বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ০৫:৪৩ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
শান্তি আলোচনার পর ইউক্রেনে বৃহত্তম ড্রোন হামলা চালালো রাশিয়া সিরিয়ায় পুনরায় কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে বিশ্বব্যাংক অপারেশন সিঁদুর নিয়ে মন্তব্য, ভারতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক গ্রেফতার সৌদি আরবে অবৈধদের ধরতে অভিযান, গ্রেফতার ১৫ হাজার হায়দরাবাদের চারমিনারের কাছে ভবনে আগুন, শিশুসহ নিহত ১৭ যে কারণে ব্যর্থ হলো ভারতের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ ভারতের জন্য আকাশসীমা আরও এক মাস বন্ধ রাখবে পাকিস্তান: রিপোর্ট ইরানে শিয়া মাজারে হামলার ঘটনায় ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ—মধ্যাঞ্চলে ভয়াবহ টর্নেডোয় ২৭ জনের প্রাণহানি যে কারণে পেনাল্টি নেননি হালান্ড

রুশ সেনার বয়ানে ইউক্রেন যুদ্ধ

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

এফএনএস বিদেশ : ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরু হয় চলতি বছর ২৪ ফেব্র“য়ারি। যুদ্ধের ছয় মাস পার হয়েছে। এখনো দু’পক্ষের যুদ্ধ থামার লক্ষণ নেই। পাভেল ফিলাতিয়েভ একজন সাবেক রুশ সেনা সদস্য যিনি ইউক্রেনে দুই মাস ধরে যুদ্ধ করেছিলেন। স¤প্রতি একটি অনলাইন জার্নালে, তিনি ইউক্রেন আক্রমণ ও রাশিয়ান সেনাদের পরিস্থিতির কথা জানিয়েছেন। যুদ্ধের একপর্যায়ে তিনি একটি এনজিওর সহায়তায় দেশ ছেড়েছেন। গত সপ্তাহে ৩৪ বছর বয়সী এই প্যারাট্রুপার তিউনিসিয়া হয়ে ফ্রান্সে পৌঁছেছেন। এখন পুলিশী পাহারায় রয়েছেন সেখানে এবং রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। স¤প্রতি তিনি সাক্ষাৎকারে তার যুদ্ধের মাঠ ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত, ফ্রান্সে তার যাত্রা এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতি সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন। যুদ্ধে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, ২৪ ফেব্র“য়ারি ভোর ৪টা। তিনি তখন তার সহকর্মীদের সঙ্গে গোলাবারুদভর্তি একটি ট্রাকের মধ্যে ঘুমাচ্ছিলেন। এ সময় তার সহকর্মীরা ইউক্রেনের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে রকেট হামলা শুরু করে। আর এতেই তার ঘুম ভাঙে। তিনি এভাবেই বর্ণনা দেন যে, ‘আমার প্রথম মনে হয়েছিল, পাগলামির কিছু একটা ঘটছে। রকেট ও কামানের গোলা ছুটছে। আপনি যখন সীমান্ত (ক্রিমিয়া-ইউক্রেন) অতিক্রম করছেন, তখন দেখছেন যে ১০টি যুদ্ধবিমান মাথার ওপর দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে, অন্যদিকে, উড়ছে ১০টি হেলিকপ্টার। একই সঙ্গে ট্যাংকগুলো আপনার চারপাশে ঘোরাঘুরি করছে, তখন আপনার মনে হবে, আপনি একটি গুরুতর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন’। ইউক্রেন আগ্রাসনের শুরুর দিনগুলোতে পাভেল ফিলাতিয়েভ যে ইউনিটে ছিলেন সেটিকে ইউক্রেনীয় সীমান্তের কাছাকাছি যেতে হয়েছিল। এ সময় সেনা ইউনিটের সবাইকে তাদের ফোন জমা দিতে হয়েছিল। তারা যাতে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে না পারেন বা কোনো বন্ধুকে ফোন করে জানাতে না পারেন যে, প্রকৃতপক্ষে কী ঘটছে সেখানে। ফলে ইউক্রেনে কী হচ্ছে, পাভেল সেটা জানতেন না বলে দাবি তার। তিনি শুধু জানেন যে সেনাবাহিনীর বহরের সঙ্গে তিনি আছেন। রুশ সেনাদের যে বহর ক্রিমিয়া সীমান্ত হয়ে ইউক্রেনের মূল ভ‚খন্ডের দিকে যাচ্ছে সেটির সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি বুঝতে পেরেছিলাম এটি আসলে বাস্তব যে, যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু প্রথম কয়েকদিন আমি জানতাম না ঠিক কী ঘটছে। আমি ভেবেছিলাম ন্যাটো সত্যিই আমাদের আক্রমণ করছে? আমরাও পাল্টা হামলা করছি’। ছয় মাসের বেশি সময় পর এখন পাল্টা প্রতিরোধ যুদ্ধে সক্রিয় ইউক্রেন। ইউক্রেনের দাবি, যুদ্ধে থাকা রুশ সেনাদের গতি কমেছে। সংখ্যায়ও কমে গেছে তারা। প্রকৃতপক্ষে যুদ্ধে আসলে কী ঘটছে, তার বিবরণ উঠে এসেছে পাভেল ফিলাতিয়েভের বক্তব্যে। দুই মাস যুদ্ধের মাঠে কি কি ঘটেছে তা ১০৪ পৃষ্ঠায় লিখেছেন তিনি। এটির নামও দিয়েছেন ‘জোভ’। রুশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ভিকে-তে তা প্রকাশও করেন পাভেল। রুশ সেনাবাহিনীর এই সদস্য আরও বলেন, ‘আমি আমার হাতে থাকা অস্ত্র ফেলে পালাতে পারছিলাম না, একজন সৈনিকের জন্য এটা কাপুরুষতার পরিচয়। সবাই তো এটা বোঝে না, তবে আমাদের এই দেশপ্রেমের কাছেই জিম্মি হয়ে পড়েছিলাম। আমি সিদ্ধান্ত নিই, আমি যদি জীবিত অবস্থায় এখান থেকে বের হয়ে যেতে পারি, তাহলে এখান থেকে বের হওয়ার পর যুদ্ধ বন্ধে আমার সামর্থ্যরে সবটুকু দিয়েই চেষ্টা করবো। আমি সিদ্ধান্ত নিই, সবচেয়ে ভালো হবে যা দেখলাম, তা লিখে রাখা’। ফিলাতিয়েভ রাশিয়ানদের দেখাতে চেয়েছিলেন যে তিনি যা বলছেন তা সত্য, তারা টিভিতে যা দেখছেন অন্তত তার তুলনায়। একটি সামরিক পরিবার থেকে উঠে এসেছেন ফিলাতিয়েভ। তার বাবাও সামরিক কর্মকর্তা হিসেবে চেচনিয়ায় দায়িত্ব পালন করেছেন। গত বছর, একটি নির্ভরযোগ্য বেতনের জন্য, তিনি তার বাবার পুরোনো ইউনিটে তালিকাভুক্ত হন। ক্রিমিয়াতে অবস্থানকালে, সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাপক দুর্নীতির ফলে তিনি নিজেও সরঞ্জামের দীর্ঘস্থায়ী ঘাটতি দেখেছিলেন। সেখানে যে যন্ত্রপাতি ছিল তা পুরোনো এবং জরাজীর্ণ। তিনি বলেন, ‘সীমান্ত অতিক্রম করার একেবারে শেষ মুহূর্তে আমি একটি বুলেটপ্র“ফ ভেস্ট পেয়েছি। সবাই জানেন ১০ জন লোককে দুটি হেলমেট ও বুলেটপ্র“ফ ভেস্টসহ বাইরে পাঠানো হয় এবং নিজেদের মধ্যে এটি সাজাতে বলা হয়। পরিস্থিতি এতটাই অযৌক্তিক যে যুদ্ধে পাঠানোর আগে অনেকেই নিজেদের পোশাক, সরঞ্জাম, বুট কিনছিলেন। ফেব্র“য়ারির শেষের দিকে ক্রিমিয়া থেকে ইউক্রেনীয় মূল ভ‚খন্ডে যাওয়ার পর, ফিলাতিয়েভের ইউনিট খেরসন দখল করে নেয়। এরপর সেনাদের মিকোলাইভের দিকে অগ্রসর হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সেখানে গিয়ে পাভেলের ইউনিট অবস্থান নেয়। সেখানে রুশ সেনাবাহিনী ও ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়। পাভেলের বেশ কয়েকজন সহযোদ্ধাও নিহত হন সেখানে। তবে পরে আর শহরটি দখর করতে পারেনি রুশ সেনারা। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সপ্তাহব্যাপী দিন গুনছিলাম। এমনভাবে আমরা সেখানে ছিলাম যখন আমাদের ঘুমানোর পর্যন্ত সুযোগ হয়নি। বারবার আমরা ইউক্রেনীয় বাহিনীর আক্রমণের মুখে পড়তে থাকি এবং আমরা বুঝতে পারছিলাম না কেন আমাদের এভাবে ঘোরানো হচ্ছে। তুমুল গোলাবর্ষণ চলছে। এর মধ্যেই আমাদের বাস করতে হচ্ছে, ঘুমাতে হচ্ছে। কিন্তু একসময় আপনি এটাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়বেন। দেখা গেলো যে, একশ মিটার দূরে একটি বিস্ফোরণ হয়েছে, কিন্তু এর মধ্যেই ঘুমাতে হয় আমাদের’। পরিখায় এক মাস কাটিয়েছিলেন ফিলাতিয়েভ। একটি আর্টিলারি বিস্ফোরণে চোখে সংক্রমণের কারণে তার যুদ্ধ শেষ হয় এবং তাকে ক্রিমিয়ার একটি হাসপাতালে সরিয়ে নেওয়া হয়। সেখানে তিনি টিভি দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন এবং কীভাবে তিনি যুদ্ধের অভিজ্ঞতা নিয়েছিলেন এবং কীভাবে এটি সংবাদে চিত্রিত করা হয়েছিল তার সঙ্গে তুলনা করার সুযোগ পান। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে টিভি ছিল কিন্তু আমার কাছে তখনো ফোন ছিল না, যেটা দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়। তাই আমি টিভিই দেখতাম। আমি বুঝতে পারতাম না তারা কী বলছে। আমি যা দেখেছি তা শুধু যুদ্ধ, যুদ্ধ আর যুদ্ধ। তারা আমাকে বলছে, এটা বিশেষ অভিযান। নাৎসি-সংক্রান্ত। একদা ইউক্রেনীয়রা আমাদের শত্র“ ছিল কিন্তু তারা ফ্যাসিস্ট নয়। আমি জানি, টিভিতে যে প্রতিবেদন দেখানো হচ্ছে, সেগুলো যুদ্ধের ময়দান থেকে আসা খবর নয়। কারণ, আমরা যেখানে ছিলাম সেখানে একজন সাংবাদিককেও দেখিনি। ফলে যুদ্ধ নিয়ে আমার যে অভিজ্ঞতা আর টিভিতে যা দেখানো হচ্ছে, তার পুরোটাই বানোয়াট, ‘ননসেন্স’।’ যদিও রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ইউক্রেনে সেনাদের হতাহতের বিষয়ে সতর্কভাবে বার্তা দেয়। গত মার্চের সর্বশেষ সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১ হাজার ৩৫১ জন সেনা নিহত হয়েছেন ইউক্রেন যুদ্ধে, যদিও তা প্রকৃতপক্ষে অনেব বেশি বলে ধারণা করা হয়। ফিলাতিয়েভ বলেন ‘আমি গুজব নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না তবে একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে আমি জানি, আমার ইউনিটে মারা যাওয়া আমার প্রথম বন্ধু এখনো নিখোঁজ হিসাবে তালিকাভুক্ত’। আপনার সহকর্মীরা আপনার এমন মন্তব্যে কি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে পারেন এমন প্রশ্নের জবাবে ফিলাতিয়েভ বলেন, ‘আমরা সবকিছুতে একমত নই, তবে তারা আমাকে পুরোপুরি বোঝে। তাদের কেউই আমাকে কাপুরুষ বলতে পারে না, যেহেতু আমরা এক সঙ্গে যুদ্ধে ছিলাম এবং আমি ইতোমধ্যে পালিয়ে না গিয়ে আমার অনুভ‚তি প্রকাশ করেছি’। সূত্র: আল-জাজিরা, ফ্রান্স২৪ ডট কম

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com