মাছুদুর জামান সুমন \ সাতক্ষীরা পুড়ছে গ্রীষ্মের নয়, শ্রাবনের তাপদাহে পুড়ছে সাতক্ষীরার মাঠ, ঘাট, বিস্তীর্ন জনপদ। চারিদিকে লু-হাওয়া, প্রখর রৌদ্রতাপ দিকে দিকে অসহনীয় বৈরী পরিবেশ, প্রচণ্ড তাপদাহে কৃষকের কপাল পুড়তে বসেছে। ভাল নেই সাতক্ষীরার কৃষক, মাঠ ঘাট ফেটে চৌচির আমন ধানের উৎপাদন যেন অনিশ্চিত যাত্রার মেরুকরন। জেলার কৃষকরা পানির অভাবে আমন রোপন করতে পারছে না আবার রোপন করা আমন বৃষ্টিহীনতা এবং প্রখর তাপে হলুদ ভাব বিবর্ণ রুপ ধারন করেছে। কৃষকের সর্বাঙ্গে হাহাকার আকাশের দিকে তাকিয়ে কেবলমাত্র বৃষ্টির ফরিয়াদ জানিয়ে চলেছে। সাতক্ষীরা বরাবরই শষ্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিত এই শষ্য ভান্ডারের জেলার কৃষক এর জন্য বর্তমান আমন রোপন মৌসুম অভিশাপে পরিনত হয়েছে। মধ্য শ্রাবন পার হয়েছে অন্যান্য মৌসুমে ইতিমধ্যে আমন রোপন শেষ হয় কিন্তু বৃষ্টির পানির অভাবে রোপনের অপেক্ষায় কৃষক। কোন কোন পাতা নষ্ট হয়ে গেছে এবং কৃত্রিম উপায়ে সেচ যন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে ধান পাতা বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে। অনেক কৃষকের ধান পাতা ক্ষেত নষ্ট হওয়ায় পুনরায় পাতা ফেলেছে তার অবস্থাও করুন এবং বিবর্ণ। সাতক্ষীরার কৃষকরা বৃষ্টির পানির অভাব মেটাতে সেচযন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে রোপন করা আমন ধান বাঁচানোর চেষ্টা করার পাশাপাশি রোপন করার জন্য ক্ষেত প্রস্তুত করছে। এখানেই স্বস্তি আর শান্তি দুটিই অনুপস্থিত কারন বিদ্যুতের অব্যাহত লোড শেডিং। সদর উপজেলার আলিপুরের কৃষক মোস্তফা দৃষ্টিপাতকে জানান সেচের মাধ্যমে আমন চাষ করলে উৎপাদন খরচ স্বাভাবিকের অপেক্ষায় অনেক বেশী পড়বে। একই বক্তব্য সাতানির কৃষক মোসলেম উদ্দীনের। কৃষকের মুখের হাসি চোখের পানিতে ভরপুর এই সময়ে মাঠে মাঠে আমন রোপনের উৎসবের পরিবর্তে দৃশ্যমান হচ্ছে মাঠ ক্ষেত কৃষক শুন্যতা। বৃষ্টিহীনতা, বিদ্যুতের অব্যাহত লোডশেডিং এর সাথে সংযোগ ঘটেছে সারের মূল্য বৃদ্ধি, সব মিলে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না এমন আশঙ্কা কৃষকদের। আমন চাষের বিঘœতাই শেষ কথা নয়, সাতক্ষীরার পুকুরের পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। পানির স্তর নেমে যাচ্ছে, শ্রাবনের চিরায়ত দৃশ্য অনুপস্থিত, কৃষক পাট বাঁচাতে পানি পাচ্ছে না। বিল খাল এবং গ্রামের মেঠো পথের ডোবা নালা গুলোতে কৃষকরা পাট পঁচানোর জন্য পাট ফেললেও পানির অভাবে পাট শুকিয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি এখানেই শেষ নয় সবজি বাজারে আগুন ধরেছে আর সবজির উর্ধ্ব মূল্যের কারন বৃষ্টিপাতের স্বল্পতার কারনে সেচের মাধ্যমে সবজি উৎপাদন ধরে রাখা। শ্রমজীবী মানুষ কাজ পাচ্ছে না, দিনে দিনে অভাবী মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রখর রৌদ্রে ছোট খাটো শিল্প কারখানা গুলোতে শ্রমিকরা কাজ করতে পারছে না, সাতক্ষীরা অপার সম্ভাবনার নজির সৃষ্টি করেছে মৎস্য শিল্প রপ্তানী যোগ্য চিংড়ী ও বিভিন্ন ধরনের সাদা প্রজাতির মৎস্য উৎপাদনের অন্তরায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে বৃষ্টিহীনতা। বর্তমান অবস্থা চলমান থাকলে সাতক্ষীরার উৎপাদন ব্যবস্থায় (বিশেষ করে আমন ও মৎস্য) মারাত্মক বিপর্যয় ঘটবে এমন আশঙ্কা সর্বজনের।