এফএনএস বিদেশ : মঙ্গলবার, ভোর ৫টা ২২ মিনিট। ৫৩ বাংলাদেশি কর্মী নিয়ে এয়ার এশিয়ার একে-৭০ ফ্লাইটটি কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। সোমবার রাত পৌনে ১২টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড়াল দেয় বিমানটি। মালয়েশিয়ায় বিমানটি অবতরণের পরই শুরু হয় নাটক, যা চলে ছয় ঘণ্টা। কলিং ভিসায় মালয়েশিয়ায় যান এসব বাংলাদেশি। এরইমধ্যে বাংলাদেশি কর্মীদের স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরের বহির্গমন টার্মিনালে আসেন মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের হাইকমিশনার গোলাম সারোয়ার, দূতাবাসের শ্রম মিনিস্টার নাজমুস সাদাত সেলিমসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী। উপস্থিত ছিলেন মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তিন প্রতিনিধি, বাংলাদেশি কর্মীদের নিয়োগকর্তাসহ তাদের এজেন্ট ও প্রতিনিধিরা। এরপর ধীরে ধীরে জড়ো হতে থাকেন সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিরা। অধীর আগ্রহে বহির্গমনের দরজার দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করছিলেন কখন বের হবেন ৫৩ কর্মী। মিনিট পার হয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা, তারপরও তাদের দেখা মেলে না। এরপর একজন দূতাবাস কর্মকর্তা ঢুকে ঘণ্টাখানেক অবস্থান করেন। বেরিয়ে এসে তিনি হাইকমিশনারকে বলেন, এখনও কোনো কর্মীর হাতের ছাপের কাজ সম্পাদন হয়নি। ৫৩ বাংলাদেশি কর্মীকে কাউন্টারে না দিয়ে একটি জায়গায় অপেক্ষায় রাখা হয়েছে। কিছুক্ষণ পর মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি বহির্গমনে উপস্থিত সময় সংবাদের প্রতিবেদককে ডেকে নিয়ে জানান, ভেতরে একটি সমস্যা হয়েছে বাংলাদেশি কর্মীদের কলিং ভিসা নিয়ে। বিষয়টি বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে জানানোর অনুরোধ করেন তিনি।এরই মধ্যে ভেতর থেকে আবার একটি খবর আসে-মালয়েশিয়ায় আসা ৫৩ জনের ভিসা জাল। তাদের কারো মালয়েশিয়ার কেডিএন অফিসের সই নেই। যে কারণে তাদের ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। তাদের ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা চলছে। এ খবর পেয়ে হাইকমিশনার কিছুটা বিব্রতবোধ করেন। এরপর তিনি ফোনে কোনো এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেন এবং বিলম্ব হওয়ার কারণ জানেন। মালয়েশিয়ান সময় ভোর ৫টা ২২ মিনিটে বিমানটি অবতরণ করার ৬ ঘণ্টা পরও ৫৩ জন বাংলাদেশির কারোরই হাতের ছাপের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় উপস্থিত সবার মাঝে কলিং ভিসা জাল-এই ধারণাটি আরও বেশি বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছে। এরই মধ্যে সময় সংবাদের প্রতিবেদককে ফোন করে ‘কলিং ভিসা জাল কেন’ জানতে চান মানবাধিকার সংস্থার কর্মীরা। যদিও বিষয়টি তখনো বিমানবন্দরের অভিবাসন বিভাগ থেকে আনুষ্ঠানিক কিছুই জানানো হয়নি। দূতাবাসের কয়েকজন কর্মকর্তাও তখন কলিং ভিসা জাল বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তায়। উপস্থিত সবাই তখন বিভিন্ন মন্তব্য করাও শুরু করে দিয়েছেন। এরপর অভিবাসন কর্মকর্তার কাছে হাইকমিশনার জানতে চাইলে তারা জানান, ‘কারিগরি ত্র“টির কারণেই মূলত বিলম্ব হচ্ছে।’ এ খবর শোনার পর বিমানবন্দরের বহির্গমনে উপস্থিত সবার মাঝে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে। এরপর কর্মীরা বেরিয়ে এলে ছয় ঘণ্টার নাটকের অবসান ঘটে।