শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:১০ অপরাহ্ন

দেশের দেড় ডজন সরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের দক্ষ চিকিৎসক হয়ে ওঠাই চ্যালেঞ্জ

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২

এফএনএস : দেশের দেড় ডজন সরকারি মেডিকেল কলেজেই হাসপাতাল নেই। যদিও মেডিকেল কলেজ পরিচালনা আইন অনুযায়ী প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব জমিতে হাসপাতাল থাকা বাধ্যতামূলক। তাছাড়া ওসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সংখ্যাও অপ্রতুল। এমনকি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কলেজ ক্যাম্পাসই নেই। নেই ছাত্রাবাস ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের জন্য হোস্টেল সুবিধা। কোথাও কলেজের অবকাঠামো থাকলেও প্রয়োজনীয় লোকবল ও শিক্ষা উপকরণের সঙ্কট রয়েছে। আর নবীন চিকিৎসকদের জেলা পর্যায়ের জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে হাতেকলমে শিখতে হচ্ছে। ওসব কারণে ১৮টি সরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের দক্ষ চিকিৎসক হয়ে ওঠাই চ্যালেঞ্জ। ওসব প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পরিচালনায় বিদ্যমান আইনকানুনও উপেক্ষা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে দেশের ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে ১৮টিই নানা সমস্যায় জর্জরিত। সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে প্রতি শিক্ষাবর্ষে ৪ হাজার ৩৫০ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে। ওই হিসাবে কলেজগুলোয় ৫ বছরের অ্যাকাডেমিক (প্রাতিষ্ঠানিক) শিক্ষাজীবনে ২১ হাজার ৭৫০ জন লেখাপড়া করছে। তাদের মধ্যে ১৮টি কলেজের শিক্ষার্থীরা নানা সমস্যার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। ওসব শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্য শিক্ষার মতো মৌলিক বিষয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের চেয়ে যোগ্যতা অর্জনে পিছিয়ে পড়ছে। ভবিষ্যতে ওসব শিক্ষার্থী সাধারণ মানুষকে কী সেবা দেবে তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। সূত্র জানায়, সরকারি পাবনা মেডিকেল কলেজ, আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ (নোয়াখালী), কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ, যশোর মেডিকেল কলেজ, শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ (জামালপুর), রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ, শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ (হবিগঞ্জ), নেত্রকোনা মেডিকেল কলেজ, নীলফামারী মেডিকেল কলেজ, নওগাঁ মেডিকেল কলেজ, মাগুরা মেডিকেল কলেজ ও চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের নিজস্ব কোনো হাসপাতাল নেই। তাছাড়া কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ, শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ (গোপালগঞ্জ), শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ (গাজীপুর), পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ (সুনামগঞ্জ) এবং শেখ লুৎফর রহমান ডেন্টাল কলেজ (গোপালগঞ্জ) নির্মাণাধীন। সেগুলোর ক্যাম্পাস ও হাসপাতাল কিছুই নেই। ওসব প্রতিষ্ঠানের শির্ক্ষার্থীরা অস্থায়ী ক্যাম্পাসে গিয়ে লেখাপড়া এবং অন্য হাসপাতালে ক্লিনিক্যাল পাঠ নিচ্ছে। সূত্র আরো জানায়, সরকারি নীলফামারী মেডিকেল কলেজ বিগত ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠা হলেও প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব ক্যাম্পাস ও হাসপাতাল নেই। জেলার ডায়াবেটিক সমিতির হাসপাতালের কয়েকটি কক্ষ ও বারান্দায় প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের পাঠদান চলছে। আর তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের ৮ কিলোমিটার দূরে সদর হাসপাতালে গিয়ে ক্লিনিক্যাল শিক্ষা নিতে হচ্ছে। তাছাড়া ২ কিলোমিটার দূরে কুষ্ঠ হাসপাতালের গেস্ট হাউজকে মেয়ে শিক্ষার্থীদের এবং একটি ভাড়া বাড়ি ছেলেদের হোস্টেল হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ডায়াবেটিক সমিতি, কুষ্ঠ ও সদর হাসপাতাল মিলে শিক্ষার্থীদের দৈনিক ২০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে আপ-ডাউন করতে হচ্ছে। নীলফামারী মেডিকেল কলেজে ২০ জন শিক্ষক আছেন। তাদের মধ্যে অধ্যাপক ২ জন, সহযোগী অধ্যাপক ২ জন, সহকারী অধ্যাপক ৫ জন এবং বাকিরা প্রভাষক। মেডিকেলের ৮টি মৌলিক (বেসিক) বিষয়ের মধ্যে অ্যানাটমি ও ফিজিওলজি ছাড়া বাকিগুলোয় শিক্ষকের সংখ্যাও অপতুল। মেডিসিন, সার্জারি, পেডিয়াট্রিক, গাইনি, প্যাথলজি ও কমিউনিটি মেডিসিন, বায়োক্যামিস্ট্রি বিষয়ে একজন করে শিক্ষক থাকলেও ফরেনসিক মেডিসিন বিষয়ে কোনো শিক্ষকই নেই। মেডিকেলের নিজস্ব ক্যাম্পাস, হাসপাতালের ফ্লোরস্পেস বেড অকুপেন্সি, গ্যালারি, টিউটোরিয়াল রুম, সব বিভাগের শিক্ষক, ল্যাব, শ্রেণিকক্ষের সরঞ্জাম, লাইব্রেরির আসন এবং সার্ভিস রুল মানা বাধ্যতামূলক হলেও কোনো কিছুই নেই। অথচ ইতোমধ্যে দুটি বর্ষের শিক্ষার্থীরা ক্লিনিক্যাল ক্লাস শুরু করছে। এজন্য জেলা সদর হসপাতালের ওয়ার্ডগুলোকে বেছে নেয়া হয়েছে। অন্যান্য বিষয়ের মতো ক্লিনিক্যাল ক্লাসে একজন করে শিক্ষক থাকায় জেলা হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট, কনসালট্যান্টদের সহায়তায় কোনো রকমে পাঠ কার্যক্রম চলছে। এদিকে এ বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. একেএম আমিরুল মোরশেদ খসরু জানান, ২০১০ সালে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণের বিষয়ে ভারতের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছিল। তার আওতায় কয়েকটি মেডিকেল কলেজের জন্য হাসপাতাল করার কথা ছিল। কিন্তু পরে এ বিষয়ে দুদেশের মধ্যে কোনো চুক্তি হয়নি। ফলে কাজ এগোয়নি। এখন সরকার নিজস্ব অর্থায়নে ওসব মেডিকেল কলেজের জন্য হাসপাতাল করে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। সেজন্য ডিপিপি করা হচ্ছে। অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার জানান, হাসপাতাল ছাড়া মেডিকেল কলেজ চালানো যায় না। যেসব প্রতিষ্ঠানের হাসপাতাল নেই, সেখানে সাময়িক সময়ের জন্য জেলা সদরের হাসপাতাল ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে সব মেডিকেলেরই নিজস্ব হাসপাতাল হবে। ৪টি মেডিকেলের বিষয়ে ভারতের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছিল। এখন রাজস্ব বাজেট থেকে ওসব হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com