এফএনএস বিদেশ : ভয়াবহ এ বন্যা এরইমধ্যে এক হাজার দুইশর বেশি মানুষে প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। বাড়তে থাকা বন্যার পানিতে আটকে পড়া আরও দুই হাজার লোককে উদ্ধার করার কথা জানিয়েছে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী। গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে তারা এ কথা জানায়। টানা বর্ষণ ও উত্তরের পাহাড়গুলোর হিমবাহ গলে সৃষ্ট ভয়াবহ এ বন্যায় পাকিস্তানের প্রায় এক তৃতীয়াংশ এখন পানির নিচে; বন্যা ক্রমেই আরও বেশি এলাকায় বিস্তৃত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত এই বন্যার বিপর্যয় এরইমধ্যে ৪১৬ শিশুসহ দেশটির এক হাজার দুইশর বেশি মানুষের প্রাণও কেড়ে নিয়েছে বলে পাকিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের (এনডিএমএ) বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। জাতিসংঘ এরইমধ্যে তাদের ভাষায় ‘নজিরবিহীন এ জলবায়ু দুর্যোগ’ মোকাবেলায় বিশ্বের দেশগুলোর কাছে পাকিস্তানের জন্য ১৬ কোটি ডলার সাহায্যও চেয়েছে। এদিকে পাকিস্তানের নৌবাহিনীও সমুদ্রের মতো মনে হওয়া বন্যাক্রান্ত এলাকাগুলোতে তাদের ত্রাণ তৎপরতা জোরদার করেছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রদেশের অন্যতম সিন্ধুর দাদু জেলায় একাধিক গ্রাম এখন ১১ ফুট পানির নিচে বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দা বশির খান। “আমার বাড়ি এখন পানির নিচে, আমি ৪ দিন আগে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সেখান থেকে চলে এসেছিলাম,” বলেছেন তিনি। কাছাকাছি মেহার অঞ্চলে বাসিন্দারা তাদের শহরে যেন বন্যার পানি না ঢোকে সে জন্য বাঁধ নির্মাণ করছে। গত বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের নৌবাহিনী দাদুর গ্রামগুলো থেকে দেড়শর বেশি মানুষকে হেলিকপ্টারের সাহায্যে উদ্ধার করেছে বলে বাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সামরিক বাহিনী জানায়, উদ্ধার তৎপরতা শুরুর পর থেকে তারা এক হাজার মানুষকে হেলিকপ্টারের সাহায্যে উদ্ধারসহ প্রায় ৫০ হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়েছে। “সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টাতেই আটকে পড়া এক হাজার ৯৯১ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে,” বলা হয়েছে সশস্ত্র বাহিনীর বিৃবতিতে। বন্যাক্রান্ত এলাকাগুলোতে ১৬৩ টন ত্রাণ সরবরাহের কথাও জানিয়েছে তারা। ত্রাণ নিয়ে শুক্রবার কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের বিমানও পাকিস্তানে নামার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছে দক্ষিণ এশীয় দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে সেপ্টেম্বরজুড়ে আরও বৃষ্টি ও বন্যার আভাস দেওয়া হয়েছে। সিন্ধু নদীর পানি বেড়ে দক্ষিণাঞ্চলের পরিস্থিতি খারাপ হবে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। গর্ভবতী ও তরুণী মা’দের সংখ্যা বেশি হওয়ায় সিন্ধু প্রদেশের কর্তৃপক্ষ তাদের ত্রাণ শিবিরগুলোর জন্য আরও নারী চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মী চেয়েছে। জুন থেকে অগাস্ট প্রান্তিকে গত ৩০ বছর যে গড় বৃষ্টি দেখা যেত পাকিস্তান এবার তার চেয়ে প্রায় ১৯০ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত দেখেছে।