শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:১৩ পূর্বাহ্ন

আমদানি দায় পরিশোধের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২২

এফএনএস : বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানি দায় পরিশোধের মেয়াদ বাড়িয়েছে। আগামী বছরের জুন পর্যন্ত শিল্পের কাঁচামালসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানির দায় পরিশোধে ১৮০ দিনের পরিবর্তে ৩৬০ দিন সময় পাওয়া যাবে। যদিও করোনা শুরুর পর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক কয়েক দফা সময় বাড়িয়েছে। এখন বৈদেশিক মুদ্রার চরম সঙ্কটে আগের ধারাবাহিকতায় সময় বাড়ানো হলো। আর বারবার সময় বাড়ানোর ফলে বড় হচ্ছে আমদানি দায়ের বোঝা। বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রপ্তানির জন্য পণ্য আমদানি, শিল্পের কাঁচামাল, কৃষি উপকরণ ও সার আমদানির জন্য সর্বোচ্চ ১৮০ দিন দেরিতে পরিশোধের শর্তে পণ্য আনা যায়। তবে করোনা শুরুর পর থেকে ওসব ক্ষেত্রে ৩৬০ দিন সময় দেয়া হচ্ছে। তবে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের আওতায় আমদানিতে ওই সুবিধা মিলবে না। বিদ্যমান নিয়মে যে কোনো পণ্য আমদানিতে নির্দিষ্ট অর্থ জমা দিয়ে এলসি খুলতে হয়। আর পণ্য দেশে আসার পর কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ শেষে বিদেশি রপ্তানিকারককে পুরো দায় পরিশোধ করতে হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদি ঋণের আওতায় পণ্য আনা যায়। ওই ধরনের ঋণ সাপ্লায়ার্স বা বায়ার্স ক্রেডিট, ডেফার্ড পেমেন্ট হিসেবে বিবেচিত। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের জুনভিত্তিক তথ্যানুযায়ী সরকারি ও বেসরকারি খাতে ৯৫ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ রয়েছে। তার মধ্যে বেসরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ২৫ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার। আর বেসরকারি উদ্যোক্তাদের ঋণের মধ্যে স্বল্পমেয়াদি ঋণের পরিমাণ ১৭ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের একই সময়ে যা ১১ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার ছিল। কিন্তু এক বছরেই তা ৫ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার বা ৫০ দশমিক ৫০ শতাংশ বেড়েছে। স্বল্পমেয়াদি ঋণের মধ্যে গত জুন শেষে শুধু বায়ার্স ক্রেডিটের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার। ডেফার্ড পেমেন্ট ১ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন ডলার। ব্যাক টু ব্যাক এলসির দায় ১ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক এসব ঋণের মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ দিলেও বিদেশি সরবরাহকারী বাড়াবে কিনা নিশ্চিতভাবে তা বলা যাচ্ছে না। আর বাড়ালেও সুদসহ দায় পরিশোধে আমদানিকারকের খরচ বাড়বে। এক বছর আগে প্রতি ডলার ৮৫ টাকার কম ধরে আমদানি হতো। এখন গড়ে ১০৬ টাকায় ডলার কিনে পরিশোধ করতে হচ্ছে। অথচ আমদানিকারকরা ৮৫ টাকা দর বিবেচনায় পণ্য বাজারজাত করে। ডলারের দর আরো বাড়লে চাপও বাড়বে। তাছাড়া একবারে বড় অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা পরিশোধ করতে গিয়ে মুদ্রাবাজারেও চাপ বাড়বে। কিন্তু চলমান সংকটের মধ্যে সময় না বাড়ালেও অনেক আমদানিকারকই খেলাপি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সূত্র আরো জানায়, বেশিরভাগ ব্যাংকই রেমিট্যান্স কমা ও বিশ্ববাজারে বেশিরভাগ পণ্যের দরবৃদ্ধির কারণে আমদানি দায় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। ডলার সংকটের কারণে অনেক ব্যাংক এখন এলসিও খুলছে না। সরকারি বিভিন্ন আমদানির দায় পরিশোধের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ৫৮৭ কোটি ডলার বিক্রি করেছে। গত অর্থবছর ৭৬২ কোটি ১৭ লাখ ডলার বিক্রি করা হয়েছিল। আর এভাবে ডলার বিক্রির ফলে ধারাবাহিকভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে। আইএমএফের মানদণ্ড বিবেচনায় দেশের রিজার্ভ এখন ২৫ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার। এদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, তদারকিসহ বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে নতুন এলসি খোলা কমেছে। রেমিট্যান্স বাড়াতেও হুন্ডি চ্যানেল বন্ধসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ চলমান। মাছাড়া আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকাসহ বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ভালো হওয়ার আশা রয়েছে। ওই কারণে আবারো আমদানি দায় পরিশোধের সময় বাড়ানো হলো। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দায় পরিশোধে বড় কোনো সমস্যা হবে না।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com