয়ার জন্য পরীক্ষা দেননি। অভিযোগ আছে, এর ফলে এখনো লাখ লাখ চালক ঘুষের মাধ্যমে কাগজপত্র পান। ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য পরীক্ষা প্রায়শই একটি হেঁয়ালিপনা সেখানে। আরও ভয়ানক বিষয় হলো ৩৭ শতাংশ ট্রাক চালক স্বীকার করে যে লাইসেন্স পাওয়ার আগে তাদের কোনো আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ ছিল না। তৃতীয় বড় ঘাটতি হলো স্বাস্থ্যসেবা। একটি দুর্ঘটনা ঘটলে, ধনী দেশের তুলনায় আহতদের মারা যাওয়ার শঙ্কা অনেক বেশি গরীব দেশগুলোতে। সরকারি অনুমান বলছে যে নিহতদের অর্ধেককে বাঁচানো যেত যদি তারা সময় মতো চিকিৎসা সহায়তা পেত। কিন্তু শহরের বাইরে জরুরি সেবার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। এ ছাড়া হাসপাতালে ট্রমা রোগীদের জন্য শয্যার সংকট রয়েছে। জনসংখ্যার সঙ্গে চিকিৎসকের অনুপাতে প্রতি এক হাজার জনে চিকিৎসক একজনেরও কম। যা প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তান, এমনকি ধনী জার্মানি অথবা জাপানের চেয়েও কম ভারতের। দরিদ্র কর্মজীবী পুরুষরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। তাদের আহত হওয়ার শঙ্কা বেশি এবং তাদের স্বাস্থ্যবীমাও থাকে না। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা অবহেলার কারণে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে ব্যয় বিলও দরিদ্র পরিবারকে অসহায় অবস্থায় ঠেলে দেয়। ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাংক সড়ক দুর্ঘটনার বার্ষিক ব্যয় হিসাব করে ১৭২ বিলিয়ন ডলার যা সে সময় জিডিপির ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ছিল। ভারতের সরকার সমস্যার ভয়াবহতা সম্পর্কে অন্ধ নয়। ২০২০ সাল থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা অর্ধেক করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে দেশটি। ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে জরিমানা গুণতে হবে এবং জেলে যেতে হবে। মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালানো, কম বয়সী কেউ গাড়ি চালালে বা সঠিক নম্বর প্লেট ছাড়াই গাড়ি চালালে অপরাধ বলে গণ্য হবে। হেলমেট ছাড়া স্কুটার বা মোটরসাইকেল চালালে তাদের লাইসেন্স স্থগিত করা হবে। একটি ভালো সামেরিটান আইন যা নিশ্চিত করে যে পথচারীদের পুলিশ হয়রানি করবে না বা দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের সাহায্য করলে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে বলা হবে না। দুর্ভাগ্যবশত, এখনো এটির কোনো ফলাফল নেই। সহায়তা প্রদানকারীদের জন্য নতুন সুরক্ষা প্রবর্তনের দুই বছর পর, একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, এই ধরনের প্রায় ৬০ শতাংশ লোক এখনো পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হয়। রাস্তাঘাট, স্বাস্থ্যসেবা এবং চালকদের শিক্ষার উন্নতি করতে এক প্রজন্ম লাগবে বলা চলে। কিন্তু এমন অনেক দ্রুত সমাধান রয়েছে যা অবিলম্বে মৃত্যু কমানো শুরু করতে পারে। এক দশক আগে তামিলনাড়ু, ভারতের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত একটি প্রদেশ সড়ক দুর্ঘটনার একটি ডাটাবেস তৈরি করেছিল। রাজ্য সরকার কর্তৃপক্ষকে সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থানগুলোর কাছাকাছি জরুরি সেবা কেন্দ্র স্থাপন করার অনুমতি দেয়। এই ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য তারা। কেননা মহামারি শুরু হওয়ার আগে পাঁচ বছরে প্রদেশটিতে সড়ক দুর্ঘটনায় বার্ষিক মৃত্যুর এক চতুর্থাংশ কমেছে। সুশীল-সমাজের বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগও কাজে লাগে। চাচাতো ভাই সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর পীযূষ তেওয়ারি নামে এক ব্যক্তি সেভলাইফ ফাউন্ডেশন শুরু করেছিলেন। সংগঠনটি দিলি­র রাস্তার সবচেয়ে বিপজ্জনক অংশ চিহ্নিত করে এবং কেনো দুর্ঘটনা ঘটছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নেয়। ফাউন্ডেশন দ্বারা নিযুক্ত তদন্তকারীরা ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে এবং সিসিটিভি ফুটেজ পেতে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনও করে। চালকদের শিক্ষা, অবকাঠামো ও স্বাস্থ্য পরিচর্যায় উন্নতির জন্য সময় লাগতে পারে। কিন্তু সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোর দিকে মনোযোগ কেন্দ্রীভ‚ত করলে অনেক জীবন বাঁচতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com