শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:৫৮ পূর্বাহ্ন

দুর্বল তদন্ত এবং সাক্ষীর অভাবে \ সহজেই খালাস পাচ্ছে মাদক মামলার আসামিরা

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শনিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২

এফএনএস : মাদক মামলায় নানা ত্র“টি কারণে সহজেই খালাস পেয়ে যাচ্ছে অভিযুক্তরা। বিগত ৮ বছরে সারাদেশের আদালতে ১৮ হাজার ৫৪০টি মাদক মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। তার মধ্যে খারিজ হয়ে গেছে ১০ হাজার ৫৫টি মামলা। যা মোট মামলার অর্ধেকেরও বেশি (৫৪.২৩ শতাংশ)। আর ৪৫.৭৭ শতাংশ মামলায় অভিযুক্তদের সাজা হয়েছে। মোট মামলায় অভিযুক্তের সংখ্যা ছিল ২০ হাজার ৪৯০। তার মধ্যে খালাস পেয়েছেন ১১ হাজার ৫৯৯ জন, যা মোট অভিযুক্তের ৫৬.৬০ শতাংশ। আর সাজাপ্রাপ্ত আসামির সংখ্যা ৮ হাজার ৮৯১, যা ৪৩.৩৯ শতাংশ। বিগত ২০১৪ সাল থেকে গত এপ্রিল পর্যন্ত মাদকের বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৭৩ হাজার ৩১২। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে মাদক মামলায় অভিযুক্ত খালাসের সংখ্যা। মূলত নানা কারণেই প্রতিবছর সাজার সংখ্যা কমে যাওয়া এবং খালাসের সংখ্যা বাড়ছে। মূলত ৮টি কারণে মাদক মামলায় অভিযুক্তরা খালাস পেয়ে যাচ্ছে। আর তার মধ্যে প্রধান কারণই হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের অভাব। অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে ত্র“টিপূর্ণ এজাহার দাখিল, তদন্তে ত্র“টি-বিচ্যুতি, তদন্ত-সংশ্লিষ্টদের মামলায় সফলতা অর্জনের মৌলিক প্রশিক্ষণের অভাব, জব্দ তালিকায় উপস্থিত সাক্ষীদের সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীর বক্তব্যের অমিল, জব্দ তালিকার গরমিল, উপযুক্ত নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য সাক্ষী উপস্থাপনে ব্যর্থতা, মামলার বাদী এবং অভিযানে অংশ নেয়া কর্মকর্তাদের বক্তব্যে অমিল থাকা এবং এমনকি অনেক ক্ষেত্রে বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তাও সাক্ষ্য দেয় না। সূত্র জানায়, বিগত ২০১৪ সালে মোট ২ হাজার ৬৮৯টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। তার মধ্যে ৬৪ শতাংশ মামলায় আসামিদের সাজা হয়েছে। আর সাজাপ্রাপ্ত আসামির হার ৫২ শতাংশ। তবে ২০১৫ সালে এসে মামলা ও সাজার হার কমে আসে। ওই বছরে ১ হাজার ৮৭৩টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। যার মধ্যে ৮৯২টি মামলায় আসামির সাজা হয়েছে। যা মোট মামলার ৪৭.৬ শতাংশ। আগের বছরের সাজার তুলনায় তা প্রায় ১৭ শতাংশ কম। সাজাপ্রাপ্ত আসামির হারও প্রায় ৪ ভাগ কমে আসে। ওই সময়ে ৪৮.২ শতাংশ আসামির সাজা হয়। ২০১৬ সালে নিষ্পত্তি হওয়া ৫ হাজার ৩৪৮টি মামলার মধ্যে ২ হাজার ৯৯২টিতে অভিযুক্তরা খালাস পেয়েছে এবং ৪২ শতাংশ মামলায় সাজা হয়েছে। ৬১ ভাগ অভিযুক্তই খালাস পান। যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৯ ভাগ বেশি অভিযুক্ত খালাস পেয়েছেন। ২০১৭ সালে নিষ্পত্তি হওয়া মোট মামলার মধ্যে ৪০ ভাগ মামলায় সাজা হয়েছে। ওই বছরেও আগের বছরের তুলনায় ২ শতাংশ কমে ৪০ শতাংশ আসামির সাজা হয়েছে। বাকি ৬০ শতাংশ খালাস পেয়েছে। অবশ্য ২০১৮ সালে নিষ্পত্তি হওয়া মোট মামলায় ২০১৭ সালের চেয়ে ২ শতাংশ সাজা বেড়েছে। অর্থাৎ ৪২ শতাংশ মামলায় সাজা হয়েছে আর সাজাপ্রাপ্ত আসামির হার ৪১ শতাংশ। আগের বছরের চেয়ে ২০১৯ সালে আবার ৩ শতাংশ মামলায় সাজা কমেছে। নিষ্পত্তি হওয়া মোট মামলায় সাজা হয়েছে ৩৯ শতাংশ। ১ হাজার ৭৬৫ অভিযুক্তের মধ্যে সাজা হয়েছে ৬৭৮ জনের, যা ৩৮ শতাংশ। ২০২০ সালে নিষ্পত্তি হওয়া মামলার মধ্যে ৫৭ ভাগ মামলা খারিজ হয়েছে। ৪৩ শতাংশ আসামির সাজা হয়েছে। ২০২১ সালে নিষ্পত্তি হওয়া মোট মামলার মধ্যে খারিজ হয়েছে ৬০ শতাংশ। সাজাপ্রাপ্ত আসামির হার ৫০ শতাংশ। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত নিষ্পত্তি হওয়া মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। ওই চার মাসে নিষ্পত্তি হওয়া মামলার মধ্যে ৫১ শতাংশ খারিজ হয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত আসামির হার ৪২ শতাংশ। এদিকে মামলার এজাহার ও তদন্ত প্রসঙ্গে আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সঠিকভাবে এজাহার লেখা হয় না। তদন্তেও দুর্বলতা থাকে। তাছাড়া দুর্বল চার্জশিটসহ নানা কারণে মাদক মামলায় আসামি খালাস পেতে পারে। এমনকি অনেক সময় আসামিপক্ষ সাক্ষীদের ম্যানেজ করে ফেলায় সাক্ষী আদালতে এসে উল্টোপাল্টা সাক্ষ্য দেয়। কিছুকিছু সাক্ষী এসে বলে তাদের সামনে মাদক উদ্ধার হয়নি। আদালতে মামলা প্রমাণ করতে হলে সাক্ষীর মাধ্যমেই প্রমাণ করতে হয়। তারপরও আইনজীবীরা সঠিকভাবে সাক্ষী নিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করে। কিন্তু মামলা ও চার্জশিটে দুর্বলতা থাকায় প্রমাণে সমস্যা হয়। অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, মাদক মামলার সঙ্গে প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ বা গোষ্ঠীর সংশ্লিষ্টতা থাকে। তারা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবেও খুব শক্তিশালী। ফলে মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হলেও পরে ত্র“টিপূর্ণ চার্জশিট এবং প্রভাবশালীদের প্রভাবে মামলাগুলো চ‚ড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে দুর্বল হয়ে যায়। ফলে বেশিরভাগ অভিযুক্ত খালাস পেয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. আজিজুল ইসলাম জানান, পাবলিক সাক্ষীদের আদালতে আসার বিষয়ে অনীহা রয়েছে। আসামিদের সঙ্গে সাক্ষীদের যোগসাজশও থাকতে পারে। কেউ কেউ সাক্ষ্য দিতে আদালতে উপস্থিত হলেও সঠিক কথা বলে না। তাছাড়া মামলা-সংক্রান্ত কর্মকর্তা অবসরে যাওয়ার পর তারাও সাক্ষ্য দিতে আসতে চায় না। মামলা যাতে আদালতে সঠিকভাবে উপস্থাপন হয় এবং সাক্ষী আদালতে এসে সঠিক কথা বলে সে ব্যাপারে ডিএনসির পক্ষে সর্বোচ্চ চেষ্টা রয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com