বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২১ অপরাহ্ন

বেসামাল বাজার

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২২

এফএনএস : আগারগাঁওয়ে থাকেন আশরাফ হোসেন। বিএনপি বাজারে ডিম কিনতে গিয়ে তিনি আকাশ থেকে পড়েন। এক সপ্তাহ আগেও যেখানে এক ডজন ডিম কিনেছিলেন ১২৫ টাকা দিয়ে, শুক্রবার সেই ডিমের জন্য তাকে দিতে হলো ১৫০ টাকা। তিনশ’ টাকা নিয়ে বাজারে আসা আশরাফ ভয়ে কুঁকড়ে যান। বাকি ১৫০ টাকা দিয়ে তাকে চাল, ডাল সহ অন্য পণ্য কিনতে হবে। আশরাফ বললেন, এভাবে কি চলা যায়? এমন কোনো জিনিস নেই যেটার দাম বাড়েনি। শুধুমাত্র যে জিনিসটা বাড়েনি সেটা হলো বেতন। এখন বাজারের নাম শুনলেই ভয় হয়। বাজারে ঢুকলেই পকেট ফাঁকা হয়ে যায়। আরেকজন রাশেদা আক্তার। বেসরকারি এই চাকরিজীবী তালতলা বাজারে এসেছিলেন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে। তিনি বলেন, আমাদের মতো স্বল্প আয়ের মানুষদের আমিষের প্রধান উৎস ডিম ও ব্রয়লার মুরগি। এই দুইটি জিনিসের দামই অনেক বেড়েছে। ডিমের দাম ডজনে ৩০ টাকা আর মুরগির দাম কেজিতে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। শুধুমাত্র ডিম আর মুরগিই না। বাজারে সব ধরনের জিনিসের দাম ১০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সাধ্যের মধ্যে কিছুই নেই। গতকাল সরজমিন বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে সাধারণ মানুষের আমিষের প্রধান উৎস ডিম। মুরগির লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা ডজনে। এক সপ্তাহ আগেও লাল ডিমের ডজন ছিল ১২৫ টাকা। মুরগির সাদা ডিমের দামও বেড়েছে। ২০ টাকা বেড়ে সাদা ডিমের ডজন ১৪০ টাকা। বিএনপি বাজারের ডিম বিক্রেতা রাশেদ বলেন, পরিবহন খরচসহ অন্যান্য খরচ বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে ডিমের সরবরাহও কমেছে। তাই ডিমের দাম বাড়তি। সামনে আরও খারাপ দিন আসছে। ডিমের দাম আরও বাড়তে পারে বলে জানান তিনি। অন্যদিকে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকা ও পাকিস্তানি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৯০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল প্রতি কেজি ১৬০ টাকা ও পাকিস্তানি মুরগির দাম ছিল ২৮০ টাকা। এছাড়া বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম ৭০০ টাকা, খাসির মাংস ১ হাজার টাকা। মুরগি ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ব্রয়লার মুরগির সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে। মুরগির খাদ্যের দাম বেশি বলে অনেকেই মুরগি পালনে অনাগ্রহী। যে কারণে চাহিদা অনুযায়ী মুরগি পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া জ্বালানি তেলের প্রভাবও পড়েছে। আল−াহ্র দান চিকেন ব্রয়লার হাউজের কর্মচারী মো. উজ্জ্বল বলেন, ব্রয়লার প্রতি কেজি ২১০ টাকা করে বিক্রি করেছি। এক সপ্তাহ আগে ১৬০ টাকা ছিল। গাড়ি ভাড়াসহ অন্যান্য জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রতি কেজি ব্রয়লার কিনতে আমাদেরই ১৯৩ টাকার বেশি পড়ে। সাজিদুর রহমান নামের এক ক্রেতা বলেন, অল্প বেতনে কাজ করি, গরুর মাংসের দাম বেশি থাকায় সাধারণত ব্রয়লার মুরগি কেনা হয়। কিন্তু ব্রয়লার মুরগির দাম হাঁকছে ২১০ টাকা। কি করি ভেবে পাচ্ছি না। অন্যদিকে বেড়েছে সব ধরনের চালের দাম। মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৭২ টাকা, আটাশ ৫৪ টাকা, নাজিরশাইল ৭০ টাকা থেকে বেড়ে ৮২ টাকা ও চিনিগুঁড়া ১১০ টাকা থেকে বেড়ে ১২০ টাকায়। এছাড়া কাটারি চাল ৬৮ টাকা থেকে বেড়ে ৭২ টাকা হয়েছে। চালের দাম বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কাওরানবাজারের মদিনা রাইস এজেন্সির মালিক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আগে চাঁপাই নবাবগঞ্জ থেকে ট্রাক আনতে ২৪ হাজার টাকা খরচ পড়তো। এখন তেলের দাম বাড়ায় ২৯ হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে। ফলে এই বাড়তি টাকা চালের দামে প্রভাব পড়েছে। তাই পাইকারি বাজারে দাম বাড়ায় খুচরা বাজারে বেড়েছে। বিএনপি বাজারের সাত্তার জেনারেল স্টোরের এক কর্মচারী বলেন, প্রতি কেজি চালের দাম ২-৪ টাকা বেড়েছে। চিনিগুঁড়া চালের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। সবকিছুর খরচ আগের তুলনায় বেশি। বাজারে আবারো বেড়েছে খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম। খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ থেকে ১৯২ টাকা কেজি। তিনদিন আগেও খোলা সয়াবিন তেলের কেজি ছিল ১৬২ থেকে ১৬৬ টাকা। পাম তেলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা কেজি। আগে যা ছিল ১৪০ টাকা কেজি। তেলের দাম বাড়ার বিষয়ে মা জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী বলেন, খোলা সয়াবিন তেল ডিলারদের কাছ থেকে আমাদের কিনতে হচ্ছে ১৯০ টাকা করে। এজন্য আমি এখনো বিক্রি করছি না। বাজারে আজ খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৯২ টাকায়। কিন্তু বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম আগের দামেই আছে। বিএনপি বাজারের তেলের ডিলার সাত্তার জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী বলেন, খোলা তেলের দাম বেড়েছে। প্রতি ড্রাম তেল ৩ হাজার টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। এজন্য আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। বেড়েছে সব ধরনের সবজির দামও। কেজিপ্রতি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। এক সপ্তাহে আগে ছিল ৮০ টাকা। কাঁচামরিচ ২৪০ থেকে ২৭০ টাকা, এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ২০০ টাকা। পিয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা, আগে ছিল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা। বরবটি কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৬০ টাকা, শসা ১০ টাকা বেড়ে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আলু ৩০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা, পটল ঢেঁড়স ও চিচিঙ্গা ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সবজি বিক্রেতা রাজীব হোসেন বলেন, দু’-একটি ছাড়া প্রতিটি সবজির দাম কেজিতে প্রায় ১০ টাকা বেড়েছে। জ্বালানি তেলের দামের কারণে এমনটা হয়েছে বলে জানান তিনি। বাজারে আদার দাম কেজি প্রতি বেড়েছে ৫০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে ৭০ টাকায় বিক্রি হওয়া আদার দাম এখন ১২০ টাকা। বড় দানা মসুর ডাল ১০৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, আগে ছিল ১০০ টাকা। দেশি মসুর ডালের কেজি ১৩০ টাকা, যা আগে ছিল ১২৫ টাকা। খেসারির ডাল ৫ টাকা বেড়ে ৮০ টাকা হয়েছে। চিনির দাম কেজিপ্রতি ৭ টাকা বেড়ে ৮৭ টাকা হয়েছে। মাছের বাজারও গরম। বাজারে বড় আকারের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগেও ১ হাজর ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাঝারি ও ছোট আকারের ইলিশ যথাক্রমে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তেলাপিয়া ও পাঙাস মাছ প্রতি কেজি ১৮০ টাকা ও রুই মাছ আকার অনুযায়ী ২৮০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছে, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে বাজারে সব ধরনের মাছের দাম কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এছাড়া ইলিশ মাছের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে তারা সরবরাহ সংকটের কথা বলছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com