মাছুদুর জামান সুমন \ শেষ ভাদ্রেও বৃষ্টির দেখা নেই। লু-হাওয়া বইছে সর্বত্র, প্রচন্ড তাপদাহে পুড়ছে মাঠ,ঘাট, ক্ষেত। ভ্যাপসা গরম, প্রখর সূর্যতাপ, অস্থিরতা, আর বিবর্ণ জনজীবনের সাথে একাকার হয়েছে স্বপ্নভঙ্গ হতে চলেছে কৃষকের জীবন জীবিকা। এ দৃশ্য, এমন ভয়াবহ করুন বিদীর্ণ পরিবেশ সাতক্ষীরার সর্বত্র। সাতক্ষীরার কৃষি, মৎস্য, ক্ষুদ্রশিল্প হতে শুরু করে সর্বত্র হাহাকার। আমন ধানের চাষ সেতো অধরাই থেকে গেলো। আষাঢ়, শ্রাবন, বর্ষাকাল এই সময়ই আমন রোপনের উপযুক্ত সময়, কিন্তু বৃষ্টিহীনতার কারনে আমন চাষে গতি নেই। বাস্তবতা হলো সাতক্ষীরার ধান ক্ষেতগুলোতে বর্তমান সময় আগুনে পুড়ছে তো পুড়ছেই, মাঝে মধ্যে বৃষ্টিতে এবং সেচের সাহায্যে রোপন করা আমন ধান শুকিয়ে যাচ্ছে, শুকিয়ে যাওয়া আমনের সাথে কৃষকের ভাগ্য জ্বলছে। কেবল আমন ধানের দুরবস্থা নয়, সবজি ক্ষেত ও তাপদাহে জ্বলছে আর তার বিরুপ প্রভাব পড়ছে বাজারময়। সাধারন মানুষের জন্য দৈনন্দিন জীবনযাত্রা চালানো কঠিন হতে কঠিনতর হয়ে পড়েছে। সবখানেই হাহাকার, সবজি বাজারের কাজ সামলে উঠতে পারছে না। কোনভাবে চাল ক্রয় করলেও সবজি বাজারে যেয়ে মন খারাপ হচ্ছে। এক কেজি লাল শাক ৫০ টাকা, মাঝারি বা ছোট সাইজের লাউ ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কাঁচকলা কেজি প্রতি ৪০/৪৫ টাকা, মিষ্টি কুমড়া সাধারন বাজার দর কেজি প্রতি ১৫ টাকা ছিল সেই মিষ্টি কুমড়াও বর্তমান সময়ে কেজি প্রতি ৩৫/৪০ টাকা, ওল কেজি প্রতি ৬০/৭০ টাকা, এক কথায় সবজির বাজার অস্থির, উৎপাদনকারী কৃষকরা পূর্বের অপেক্ষায় উৎপাদন খরচ যোগাড়ে হীমসিম খাচ্ছে। আকাশের বৃষ্টি নেই ভরসা সেচযন্ত্র, এখানে খরচ বেশী, ডিজেলের মূল্য বেশী, বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং তারপর সবজি উৎপাদন থেমে নেই কিন্তু মূল্যবৃদ্ধির পাগলা ঘোড়া ছুটে চলছে তো চলছেই। মাছ, মাংস সংগ্রহে ভুলতে বসেছে খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ গুলো। পোল্ট্রি মাংস সহজলভ্যতা থাকলেও সেও যেন অধরায় পৌছেছে। খেটে খাওয়া মানুষগুলো কাজের অভাব হেতু মানবেতর জীবন যাপন করছে। আর এ সবই প্রকৃতির নিষ্ঠুর আচরনের ফল, বৃষ্টির অভাবই ছন্দ পতন ঘটেছে উৎপাদন, জনজীবন, জীবনযাত্রা, সবজি বাজারের মুল্য বৃদ্ধি। বৃষ্টির অভাবে বর্তমান পরিস্থিতি এমন আগামী দিন গুলো অধিকতর ভয়াবহ পরিনতির ইঙ্গিত দিচ্ছে। কাঙ্খিত আমন চাষ হয়নি বিধায় আমন মৌসুম অনেকটা মার খেয়েছে যে কারনে সাতক্ষীরায় আমন উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রায় পৌছাবে না এবং খাদ্য ঘাটতির কবলে পড়বে সাতক্ষীরা। আমন চাষ কেবল ধান উৎপাদনই শেষ কথা নয়, এই চাষের সাথে সহস্র শ্রমজীবী পরিবারের সম্পর্ক আর যথাযথ চাষাবাদ না হওয়ায় কাজহীন হয়ে পড়ায় প্রান্তিক পর্যায়ে আর্থিক বিপর্যয় ঘটেছে। আগামী দিন গুলোতে উৎপাদন বিপর্যয় এর ফল মিলবে খাদ্য ঘাটতি হিসেবে প্রভাব ফেলবে। চারিদিকে তাপদাহের অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতিতে সাতক্ষীরার মৎস্য শিল্প। এই জেলা মৎস্য চাষে নিকট অতীতে বিশেষ বিপ্লব সাধন করেছে। জেলার বানিজ্যিক ভাবে বিভিন্ন প্রজাতির সাদা মাছ চাষ হয়েছে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকাতে সাতক্ষীরার মাছ বিক্রয় হয়। যে কারনে এই জেলার অর্থনীতি মৎস্য নির্ভর অর্থনীতি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত চিংড়ী শিল্প ও মুখ থুবড়ে পড়েছে বৃষ্টিহীনতার কল্যানে। সাতক্ষীরার শত শত চিংড়ী ঘের বর্তমান সময় চরম বিপর্যয়ের মুখে। সময় মত বৃষ্টির অভাব এবং গ্রীষ্মের অপেক্ষা তাপ অসহনীয় হয়ে উঠেছে চিংড়ী চাষের জন্য। সব মিলে এই জেলা বর্তমান সময় এক কঠিন কঠোর বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। ভাল নেই সাতক্ষীরার কৃষক, মৎস্যচাষী, খেটে খাওয়া মানুষ সহ সর্বসাধারন। সকলের প্রত্যাশা বৃষ্টিপাত, এখনও সময় আছে বৃষ্টি হলে হয়ত উৎপাদনে গতি ফিরবে।