এফএনএস : কৃষি কাজে সৌর সেচ পাম্পে আগ্রহী হচ্ছে না কৃষক। মূলত ওই সেচ পাম্পে বিদ্যুৎ সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকাই কৃষকদের অনাগ্রহের মূল কারণ। যদিও সরকার দেশে বিদ্যুতের ব্যবহার কমানো, ব্যয় সাশ্রয় এবং পরিবেশ দূষণ কমাতে জ্বালানি তেল ব্যবহার বন্ধের লক্ষ্যে কৃষককে সৌর সেচ পাম্প সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে। ওই লক্ষ্যে বিগত ২০১৮ সালের জুলাইয়ে প্রায় ৩৯৪ কোটি টাকা ব্যয়ে শুরু হওয়া সৌর পাম্প প্রকল্প আগামী ডিসেম্বরেই শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রকল্পের নির্ধারিত ২ হাজার পাম্পের মধ্যে ৪ বছরে মাত্র ১৫০টি পাম্প বসানো হয়েছে। আবার যেগুলো বসানো হয়েছে তার সব এখনো ব্যবহার উপযোগী হয়নি। বাংলাদেশ পলী বিদ্যুতায়ন বোর্ড সরকারের অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, ২ হাজার সৌর সেচ পাম্প স্থাপন করা হলে এবং সেগুলো যথাযথভাবে কাজ শুরু করলে বিদ্যুতের ওপর বাড়তি চাপ কমানো সম্ভব হবে। পাশাপাশি সেচ পাম্পে কমে আসবে ডিজেলনির্ভরতাও। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সৌর সেচ পাম্পগুলোতে বিদ্যুৎ জমা রাখার ব্যবস্থা না থাকায় কৃষকদের ডিজেল বা বিদ্যুৎচালিত পাম্পও প্রস্তত রাখতে হচ্ছে। কারণ কেবল রোদের আলো দিয়ে যেটুকু সময় পাম্প চলে তা দিয়ে চাহিদা পূরণ হয় না। ওই কারণেই পাম্পগুলোতে বাড়তি ব্যাটারি যুক্ত করার কথা বলা হচ্ছে। তাহলে রাতে বা মেঘাচ্ছন্ন দিনে ওই বিদ্যুৎ ব্যবহার করে অন্য যে কোনো কাজ করা সম্ভব হবে। কিন্তু প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের মতে, সেচ পাম্পে ব্যাটারির ব্যবস্থা রাখা অনেক ব্যয়বহুল। তাছাড়া একটি ব্যাটারি ৪ মাস পরপর পরিবর্তন বা মেরামতের প্রয়োজন পড়ে। ফলে নতুন খরচের খাত তৈরি হয়। যা কৃষকের পক্ষে বহন করা কষ্টসাধ্য হবে। ওই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই প্রকল্পে পাম্পের সঙ্গে ব্যাটারি যুক্ত করা হয়নি। সূত্র জানায়, সৌর সেচ পাম্প দিয়ে যে পরিমাণ পানি জমিতে সরবরাহ করা হয় তার বেশি পানির প্রয়োজন আছে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা মনে করেন না। আর সৌর সেচ পাম্পে কেবল রোদ দিয়েই বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় তা নয়, আলো থাকলেই চলে। অবশ্য সেক্ষেত্রে পানির চাপ তুলনামূলক কম থাকে। তবে সে পানি দিয়ে কাজ চালিয়ে নেয়া সম্ভব। এদিকে সৌর সেচ পাম্প ব্যবহারকারী কৃষকদের মতে, রোদ ভালো থাকলে সৌর সেচ পাম্পে পানির পরিমাণ বেশি পাওয়া যায়। তবে রোদের তীব্রতা কমলে পানিও কমতে থাকে। কিন্তু ওই পাম্পে বিদ্যুৎ সংরক্ষণ করে রাখার কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে অত্যধিক রোদের সময় উৎপন্ন বিদ্যুৎ জমিয়ে রেখে কম রোদের সময়ে তা ব্যবহার করার সুযোগ নেই। সুদবিহীন বার্ষিক কিস্তিতে সৌর সেচ পাম্প নিতে পারে কৃষক। কেউ চাইলে প্রতি মাসে বা ছয় মাস অন্তরও কিস্তি পরিশোধ করতে পারে। উৎপাদিত উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহেরও সুযোগ রয়েছে। জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিক্রি করেও আয় করা সম্ভব হবে। সৌর সেচ পাম্প ডিজেল বা বিদ্যুৎচালিত পাম্পের তুলনায় লাভজনক। তবে অনেকেই জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে সংযুক্ত না হওয়ায় বাড়তি বিদ্যুৎ বিক্রি করতে পারছে না। উৎপাদিত বিদ্যুৎ জমা রাখারও সুযোগ না থাকায় সৌরচ সেচ পাম্পে আগ্রহী হচ্ছে কৃষকরা। এদিকে সৌর সেচ পাম্প ক্ষমতা ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ সম্পর্কে জানান টাঙ্গাইল পলী বিদ্যুতের কারিগরি শাখার উপ-পরিচালক (ডিজিএম) রিপন কুমার দাস জানান, এ প্রকল্পের নিয়ম হলো সোলার থেকে যেটুুকু বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে তা দিয়েই পাম্প চলবে। ওসব পাম্পের জন্য গ্রিড থেকে কোনো বিদ্যুৎ খরচ করা হবে না। তার মধ্যে ৩ হর্সপাওয়ারের পাম্পগুলোয় ঘণ্টায় ৩ ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। তাছাড়া সাড়ে ৫ হর্সপাওয়ারের পাম্পে ৩ ইউনিট, সাড়ে ৭ হর্সপাওয়ারের পাম্পে সাড়ে ৪ ইউনিট, ১০ হর্সপাওয়ারের পাম্পে ৭ ইউনিট এবং ১৫ হর্সপাওয়ারের পাম্পে ঘণ্টায় ১২ ইউনিট বিদ্যুৎ ঘণ্টায় উৎপন্ন হবে। ওসব বিদ্যুৎ প্রয়োজনে জাতীয় গ্রিডে বিক্রি করা সম্ভব। অন্যদিকে দীর্ঘ ৪ বছরে প্রকল্পের এতো ধীর অগ্রগতি সম্পর্কে প্রকল্প পরিচালক মো. শাকিল ইবনে সাঈদ জানান, করোনা ভাইরাসজনিত মহামারীর কারণে লম্বা সময় কাজ বন্ধ ছিল। এখনো অনেক সরঞ্জাম দেশে এসে পৌঁছেনি। আবার প্রকল্পটি একেবারে নতুন হওয়ায় কৃষকদের বোঝাতে ও রাজি করাতে সময় লাগছে। বর্তমানে অবকাঠামোগত অগ্রগতি ৩০ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ১৩ শতাংশ। এখন কাজ যে পর্যায়ে আছে তাতে ধারণা করা যায় প্রকল্প শেষ করতে আরো দুই বছর সময় লাগবে। ওই কারণে প্রকল্পের মেয়াদ আরো ২ বছর বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে।