শনিবার, ১৭ মে ২০২৫, ১০:২১ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
সুন্দরবনে বিএসএফের রেখে যাওয়া ৭৫ জনকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর দেবহাটা বিএনপির সদস্য নবায়ন উদ্বোধনী আয়োজনে জেলা বিএনপির আহবায়ক রহমাতুল্লাহ পলাশ বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন যুবদলের প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত কলারোয়ায যুবদল নেতার ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ মুন্সীগঞ্জে তাপদাহে পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ শ্রীউলায় ইউনিয়ন পর্যায়ে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত তারুণ্যের সমাবেশ সফল করতে স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রস্তুতি সভা ভাড়াশিমলায় ২৫০ প্রান্তিক কৃষানের মধ্যে সবজির বীজ বিতরণ খুলনার সাবেক মহিলা কাউন্সিলর গ্রেফতার বসন্তপুর ফকিরপাড়া জামে মসজিদে বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল

আজ কালিগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২২

কালিগঞ্জ প্রতিনিধি \ ২০ নভেম্বর, আজ ঐতিহাসিক কালিগঞ্জ মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে কালিগঞ্জ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী মুক্ত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের অদম্য সাহস ও মনোবলের কারণে পাকিস্তানী সেনারা এই দিন হটে যেতে বাধ্য হয়েছিল। একাত্তর সালের ২০ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা দীর্ঘ আট মাস যুদ্ধ শেষ করে কালিগঞ্জ অঞ্চলকে পাকিস্তানী হানাদার মুক্ত করতে সক্ষম হয়। এ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা তেমন বেশী হতাহত না হলে ও পাকিস্তানী বাহিনীর অধিকাংশ সদস্য মুক্তিসেনাদের হাতে নিহত ও আহত হয়। ক্যাপ্টেন নূরুলহুদার নেতৃতে ২০ নভেম্বর দুপুরে মুক্তিযোদ্ধারা প্রথমে ওয়াপদার ডাকবাংলা ও পরে থানা পারের ডাকবাংলা প্রাঙ্গণে লাল সবুজের জাতীয় পতাকা আনুষ্ঠানিক ভাবে উত্তোলন করেন। বাঙালী জাতির আশা-আকাঙ্খার প্রতীক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণ সরাসরি স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিলে সারা বাংলা অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। শ্যামল, শান্ত, সুশীতল কালিগঞ্জও সেই বিপ্লবী আহবানে উত্তাল হয়ে ওঠে। সে সময় মুক্তি সংগ্রামকে সংগঠিত করতে তৈরি হয়েছিল ২৩ সদস্যের “কালিগঞ্জ সংগ্রাম পরিষদ”। সংগ্রাম পরিষদের সদস্যদের দিন রাতের কর্ম-তৎপরতায় সে সময় কালিগঞ্জের রাজনৈতিক চিত্র সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। একাত্তরের ৮ মার্চ কালিগঞ্জের ডাকবাংলা চত্বরে শত শত মানুষ সমবেত হয়ে সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে উন্মত্ত আক্রোশে পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে ফেলে। এ সময় লাঠি মিছিলও হয়েছিল থানা সদরে। ঐদিন শিক্ষক-ছাত্রসহ সকল সংগ্রমী জনতা আক্রোশে ফেটে পড়ে। সেদিন ঠিক করা হয়েছিল যশোরের এ পাশে হানাদার আর্মিদের কোন ভাবেই আসতে দেয়া হবে না। ১০ ও ১১ এপ্রিলের দিকে রটে যায় পাকিস্তানী আর্মি কালিগঞ্জের দিকে আসছে। এখবর শুনে ক্রোধে ও উত্তেজনায় কাঁপতে থাকে সংগ্রাম পরিষদের সদস্যরা। দ্রুত এলাকার সমস্ত বন্দুকধারীদের সংঘবন্ধ করে কালিগঞ্জ বাজার থেকে থানা পর্যন্ত নদীর তীরে গেওয়া বাগানের ঝোঁপের মধ্যে পজিসন নেয় বন্দুকধারীরা। হঠাৎ রটে গেল সংগ্রাম পরিষদের একটা নামের লিস্ট আর্মিদের কাছে পৌছে গেছে। সে মোতাবেক জন্মভূমি ত্যাগ করে ১৪ এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিলের মধ্যে সংগ্রাম পরিষদের সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনের জন্য সীমান্তের ইছামতি ও কালিন্দী নদী পার হয়ে ভারতের হিঙ্গলগঞ্জ চলে যায়। এদিকে সকল বাঁধা বিপত্তি ও মায়া-মমতা কাটিয়ে মে মাসের মধ্যে শত শত দামাল ছেলেরা দেশমুক্তির শপথ নিয়ে মুক্তিযদ্ধে যোগ দেয়। অপর দিকে পাকিস্তানী আমির্রা ঘাঁটি গাড়ে কালিগঞ্জের ওয়াপদা ডাক-বাংলা ভবন, বসন্তপুর চন্দ্রদের পরিত্যাক্ত বাড়ি, হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকা, দমদম ফেরি ঘাটের বরফকল এবং খানজিয়া ই.পি.আর ক্যাম্পে। খান বাহিনী দ্রুত তাদের পরিধি আরো স¤প্রসারিত করে সাদপুর ব্রীজ, ভাড়াশিমলার কাশেম আলীর বাড়ি, গফ্ফার চেয়ারম্যানের বাড়ি, নাজিমগঞ্জ করিম গাইনের বাড়ি, শুইলপুর আক্কাজ গাজীর বাড়ি, খানজিয়া, বসন্তপুর, উকসা ও পিরোজপুরসহ গোটা সীমান্ত এলাকা ঘিরে ফেলে। এবং নিরিহ নিরস্ত্র গ্রামবাসীর উপর ঝাপিয়ে পড়ে। এসময় তারা সারা দেশের ন্যায় কালিগঞ্জেও গঠণ করে পিস কমিটি ও রাজাকার বাহিনী। এদিকে মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিশোধ স্পৃহায় দ্রুত আর্মস ট্রেনিং নেওয়ার জন্য ভারতের হিঙ্গলগঞ্জসহ বিভিন্ন ট্রেনিং ক্যাম্পে চলে যায়। মে মাসের মধ্যে ট্রেনিং শেষে সীমান্ত পেরিয়ে তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ৯নং সেক্টরের অধিনায়ক মেজর জলিল ও তার সহযোগী ক্যাপ্টেন নূরুল হুদা, লে. মাহফুজ আনাম বেগ, লে. আরেফিন, লে. শচীন কর্মকার ও মেজর লিয়াকতের নেতৃত্বে জুন থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন সময় নিজ মাতৃ ভূমির উপর কৌশলে হায়না বাহিনীর উপর একাধিক বার আক্রমন চালায়। এসময় পাকিস্তানী সেনারা কালিগঞ্জ দখলে রাখতে বিভিন্ন ক্যাম্পে ভারী অস্ত্রশস্ত্র মেশিনগ্যান, কামান, মর্টারসেল ইত্যাদি মজুদ করতে থাকে। এবং মুক্তিযোদ্ধাদের খোঁজখবর পেতে তারা গোয়েন্দা নিয়োগ করে। তাদের অত্যাধুনিক অস্ত্র-শস্ত্রের বিরুদ্ধে অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধারা সাধারণ মানের অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মনোবলকে সম্বল করে অসম যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মুক্তিযোদ্ধরা প্রথমে বসন্তপুর বিওপি, খানজিয়া ক্যাম্প ও থানা সদরের বিওপি ক্যাম্পের উপর আক্রমণ শুরু করে। পরে বাগবাটি, পিরোজপুর, ভাড়াশিমলা, রতনপুর, নজিমগঞ্জ, উকসা দুদলীসহ বিভিন্ন পাকিস্তানী বাহিনীর ঘাঁটিতে বারবার চোরাগুপ্তা আক্রমণ করে পাক বাহিনীকে পর্যুদস্ত করে ফেলে। মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে অক্টোবর ও নভেম্বরে গোটা কালিগঞ্জ একটা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আক্রমন পাল্টা আক্রমন আর রাইফেল, মেশিনগান, গ্রেনেড, রকেট লাঞ্চারের শব্দে ও আগুনে কালিগঞ্জের আকাশ, বাতাস, মাটি, প্রকম্পিত হতে থাকে। উকসা, পিরোজপুর, খানজিয়া ও বসন্তপুর পাকিস্তানী ক্যাম্পে মুক্তিযুদ্ধোদের সাথে অন্যতম সম্মুখ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে কালিগঞ্জের আপামর সাধারণ মানুষ পাকিস্তানী নরপশুদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। সে সময় সকল স্তরের জনতা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। এযুদ্ধে কালিগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধারা খুব বেশী হতাহত না হলে ও পাকিস্তানী বাহিনীর বহু সৈন্য হতাহত হয়। এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের তোপের মুখে হানাদার বাহিনী ২০ নভেম্বর ভোরে কালিগঞ্জ ছেড়ে দেবহাটার দিকে পালিয়ে যায়। এ খবরে উল­াসিত হয়ে ডাকবাংলা চত্বরে মুক্তিযোদ্ধারা সমবেত হয়ে স্বাধীন বাংলার লাল সবুজের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যেদিয়ে কালিগঞ্জে স্বাধীনতার শুভ সুচনা করে। ২০ নভেম্বর সে দিন ছিল ঈদুল ফিতরের দিন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com