এফএনএস: বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৬ শতাংশ হবে বলে মনে করে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। উলেখ্য, সরকার দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। অর্থনীতির হালনাগাদ তথ্য-উপাত্ত নিয়ে ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউট লুক’- শিরোনামের প্রতিবেদনে এ পূর্বাভাস দেওয়া হয়। গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে সংস্থাটির কার্যালয়ে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। এ সময় এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং উপস্থিত ছিলেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জ¦ালানি তেলের দাম সমন্বয় এবং বিভিন্ন পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়াবে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। যেখানে সরকার জিডিপি প্রবৃদ্ধি নির্ধারণ করেছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স (ঘাটতি) হলে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন সংস্থাটির সিনিয়র কান্ট্রি স্পেশালিস্ট সুন চ্যাং হোন। সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালন করেন এডিবির বহি:সম্পর্ক বিভাগের প্রধান গোবিন্দ বার। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সা¤প্রতিককালে জ¦ালানি তেলের দামের সমন্বয় এবং বিভিন্ন পণ্য মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্চ হচ্ছে রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতির অনিশ্চয়তা। এই কারণে দেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা দীর্ঘায়িত হতে পারে। এ ছাড়া আছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিও। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রৃদ্ধির গতি ২০২২ সালে অব্যাহত ছিল। কিন্তু ২০২৩ সালে দুর্বল রপ্তানি ব্যয় ্এই গতিকে শ্লথ করবে। ফলে চাহিদা এবং আয়, একটি অনিশ্চিত দৃষ্টিভঙ্গি এবং দেশীয় উৎপাদন সীমাবদ্ধতা তৈরি করবে। এজন্য কমে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার। আরও বলা হয়েছে, কারেন্ট অ্যাকাউন্টের ঘাটতি ঋণ ২০২২-এর জিডিপির ৪ দশমিক ১ শতাংশ থেকে ঋণ ২০২৩-এ জিডিপির ৩ দশমিক ৬ শতাংশে সংকুচিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কারণ আমদানি কমে যাওয়া এবং রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পাওয়ায় এই ঘটিতি কমবে। সংবাদ সম্মেলনে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিনটিং বলেছেন, সরকার দীর্ঘস্থায়ী বাহ্যিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা তুলনামূলকভাবে ভালভাবে সামাল দিচ্ছে। বাহ্যিক ভারসাম্যহীনতা কমাতে উপযুক্ত নীতি প্রয়োগ করেছে সরকার। কিন্তু এখনকার মতো অশান্ত সময়ে সংস্কারগুলিকে ত্বরান্বিত করার জন্য একটি ভাল সময়, যা মধ্যমেয়াদে দেশের প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাকে উন্নত করবে। এই সংস্কারগুলির মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংহতকরণের উন্নতি, আর্থিক বাজারকে গভীর করা, এবং উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়ানো এবং বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া। তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক জ¦ালানি বাজারে অনিশ্চয়তা মোকাবিলা এবং দেশে জলবায়ু পরিবর্তন লক্ষ্য অর্জনের জন্য সংস্কারগুলোকে ত্বরান্বিত করতে হবে। সেই সঙ্গে জীবাশ্ম জ¦ালানির উপর নিভর্রতা কমিয়ে অভ্যন্তরীণ নবায়নযোগ্য জ¦ালানি সরবরাহ স¤প্রসারণের উদ্যোগ বাড়াতে হবে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছর বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা এবং জ¦ালানি ঘাটতির কারণে বেসরকারি বিনিয়োগের বৃদ্ধি কম হবে। রাজস্ব আদায়ে ধীর গতি এবং উচ্চ আমদানি ব্যয়ের সঙ্গে সরকারী কৃচ্ছ্রতা ব্যবস্থার ফলে সরকারী বিনিয়োগের বৃদ্ধিও ধীর হবে। দেশের মূল্যস্ফীতি বাড়বে। কারণ জ¦ালানি তেলের দাম সমন্বয় করায় জন্য অভ্যন্তরীণ সব পণ্য মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী সমন্বয় এবং বৈশ্বিক পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে মূল্যের চাপ বৃদ্ধি পাবে। আরও বলা হয়েছে করোনাভাইরাস রোগ (কোভিড-১৯) মহামারীর আর্থ-সামাজিক প্রভাব মোকাবেলা করতে এবং দ্রুত পুনরুদ্ধারে সহায়তা করতে এডিবি ইতিমধ্যেই বাংলাদেশকে ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ এবং ৭ দশমিক ২৩ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছে। পাশাপাশি আগামী ২০২৩-২০২৫ সময়ের জন্য এডিবি বাংলাদেশের জন্য প্রায় ৯ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তা কর্মসূচি নিচ্ছে। গত ৪৯ বছরে এডিবি বাংলাদেশকে ৪০ বিলিয়ন ডলার ঋণ ও অনুদান সহায়তা করেছে। প্রতিবেদনে এশিয়ার প্রবৃদ্ধি বিষয়ে বলা হয়েছে, পুরো এশিয়ায় চলতি অর্থবছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ, যা গত এপ্রিল মাসে প্রকাশিত আউটলুকের পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল ৫ দশমিক ৩ শতাংশ হবে। এ ছাড়া সাউথ এশিয়ায় চলতি অর্থবছর প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ, যা আগের পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। ইস্ট এশিয়ায় বর্তমান পূর্বাভাসে ৪ দশমিক ২ শতাংশ, আগে বলা হয়েছিল ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। ককেশাস এন্ড সেন্টাল এশিয়ায় চলতি অর্থবছর প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৪ দশমিক ২ শতাংশ, আগের পূর্বাভাসে ছিল ৪ শতাংশ। সাউথইস্ট এশিয়ায় ৫ শতাংশ, আগের পূর্বাভাসে ছিল ৫ দশমিক ২ শতাংশ এবং দ্য পেসিফিকে চলতি অর্থবছর প্রবৃদ্ধি হতে পাওে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ, যা আগের পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতির অনিশ্চয়তাকে চিহ্নিত করেছে এডিবি। এ কারণে দেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা দীর্ঘায়িত হতে পারে বলেও মনে করছে সংস্থাটি।