এফএনএস: উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। গড় পাসের হার ৯৫.২৬। সারাদেশে মোট ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ফল ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৯৬ দশমিক ৫২ শতাংশ, যশোর বোর্ডে ৯৮ দশমিক ১১ শতাংশ, সিলেট বোর্ডে ৯৪ দশমিক ৮০ শতাংশ, বরিশাল বোর্ডে ৯৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ, কুমিলা বোর্ডে ৯৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ, দিনাজপুর বোর্ডে ৯২ দশমিক ৪৩ শতাংশ, রাজশাহী ৯৭ দশমিক ২৯ শতাংশ, ময়মনসিংহ বোর্ডে ৯৫ দশমিক ৭১ শতাংশ, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৮৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ, মাদরাসা বোর্ডে ৯৫ দশমিক ৪৯ ৯২.৮৫ ও কারিগরি বোর্ডে পাসের হার ৯২ দশমিক ৮৫ শতাংশ। করোনা মহামারির কারণে এবারের এইচএসসি পরীক্ষা অন্যান্য বছরের মতো হয়নি। পরীক্ষা হয় শুধু নৈর্বাচনিক বিষয়ে। আর আবশ্যিক বিষয়ে আগের পাবলিক পরীক্ষার সাবজেক্ট ম্যাপিং করে মূল্যায়নের মাধ্যমে নম্বর দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বাদ দেয়া হয় চতুর্থ বিষয়ের পরীক্ষাও। এবার ২ হাজার ৬২১টি কেন্দ্রে ৯ হাজার ১৮৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১৩ লাখ ৯৯ হাজার ৬৯০ জন পরীক্ষার্থী ছিলেন। এর মধ্যে নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে পরীক্ষার্থী ছিলেন ১১ লাখ ৩৮ হাজার ১৭ জন। এদের মধ্যে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৮৩০ জন বিজ্ঞান, ৬ লাখ ৫৬ হাজার ১৩২ জন মানবিক এবং ২ লাখ ২৭ হাজার ৫৫ জন বাণিজ্য বিভাগের। এ ছাড়া ১ লাখ ১৩ হাজার ১৪৪ জন মাদ্রাসা ও ১ লাখ ৪৮ হাজার ৫০৩ জন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের শিক্ষার্থী। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এইচএসসির ও সমমানের ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী (নওফেল)। ঢাকায় পাসের হার ৯৬ দশমিক ২০: ঢাকা শিক্ষাবোর্ডে এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় মোট পাসের হার ৯৬ দশমিক ২০ ভাগ। মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন ৩ লাখ ১৫ হাজার ৯৫৭ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন ২ লাখ ৯৮ হাজার ৯৭৯ জন। রাজশাহীতে পাস ৯৭ দশমিক ২৯ শতাংশ: রাজশাহী বোর্ডে এবার মোট পাসের হার ৯৭ দশমিক ২৯ ভাগ। মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন ১ লাখ ৫০ হাজার ৯১৮ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন ১ লাখ ৪৩ হাজার ৪৮৯ জন। দিনাজপুরে পাস ৯২ দশমিক ৪৩ শতাংশ: দিনাজপুর বোর্ডে মোট পাসের হার ৯২ দশমিক ৪৩ ভাগ। মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন ১ লাখ ১৫ হাজার ৯৮৬ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন ১ লাখ ৪ হাজার ৪৮৪ জন। ময়মনসিংহে পাস ৯৫ দশমিক ৭১ শতাংশ: ময়মনসিংহ বোর্ডে মোট পাসের হার ৯৫ দশমিক ৭১ ভাগ। মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন ৭০ হাজার ৯৮২ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৬৬ হাজার ২৫০ জন। বরিশালে পাস ৯৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ: উচ্চমাধ্যমিকসার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় বরিশাল বোর্ডে পাসের হার ৯৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে নয় হাজার ৯৭১ জন শিক্ষার্থী। গতকাল রোববার বেলা সোয়া ১১টার দিকে ফলাফলের পরিসংখ্যান ঘোষণা করেন বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অরুন কুমার গাইন। তিনি জানান, এ বছর পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ৬৬ হাজার ৭৯৬ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছাত্র ৩২ হাজার ৫৭ জন এবং ছাত্রী ৩৪ হাজার ৭৩৯ জন। পাস করেছে ৬৩ হাজার ৯৬৪ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৩০ হাজার ২৮৯ জন আর ছাত্রী ৩৩ হাজার ৬৭৫ জন। বিভাগে পাসের হারে এগিয়ে রয়েছে বরিশাল জেলা। প্রতিবারের মতো এবারও এই শিক্ষা বোর্ডে ফলাফলে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা পাস ও জিপিএর হারে এগিয়ে। গত বছর বোর্ডে পাসের হার ছিল শতভাগ। তবে এবারে জিপিএ-৫ বেড়েছে চার হাজার ৪০৩ জনের। এ বছর কোনো কলেজ শতভাগ ফেল না থাকলেও ৫৬টি প্রতিষ্ঠানে পাশের হার শতভাগ রয়েছে। কুমিলায় পাস ৯৭.৪৯ শতাংশ: কুমিলা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে ৯৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। এবার এক লাখ ১৪ হাজার ৫৫৯ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। উত্তীর্ণ হয় এক লাখ ১১ হাজার ৬৮০। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৪ হাজার ১৫৩ জন শিক্ষার্থী। কুমিলা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকশিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর ড. মো. আসাদুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেন। চট্টগ্রামে পাসের হার ৮৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ: চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে চলতি বছর অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষায় ৮৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করেছে। জিপিএ ফাইভ পেয়েছেন ১৩ হাজার ৭২০ জন। গতকাল রোববার সকালে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, পাসের দিকে ছাত্রীরা এগিয়ে আছেন। ছাত্রী পাসের হার ৯১ দশমিক ৮৫ শতাংশ। ছাত্র পাস করেছে ৮৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এবার পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ৯৯ হাজার ৬২৮ জন। পাস করেছেন ৮৯ হাজার ৬২ জন। যশোরে পাস ৯৮ দশমিক ১১: যশোর শিক্ষাবোর্ডের এবারের এইচ এসসি পরীক্ষায় পাসের হার ৯৮.১১ শতাংশ। এই বোর্ডে মোট জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২০ হাজার ৮৭৮ জন। পরীক্ষার্থী ছিল ১ লাখ ৩১ হাজার ৫০০ জন। পরীক্ষায় অংশ নেয় ১ লাখ ২৮ হাজার ১৬৩ জন। পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্র ৬৫ হাজার ৭০৬ জন, ছাত্রী ৬২ হাজার ৪৫৭ জন। ছাত্রদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৮ হাজার ৭০৭ জন, ছাত্রীদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১২ হাজার ১৭১ জন। সিলেটে পাস ৯৪ দশমিক ৮০ শতাংশ: সিলেট বোর্ডে পাস করেছে ৯৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৭৩১ জন। এই বিভাগে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ৬৬ হাজার ৬৬১ জন। এর মধ্যে মোট উত্তীর্ণ হয়েছেন ৬৩ হাজার ১৯৩ জন। সিলেট বোর্ডে শতভাগ পাস করেছে ৫৩টি কলেজের শিক্ষার্থীরা। কারিগরিতে পাস ৯২ দশমিক ৮৫ শতাংশ: কারিগরি শিক্ষাবোর্ডে এবার মোট পাসের হার ৯২ দশমিক ৮৫ ভাগ। মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন ১ লাখ ৪৯ হাজার ৩৯৭ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৮ জন। মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডে পাস ৯৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ: মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডে মোট পাসের হার ৯৫ দশমিক ৪৯ ভাগ। মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন ১ লাখ ১৩ হাজার ১৬৭ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন ১ লাখ ১ হাজার ৭৬৮ জন। যেভাবে ফলাফল জানা যাবে : আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল প্রকাশের পর শিক্ষার্থীরা শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট ও এসএমএসের মাধ্যমে ফলাফল জানতে পারবেন। এই ওয়েবসাইটে রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, পরীক্ষার নাম, বছর ও শিক্ষা বোর্ড সিলেক্ট করে সাবমিট বাটনে ক্লিক করে ফলাফল জানা যাবে। এ ছাড়া মুঠোফোনে খুদে বার্তার মাধ্যমেও ফলাফল জানা যাবে। মুঠোফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে ঐঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে আবার স্পেস দিয়ে পাসের বছর লিখে পাঠাতে হবে ১৬২২২ নম্বরে। উদাহরণÑঐঝঈ উঐঅ ১২৩৪৫৬ ২০২১ লিখে পাঠাতে হবে ১৬২২২ নম্বরে। ফিরতি এসএমএসে জানা যাবে ফলাফল। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের জন্য ঐঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে গঅউ লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে আবার স্পেস দিয়ে পাসের বছর লিখে পাঠাতে হবে। উদাহরণÑঐঝঈ গঅউ ১২৩৪৫৬ ২০২১ লিখে পাঠাতে হবে ১৬২২২ নম্বরে। ফিরতি এসএমএসে জানা যাবে ফলাফল। এ ছাড়া কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ফলাফল জানতে ঐঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে ঞঊঈ লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে পাসের বছর লিখে ১৬২২২ নম্বরে এসএমএস পাঠাতে হবে। ফিরতি এসএমএসে ফলাফল জানিয়ে দেওয়া হবে। করোনা সংক্রমণের কারণে দীর্ঘ অপেক্ষা করে গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হয় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। তবে সব বিষয়ে পরীক্ষা হয়নি। গ্র“পভিত্তিক তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ে অনুষ্ঠিত হয় এই পরীক্ষা।