এফএনএস স্পোর্টস: দুই দলের ইনিংসেই ব্যাটিংয়ে দলকে টানলেন দুই ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যান। বিধ্বংসী ইনিংসে চট্টগ্রামকে বড় পুঁজি এনে দিলেন চাডউইক ওয়ালটন। আন্দ্রে ফ্লেচার জবাব দিলেন দারুণ আরেকটি ইনিংস খেলে। সঙ্গে মুশফিকুর রহিম ও ইয়াসির আলি চৌধুরির ঝড়ো ব্যাটিংয়ে আশা জাগাল খুলনা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা পারল না অল্পের জন্য। মুশফিকদের বিদায় করে ফাইনালে যাওয়ার পথে টিকে রইল চট্টগ্রাম। বিপিএলের এলিমিনেটর ম্যাচে প্রিমিয়ার ব্যাংক খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের জয় ৭ রানে। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সোমবার ওয়ালটনের অপরাজিত ৮৯ রানের ইনিংসে চট্টগ্রাম পায় ১৮৯ রানের পুঁজি। খুলনা যেতে পারে ১৮২ রান পর্যন্ত। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ফ্লেচার এবার ৫৮ বলে অপরাজিত ৮০ রান করেও পারেননি দলকে জয় এনে দিতে। রান তাড়ায় বাজে শুরুর পর খুলনাকে লড়াইয়ে ফেরায় ফ্লেচার-মুশফিক জুটি। চারে নেমে মুশফিক খেলেন ২৯ বলে ৪৩ রানের ইনিংস। শেষ দিকে ইয়াসিরের ২৪ বলে ৪৫ রানের সৌজন্যে ম্যাচ অনেকটাই নাগালে নিয়ে আসে খুলনা। ১৯তম ওভারের প্রথম বলে যখন শরিফুল ইসলামের বলে এক্সট্রা কাভার দিয়ে ছক্কা মেরে দেন ইয়াসির আলি, ম্যাচ তখন অনেকটা হেলে পড়ে খুলনার দিকেই। ১১ বলে প্রয়োজন আর তখন ১৮ রান। কিন্তু ওভারের তৃতীয় বলে আউট হয়ে যান ইয়াসির। খুলনাও হারিয়ে ফেলে পথ। শেষ ওভারে ১৬ রানের সমীকরণে দুর্দান্ত বোলিং করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ফ্লেচার ও থিসারা পেরোর মতো আগ্রাসী দুজন ব্যাটসম্যানের সামনেও বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে এই অফ স্পিনার দেন ¯্রফে ৮ রান। শেষ বলে নিজের বলেই ক্যাচ নিয়ে থিসারাকে বিদায় করেন তিনি। সতীর্থরা মেতে ওঠেন বাঁধনহারা উলাসে। অথচ দিনের শুরুটা চট্টগ্রামের জন্য ছিল হতাশাময়। ম্যাচ শুরুর আগেই বড় ধাক্কা আসে তাদের জন্য। যার ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের জোরে এই পর্যায়ে আসতে পেরেছে তারা, সেই উইল জ্যাকস অসুস্থ হয়ে পড়েন মাঠে আসার ঠিক আগে। তবে চাডউইকট ওয়ালটন ব্যাটিং তান্ডবে বুঝতেই দেননি জ্যাকসের অভাব। জ্যাকসের মতো অবশ্য ইনিংস শুরু করেননি ওয়ালটন। চাপের মুখে চার নম্বরে নেমে ৪৪ বলে ৮৯ রানের ইনিংসটি খেলেন তিনি সমান ৭টি করে চার ও ছক্কায়। পঞ্চম উইকেটে মেহেদি হাসান মিরাজের সঙ্গে গড়েন রেকর্ড জুটি। টস হেরে চট্টগ্রামের শুরুটা হয় আগ্রাসী। ইনিংসের প্রথম বলে সৈয়দ খালেদ আহমেদকে ফ্লিক করে চার মারেন কেনার লুইস। জ্যাকসের জায়গায় সুযোগ পাওয়া ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যান চতুর্থ বল ফাইন লেগ দিয়ে ছক্কায় আছড়ে ফেলেন গ্যালারিতে। এরপরই দ্রুত ২ উইকেট হারায় তারা। প্রথম ওভারেই শেষ বলে পয়েন্টে সহজ ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন জাকির হাসান। তিনে নেমে আফিফ হোসেন টিকতে পারেন কেবল তিন বল। একাদশে ফিরে নিজের দ্বিতীয় বলেই উইকেট পান বাঁহাতি পেসার রুয়েল মিয়া। ওয়ালটনের সঙ্গে এরপর দলকে এগিয়ে নেন লুইস। থিসারা পেরেরাকে পরপর মারেন তিনি চার-ছক্কা। তবে সম্ভাবনাময় ইনিংসটি পূর্ণতা পায়নি। আসরে সাত ম্যাচে তার সর্বোচ্চ ৩৯ রানের ইনিংস শেষ হয় স্পিনার নাবিল সামাদের বলে লাইন মিস করে এলবিডব্লিউ হয়ে। ৩২ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় গড়া ইনিংসটি। শামীম হোসেন পাঁচে নেমে পরপর দুটি চার মারেন মেহেদি হাসানকে। অফ স্পিনারের ওই ওভারেই এলবিডব্লিউ হয়ে যান তিনি ১০ রান করে। ওয়ালটন প্রথম বলে চার মেরে শুরু করলেও পরে একটু সময় নেন। একসময় ১৭ বলে রান ছিল ১১। এরপর বাড়ান রানের গতি। মেহেদির ফুল টসে চার মারার পরের বলে বেরিয়ে এসে বোলারের মাথার ওপর দিয়ে ছক্কায় ওড়ান তিনি। পরে আরেকটি ছক্কা হাঁকান খালেদকে। রুয়েলের টানা বলে বলে মারেন দুটি করে চার ও ছক্কা। ২৮ বলে পূর্ণ হয়ে যায় তার ফিফটি। জুটির রানও পঞ্চাশ স্পর্শ করে ঠিক ২৮ বলেই। ওয়ালটন পরের ওভারে আরেকটি দারুণ ছক্কা মারেন ফরহাদ রেজাকে, স্কয়ার লেগের ওপর দিয়ে। মেহেদিকে আরেকটি ছক্কা মারেন লং অনের ওপর দিয়ে। তার সামনে হালে পানি পাননি অভিজ্ঞ থিসারাও। চার বলে চারবার বল ছাড়ায় সীমানা। হাওয়ায় ভেসে একবার, মাটিতে গড়িয়ে তিনবার। আসরে আগের তিন ইনিংসে ১৬, ০ ও ৩৫ রান করা ওয়ালটন শেষ ওভার শুরু করেন ৮৮ রান নিয়ে। এই ওভারে খেলতে পারেন ¯্রফে একটি বল। সেঞ্চুরির দিকে ছোটার সুযোগ তাই আর হয়ে ওঠেনি। তবে বিপিএলে নিজের সেরা ইনিংসটি খেলে ফেলেন। আগের সেরা ছিল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়েই ৭১। মিরাজ ৩০ বলে করেন ৩৬। ওয়ালটনের সঙ্গে তার জুটি ৫৮ বলে ১১৫ রানের, পঞ্চম উইকেটে যা বিপিএল রেকর্ড। চ্যালেঞ্জিং রান তাড়ায় আগের ম্যাচে যেখানে শেষ করেছিলেন, সেখান থেকেই শুরু করেন ফ্লেচার। প্রথম ওভারেই ছক্কায় ওড়ান নাসুম আহমেদকে। এই বাঁহাতি স্পিনারের ওপরের ওভারে আরেকটি ছক্কা মারেন লং অফের ওপর দিয়ে। এই ওভারেই মেহেদি বিদায় নেন ২ রান করে। সৌম্য সরকার দ্রতই বিদায় নেন আকবর আলীর দুর্দান্ত ক্যাচে। এরপর ফ্লেচার ও মুশফিক এগিয়ে নেন দলকে। বাউন্ডারি আসে প্রায় প্রতি ওভারে। হাওয়েলের তিন বলের মধ্যে মুশফিক দুটি ছক্কা মারেন স্লগ সুইপে। ফ্লেচার ফিফটি স্পর্শ করেন ৩৪ বলে। জমে ওঠে তাদের জুটি। মুশফিকও এগোচ্ছিলেন ফিফটির দিকেই। আক্রমণে ফিরে তাকে বিদায় করেন মিরাজ। লেট কাট করার চেষ্টায় কিপারের গ্লাভসে ধরা পড়েন খুলনার অধিনায়ক। শেষ ৪ ওভারে খুলনার দরকার ছিল ৫৬ রান। ১৭তম ওভারে ইয়াসিরের ছক্কা ও ফ্লেচারের চারে আসে ১৩ রান। পরের ওভারে মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরিকে দুটি ছক্কা হাঁকানোর আগে একটি চার মারেন ইয়াসির। ওভার থেকে আসে ১৯ রান। এরপর শেষ ২ ওভারে ২৪ রানের সমীকরণ। ইয়াসির আলির ছক্কা। শরিফুলের ফিরে আসা। ইয়াসিরের বিদায়। শেষ ওভারে স্পিনের ঝুঁকি নিয়ে মিরাজের ওপর চট্টগ্রামের আস্থা। জয়ের পূর্ণতায় সবকিছুর সমাপ্তি। কিছুদিন আগেও নেতৃত্বের বদল নিয়ে বিতর্কে টালমাটাল চট্টগ্রাম বিদায়ের দুয়ার থেকে এখন ফাইনালের ¯্রফে এক ধাপ দূরে। সংক্ষিপ্ত স্কোর: চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স: ২০ ওভারে ১৮৯/৫ (লুইস ৩৯, জাকির ০, আফিফ ৩, ওয়ালটন ৮৯*, শামীম ১০, মিরাজ ৩৬, হাওয়েল ৮*; খালেদ ৪-০-৪০-২, নাবিল ৪-০-১৫-১, রুয়েল ৩-০-৩২-১, থিসারা ৩-০-৩৮-০, মেহেদি ৩-০-২৩৭-১, ফরহাদ ৩-০-২৫-০)। প্রিমিয়ার ব্যাংক খুলনা টাইগার্স: ২০ ওভারে ১৮৫/৫ (ফ্লেচার ৮০*, মেহেদি ২, সৌম্য ১, মুশফিক ৪৩, ইয়াসির ৪৫, থিসারা ৩*; নাসুম ৪-০-২৪-১, শরিফুল ৪-০-৪৩-১, মিরাজ ৪-০-৪০-২, মৃত্যুঞ্জয় ৪-০-৩৪-১, হাওয়েল ৪-০-৩৬-০)। ফল: চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ৭ রানে জয়ী। ম্যান অব দা ম্যাচ: চাডউইক ওয়ালটন।