এফএনএস : শোকাবহ আগষ্ট মাসের দ্বাদশতম দিন আজ। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকায় ফিরে পাকিস্তানীদের দুরভিসন্ধি বুঝতে পারেন। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন তরুণ শেখ মুজিব বুঝতে পেরেছিলেন আরেকবার স্বাধীনতার জন্য বাঙ্গালিদের লড়তে হবে। মাতৃভাষা বাংলার উপর প্রথমেই আঘাত আসে। পাকিস্তানী এ ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু রুখে দাঁড়ান। পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী ১৯৪৮ সালে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠায়। আর তখন থেকেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখতে থাকেন। পূর্ববাংলায় পাকিস্তানী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে উঠে। জেলে থেকে বঙ্গবন্ধু এ আন্দোলনের উৎসাহ যোগাতে থাকেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেরুয়ারি ভাষা আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ পায়। এদিন ঢাকার রাজপথে শহীদ হন রফিক, জব্বার, সালাম, বরকতসহ আরো অনেকে। স্বাধীনতা আন্দোলনের বীজ রোপিত হয় এদিন। এরপর আস্তে আস্তে স্বাধীনতার সংগ্রাম এগুতে থাকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ছিলেন তৎকালীন পূর্ববঙ্গে প্রতিটি সংগ্রাম-আন্দোলনের অগ্রপথিক। এভাবেই বঙ্গবন্ধু তার লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে থাকেন। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু বাঙ্গালির মুক্তি সনদ ৬ দফা জাতির সামনে পেশ করেন। ৬ দফাকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ অকুণ্ঠ সমর্থন করে। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হয়। তার বিরুদ্ধে শুরু করা হয় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের জোয়ারে ভেসে যায় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। জেল থেকে মুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু সমগ্র জাতির নেতৃত্বের হাল ধরেন। তিনি সমগ্র বাঙ্গালি জাতির মুকুটহীন সম্রাট হয়ে উঠেন। এরপর আসে সত্তরের নির্বাচন। বঙ্গবন্ধু নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত। এরই মধ্যে ১২ নভেম্বর রাতে ইতিহাসের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে উপকূলীয় এলাকায়। লাখ লাখ মানুষ মারা যায় ঘূর্ণিঝড়ে। গৃহহারা হয় অসংখ্য মানুষ। পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী বাংলার দুর্গত মানুষের পাশে এসে দাঁড়ায়নি। বঙ্গবন্ধু ও তার দল নির্বাচনী প্রচারণা ফেলে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ান ত্রাণ সহায়তা নিয়ে। তিনি গঠন করেন ত্রাণ কমিটি। বাংলার মানুষ মুক্তহস্তে দান করতে থাকে বঙ্গবন্ধুর ত্রাণ তহবিলে। তিনি নির্বাচন ও দুর্গত মানুষের ত্রাণ সহায়তা সামলাতে থাকেন। নির্বাচনে তার দল আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হয়। কিন্তু পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠী বিজয়ী দলের নেতা বঙ্গবন্ধুর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে না। এতে ফুঁসে উঠে বাঙ্গালি জাতি। এরপর আসে ১৯৭১-এর ২৫ মার্চের সেই কালরাত। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরস্ত্র বাঙ্গালিদের উপর। বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। জাতির জনকের সামনে যতগুলো চ্যালেঞ্জ এসেছিল তিনি তার সবগুলো সফলভাবে মোকাবিলা করেছেন। শুরু হয় আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানী কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে জাতির জনক তার প্রিয় দেশবাসীর কাছে ফিরে আসেন। যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৭৪ সালে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে দেশে খাদ্যাভাব দেখা দেয়। বঙ্গবন্ধু গ্রামে গ্রামে হাজার হাজার লঙ্গরখানা খুলে দরিদ্র মানুষের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেন। সফলভাবে তিনি দেশের খাদ্যাভাব মোকাবিলা করেন। এরপর দেশকে খাদ্যে স্বনির্ভর করে গড়ে তুলতে দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দেন। তিনি বলেন, ‘এক ইঞ্চি অনাবাদি জমি ফেলে রাখা যাবে না’। বঙ্গবন্ধুর সবুজ বিপ্লবের ডাকে সাড়া দিয়ে মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে। অল্পদিনের মধ্যে বেড়ে যায় দেশের খাদ্য উৎপাদনের পরিমাণ। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া কৃষক লীগের কর্মীরা মাঠে মাঠে গিয়ে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে থাকে। চালের দাম কমে যায়। দেশ যখন খাদ্যে স্বনির্ভরতার পথে এগিয়ে চলেছে এ সময়ে ষড়যন্ত্রকারীরা তার হত্যার পরিকল্পনা করে। ৭৫’র ১৫ আগস্ট ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে দেশের অগ্রগতি পিছিয়ে দেয়।