মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:১৫ পূর্বাহ্ন

জানা গেল মলদ্বার না থাকা প্রাচীন প্রাণীর রহস্য

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় রবিবার, ২১ আগস্ট, ২০২২

এফএনএস বিদেশ: বিজ্ঞানীরা বলছেন, তারা প্রাণীজগতের বিবর্তনের পুরনো এক রহস্যের সমাধান করেছেন। রহস্যটা ছিল ৫০ কোটি বছরের পুরনো প্রায় আনুবীক্ষণিক প্রাণী নিয়ে, যার কোনো মলদ্বার ছিল না। ২০১৭ সালে জীবাশ্মটি প্রথম আবিষ্কৃত হওয়ার সময় জানানো হয়েছিল, এই থলের মতো সামুদ্রিক প্রাণীটি সব মেরুদন্ডী প্রাণীর প্রাচীনতম পূর্বসূরী হতে পারে। এর আকার মাত্র ১ মিলিমিটার। স্যাকোরাইটাস করোনারিয়াস নামে এ প্রাচীন প্রাণীকে অস্থায়ীভাবে ডিউটেরোস্টোম নামে একটি দলভুক্ত করা হয়েছিল। এ দলের মধ্যে মেরুদন্ডী প্রাণীরা রয়েছে। একটি নতুন গবেষণায় এখন বলা হচ্ছে, স্যাকোরাইটাসকে একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রাণীর দলে রাখা উচিত। চীন এবং যুক্তরাজ্যের গবেষকদের একটি দল প্রাণীটির একটি বিশদ এক্স-রে বিশ্লেষণ করেছে। দলটি এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে, এটি একডাইসোজোয়ান গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। এটি মাকড়সাসহ বিভিন্ন পোকামাকড়ের পূর্বপুরুষ। এই বিবর্তনগত বিভ্রান্তির একটি কারণ ছিল প্রাণীটির মলদ্বার না থাকা। গবেষক এমিলি কার্লাইল স্যাকোরাইটাস নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করেছেন। বিবিসি রেডিও ফোর এর ‘ইনসাইড সায়েন্স’ অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন: ‘এটি কিছুটা বিভ্রান্তিকর। বেশিরভাগ একডাইসোজোয়ান প্রাণীর মলদ্বার আছে। তাহলে এটির কেন ছিল না?’ একটি সম্ভাব্য বিকল্প হচ্ছে, এই পুরো গোষ্ঠীর আরো আগের কোনো পূর্বপুরুষের মলদ্বার ছিল না। পরে স্যাকোরিটাস হয়তো তার থেকেই বিবর্তিত হয়েছিল। ‘হতে পারে যে এটি নিজস্ব বিবর্তনের সময় ধীরে ধীরে মলদ্বার হারিয়ে ফেলেছে। সম্ভবত এটির প্রয়োজনও ছিল না। কারণ, থলেসদৃশ প্রাণীটি একটি জায়গায় স্থির বিছিয়ে থাকার মতো বসে থাকতো আর খাওয়াসহ সব কাজের জন্য একটিই দ্বার খোলা থাকতো। ’তবে ক্যামব্রিয়ান যুগের জীবনবৃক্ষে স্যাকোরাইটাসকে নতুন অবস্থানে বসানোর প্রধান কারণ হলো, প্রাথমিক পরীক্ষায় এর মুখের চারপাশে থাকা ছিদ্রগুলোকে ফুলকার ছিদ্র হিসাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল। এটি ডিউটেরোস্টোমেসের একটি আদিম বৈশিষ্ট্য। বিজ্ঞানীরা শক্তিশালী এক্স-রে ব্যবহার করে আরও বিশদভাবে দেখে বুঝতে পারেন সেগুলো ফুলকা নয়, বরং মেরুদন্ডের ভেঙে যাওয়া একেকটি ভিত্তি। এই জীবাশ্মগুলো নিয়ে কর্মরত বিজ্ঞানীরা প্রতিটি প্রাণীকে একটি বিবর্তন লতিকায় সাজানোর চেষ্টা করছেন। এর উদ্দেশ্য ছিল, প্রাণীগুলোর উৎস এবং তাদের বিবর্তনের ধারা বোঝার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র তৈরি করা। ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটির গবেষক এমিলি কার্লাইল বলেন, ‘স্যাকোরাইটাস সমুদ্রে বাস করত। নরম থলের মতো শরীর হলেও মেরুদন্ড একে সাগরতলের পলিমাটিতে এক জায়গায় শক্ত করে ধরে রাখত।’ ‘আমরা মনে করি এটি ¯্রফে মাটিতে গ্যাঁট হয়ে বসে থাকত। পরিবেশটা ছিল খুব অদ্ভুত। এর আশপাশে থাকত অনেক প্রাণী যার কিছু ছিল এ যুগেও জীবিত থাকা জীবের মতো দেখতে। তবে অনেকগুলো আবার সম্পূর্ণ অচেনা। ’ক্যামব্রিয়ান যুগের ওই জীবাশ্ম ধারণকারী শিলাগুলো নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে। ‘এর পরিবেশ সম্পর্কে আমাদের এখনও অনেক কিছু শেখার আছে’, বলেন গবেষক কার্লাইল। ‘আমি যতই প্রতœতত্ত¡ নিয়ে পড়াশোনা করি, ততই বুঝতে পারি কতটা এখনো অজানা। এই প্রাণীটি এবং যে বিশ্বে এটি বাস করত, আমরা তার সীমানা দিয়ে ঘুরছি মাত্র’, বলেন তিনি। সূত্র: বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com