দৃষ্টিপাত রিপোর্ট \ সাতক্ষীরা উপকূল বারবার প্রকৃতির নিষ্ঠুর ছোবলে ক্ষত বিক্ষত হয়ে আসছে। নিকট অতীতের আইলা, সিডর, বুলবুল, আম্ফান এর সর্বনাশা ছোবল এই উপকূলীয় জনপদকে বিবর্ণ করলেও বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেসে দাঁড়িয়ে থাকা আমাদের প্রিয় সুন্দরবন উপকূলকে আচ্ছাদন দান করে প্রকতির রুদ্ররোষকে রুখে দিয়েছে। সোমবারের সুপার সাইক্লোন খ্যাত ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর ভয়াল থাবা কে প্রতিরোধ করেছে অনন্য অসাধারন সুন্দরবন। বাংলাদেশের অস্তিত্ব, সম্মান আর মর্যাদার প্রতিক আমাদের সুন্দরবন। আর তাই সব ধরনের প্রাকৃতিক দূর্যোগ দুর্বিপাকের চরম প্রতিপক্ষ হিসেবে তার অস্তিত্ব জানান দিয়ে চলেছে। রবিবার মধ্যরাত হতে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি, সোমবার সকাল হতে বিকাল যতই সময় গড়াচ্ছিল ততোই বৃষ্টিপাতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছিল, বিকালে বৃষ্টির সাথে ঝড়ো হাওয়া উপকূলীয় এলাকার জনগনের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যা ছয়টা এখনও আবহাওয়ার খবর ছিল ভয়াল ঘুর্ণিঝড় সিত্রাং সাতক্ষীরা উপকূলে আঘাত হানবে। ইতিমধ্যে সিত্রাং এর প্রভাবে শ্যামনগর এবং আশাশুনি উপকূলের ভেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সন্ধ্যা ছয়টার পরে এবং সাতটার পূর্বে সিত্রাং এর অগ্রগামী অংশ যখন ভোলা ও বরিশালে আঘাত করে তার ছোয়া সাতক্ষীরার উপকূল কে স্পর্শ করার আগেই উপকূলের রক্ষা কবচ খ্যাত সুন্দরবন তার মোকাবিলা করে। সুন্দরবন কেবল সৌন্দর্য আর সুন্দরের লীলাভূমি নয় আমাদের সুন্দরবন কেবল সুন্দর নয় আইলা, সিডর আর আম্ফানের ভয়াল থাবাকে নিজেকে উজাড়করে দিয়ে উপকূলকে রক্ষা করেছে। এখনও পর্যন্ত আম্ফানের ক্ষত চিহৃ সুন্দরবন অভ্যন্তরে বিস্তৃত। বিশালাকৃতির বন আর এই বনের বৃক্ষরাজির উলেখযোগ্য অংশ আম্ফানের তান্ডবে লন্ড ভন্ড হয়েছে আর নিজের বৃক্ষরাজির পরিবর্তে উপকূলীয় জনপদকে নিরাপদ রেখেছে। সোমবার বিকালে সিত্রাং এর প্রভাবে যখন ঝড়ো হাওয়া বইছিল, এবং নদ নদীতে স্বাভাবিকের অপেক্ষা পানি বৃদ্ধি পায় তখন আমাদের প্রিয় সুন্দরবন অবলীলায় সব ধকল মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়। সুন্দরবন কেবল নিকট অতীতের প্রাকৃতিক দূর্যোগ, দুর্বিপাক আর হিংস্রতা হতে উপকূলীয় জনপদকে আগলে রাখেনি, ১৯৭০ সালের জ্বলোচ্ছ¡াস ১৯৯১ সালের ঘুর্ণিঝড়ের সেই ভয়াবহ মুহুর্ত কে মোকাবিলা করেছে। সুন্দরবন আমাদের অহংকার, প্রিয় বন আমাদের অস্তিত্ব আর রক্ষা কবচ আর তাই এই বনকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। এক শ্রেনির দেশোদ্রোহীরা আমাদের সুন্দরবনের অস্তিত্ব হরনে, বিবর্ণ করনে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছে। বনখেকো ওসমান গনিদের প্রেতাত্বারা এখনও পর্যন্ত জাগরুক। সুন্দরবনের বৃক্ষ নিধনের ঘটনা নতুন নয়, বৃক্ষ নিধনের পাশাপাশি প্রিয় সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র ও ধ্বংস সাধনের তৎপর এক শ্রেনির চোরা শিকারীরা। সুন্দরবন শুধুমাত্র প্রকৃতির তান্ডব থেকে জনজীবনকে রক্ষা করে তা নয় আমাদের প্রিয় সুন্দরবন শত সহস্র পরিবারের জীবন জীবিকার উৎস্য হিসেবে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সর্বপরি অভ্যন্তরীন রাজস্ব উপার্জনের ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। অতীতের ন্যায় বর্তমান সময়েও সুন্দরবন জনগোষ্ঠীকে নিরাপত্তা দিচ্ছে, আর তাই সুন্দরবনের সুরক্ষা আর যথাযথ অস্তিত্ব রক্ষা অক্ষুন্ন থাকতে হবে, তবেই না প্রকৃতির ভয়াল রুপ পরাজিত হবে।