মাছুদুর জামান সুমন \ একদিনের বৃষ্টির ফলে নির্বাসনে গেছে গ্রীষ্মের ন্যায় তাপদাহ কেটে গেছে খরা, জনজীবনে ফিরেছে স্বস্তি। কৃষকের মনন, মানসিকতায় যোগ হয়েছে খুশির ঝিলিক। মাঠে মাঠে পানি উজ্জীবিত হলুদাভাব হওয়া রোপন করা আমন ধান। বীজ তলায় প্রানের সঞ্চার ঘটেছে। সবজি খেতের শুকিয়ে যাওয়া সবজি সতেজতার বিকিরন ছড়াচ্ছে। দীর্ঘ প্রতিক্ষিত অথচ কাঙ্খিত বৃষ্টিপাত দৃশ্যতঃ সাতক্ষীরার উৎপাদন ব্যবস্থা এবং অর্থনীতিকে রক্ষায় শেষ মুহুর্তের শক্তি হিসেবে কাজ করবে এমনই প্রত্যাশা কৃষক সহ মৎস্য চাষীদের। শেষ ভাদ্র আর মাত্র দুই দিন পর আশ্বিন মাস। গতকাল দিন ব্যাপী কখনও গুড়ি গুড়ি আবার কোন কোন সময় মুসলধারে বৃষ্টি নামে। মাঠ ঘাট পানিতে পূর্ণতা পায়। এ রিপোর্ট লেখার সময় রাত নয়টায় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছিল। সাতক্ষীরার সদর উপজেলার কুশলিয়া গ্রামের কৃষক সবেদ আলী জানান, বৃষ্টির দেখা মিলেছে সত্য কিন্তু ইতিমধ্যে বৃষ্টিহীনতা আমন চাষে যা ক্ষতি হওয়ার তা হয়েছে। কৃষকরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সেচ যন্ত্রের মাধ্যমে চাষাবাদ করেছে যা স্বাভাবিকের অপেক্ষায় খরচ হয়েছে অনেক বেশী। ঋতু বৈচিত্র্যের ধারাবাহিকতায় আমাদের দেশ আষাঢ় ও শ্রাবন বর্ষাকাল আর এসময়টি আমন ধান চাষ এবং সবজি ও রবিশস্য উৎপাদনের একমাত্র ভরসা আকাশের বৃষ্টি, কিন্তু এবারের বাস্তবতা উলেখিত মাস দুটি ছিল বৃষ্টিপাতহীন। এমন কি পচা ভাদ্র খ্যাত মাসটিতে ছিল বৃষ্টিপাত, কৃষক আমন চাষ করতে পারেনি, মাঝে মধ্যে সামান্য বৃষ্টিপাত এবং সেচযন্ত্র ব্যবহারে কৃষকরা আমন চাষকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। সাতক্ষীরার বিস্তীর্ন মাঠে বৃষ্টির অভাবে আমন ধান শুকিয়ে যায়। আমন চাষের পাশাপাশি মৎস্য উৎপাদনেও চরম বিপর্যয়কর পরিস্থিতির অবতরনা ঘটে। সাতক্ষীরায় সা¤প্রতিক বছর গুলোতে বিপুল পরিমান সাদা প্রজাতির মাচ চাষ হয়ে আসছে। মৎস্য চাষে বৃষ্টির পানির বিকল্প নেই। বৃষ্টিহীনতার কল্যানে মৎস্য চাষীদের জন্য চরম দুঃসময় ছিল, জেলার মৎস্য চাষীরা মৎস্যচাষে ব্যাপক অর্থ বিনিয়োগ করেছে। গত দুই মাস যাবৎ সাতক্ষীরার আবহাওয়া ছিল লু-হাওয়ায় পুর্ণ, সর্বত্র ভ্যাপসা গরম, সূর্যের প্রখরতা, পরিস্থিতি এমন ছিল যে আগুন হাওয়া, শস্য প্রখরতা, পরিস্থিতি এমন ছিল যে আগুন হাওয়া। শষ্য ভান্ডার খ্যাত সাতক্ষীরা উৎপাদন ব্যবস্থা শুন্যের কোঠায় নেমে আসে যার বিরুপ প্রভাব পড়ে বাজার ব্যবস্থায়। সবজির মূল্য বৃদ্ধির ঘটনা অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে। নিন্ম আয়ের মানুষগুলো জীবন যাপন, জীবন যাত্রা চরম মানবেতর পরিস্থিতিতে পৌছায়। বৃষ্টি না হওয়ায় চাষাবাদ মুখ থুবড়ে পড়ে যে কারনে কাজহীনতায় ভোগে শ্রমজীবিরা। গতকালের বৃষ্টি দৃশ্যতঃ দীর্ঘ দিনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতির অবসান ঘটিয়েছে। সময়ে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কৃষি ও মৎস্য উৎপাদনে যে ক্ষতি হয়েছে তা কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেওয়া যাবে এমন মন্তব্য করছেন কৃষকরা। সাতক্ষীরার কৃষকদের অনেকে বৃষ্টির আগমনী বার্তায় নতুন ভাবে যেমন আশায় বুক বাঁধছে অনুরুপ ভাবে বীজতলা প্রস্তুত পরবর্তি আবারও আমন ধানের পাতা ফেলার জন্য চাষাবাদ করছে। আশাশুনির চাপড়া, বুধহাটা এলাকার লবনাক্ত সহায়ক ধান চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছে কৃষকরা। সাতক্ষীরার গ্রামে গ্রামে এই সময় গুলোতে বিভিন্ন ধরনের মৌসুমী ফল গাছ বিশেষ করে আম, কাঠাল, লিচু, ছবেদা, কুল, লেবু, জাম, নারিকেল এর চারা রোপন করার উৎসব চলে, রোপনকরা ফলগাছ গুলো শুকিয়ে যাচ্ছিল বৃষ্টির কল্যানে গাছ গুলো প্রান ফিরে পাবে এমন মন্তব্য সংম্লিষ্টদের। অসময়ে বৃষ্টি হলে তা বৃষ্টি, বৃষ্টির আগমনে তাই সর্বত্র সুখ, স্বস্তি আর আনন্দস্রোত। উৎপাদন এগিয়ে যাবে, অর্থনীতি হবে সুদৃঢ়, খাদ্য ঘাটতি মুক্ত হবে সাতক্ষীরা।