এফএনএস: আগামী এক মাসের মধ্যে বাণিজ্যিক আমদানির ঋণপত্র বা এলসি খোলা নিয়ে সমস্যার সমাধান হবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, আপনাদের এলসি খুলতে সমস্যা হচ্ছে। আর এক মাস একটু অপেক্ষা করেন। এখনই সংকট কিছুটা নরমাল হয়ে এসেছে। ডিসেম্বরের মধ্যেই সমস্যার সমাধান হবে, ইনশাআলাহ্। তিনি বলেন, গভর্নরের (বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর) সঙ্গে দুদিন আগেও কথা হয়েছে। তারপরও আমি আপনাদের সমস্যার কথাগুলো গভর্নরের কাছে পৌঁছে দেবো। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনদিনব্যাপী বাংলাদেশ বিল্ডকন, উড এবং ইলেট্রিক্যাল ইন্টারন্যাশনাল প্রদর্শনীর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এসব কথা বলেন। রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী আরও বলেন, এ সরকার পুরোপুরি ব্যবসাবান্ধব। অর্থনীতির ৮০ শতাংশ আপনাদের ব্যবসায়ীদের হাতে। সেজন্য আপনাদের জন্য সব দরজা খোলা। প্রধানমন্ত্রী আপনাদের জন্য অত্যন্ত আন্তরিক। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষকে আমি বলবো, যেসব দেশ উন্নয়ন করেছে তাদের সামাজিক শান্তি ঠিক ছিল। আমরাও ব্যবসায়ীদের এতোদিন নিরবচ্ছিন্ন কাজ করতে দিয়েছি। কিন্তু এখন রাজনীতির নামে অরাজকতা করে সে শান্তি নষ্ট করার অপচেষ্টা চলছে। সবাই মিলে সেই অপচেষ্টা রুখতে হবে। গত ১৪ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জি এম আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছিলেন, বাণিজ্যিক আমদানির ঋণপত্র বা এলসি খোলা বন্ধ থাকার বিষয়টি সঠিক নয়। ব্যাংকগুলো প্রতিদিনই বাণিজ্যিক ঋণপত্র বা এলসি খুলছে। তবে কিছু সামাজিক মাধ্যমে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। ডলারের কিছু সংকট থাকলেও এলসি খোলা বন্ধের কোনো নির্দেশনা দেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। সক্ষমতা অনুযায়ী ব্যাংকগুলো পণ্যের বিপরীতে এলসি খুলছে। বাজারের চাহিদা মেটানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিত ডলার সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে। আশা করছি ভবিষ্যতেও দিয়ে যাবে। তিনি জানিয়েছিলেন, চলতি নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ পর্যন্ত এলসি খোলা হয়েছে ১ হাজার ২৬৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত অক্টোবর মাসের একই সময়ে (প্রথম ১০ দিনে) যা ছিল ১ হাজার ২৩২ মিলিয়ন ডলার। গত অক্টোবর মাসে মোট এলসি খোলা হয়েছে ৪ হাজার ৭৪৩ মিলিয়ন ডলার। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, শিল্পায়নের জন্য অগ্নিনিরাপত্তা খুবই জরুরি। দেশ উন্নত হচ্ছে। একই সঙ্গে দেশের ভেতরে বাড়ছে শিল্পকারখানা। তাই শিল্পকারখানার নিরাপত্তার জন্য অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা আধুনিকায়ন প্রয়োজন। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মইন উদ্দিন বিএসপি (বার) এনডিসি, পিএসসি, জি এম.ফিল এবং বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচার অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইসাব সভাপতি জহির উদ্দিন বাবর। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, দেশের ৩২টি উপজেলায় নতুন করে ফায়ার সার্ভিসের ডিপো স্থাপন করা হয়েছে, এটা দেশের বড় অর্জন। আমাদের সবকিছুতেই অর্জন আছে, এ অর্জন আরও বাড়াতে হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পের জন্য এসব যন্ত্রপাতি খুবই প্রয়োজন। সরকার সব ধরনের প্রয়োজনে সহযোগিতা দিতে সব সময় প্রস্তুত। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, আমরা এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পথে আছি। ইলেকট্রনিক্স সেফটির পণ্য খাতে বাজারে সহজলভ্যতা তাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি জনসচেতনতার দায়িত্ব তাদেরই। লোকাল ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক অনেক পণ্য আছে। এখনো এখানে বিনিয়োগের সুযোগ অনেক বেশি। শিল্পায়নের জন্য এগুলো সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ফ্রিজ উৎপাদন হবে এটা কেউ কল্পনাও করেনি। এখন বাংলাদেশ থেকে টেলিভিশনও রপ্তানি হচ্ছে। আপনাদের শিল্পেও অনেক সম্ভাবনা আছে, এটাকে কাজে লাগান। বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মইন উদ্দিন বলেন, আমরা প্রত্যেক দিনই কোনো না কোনো দুর্ঘটনাকে মোকাবিলা করছি। বিএম ডিপো সর্বশেষ উদাহরণ। যারা সেখানে জীবন দিয়েছেন তাদেরকে আমরা অগ্নিবীর হিসেবে ঘোষণা করেছি। আমি ভবন মালিক ও কারখানার মালিকদের অনুরোধ করেছি অগ্নি নির্বাপক রাখার জন্য। বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, শিল্পায়নের এ সময়ে নিরাপত্তা নিয়ে সচেতনতা আরও বাড়ানো দরকার। বর্তমানে ১০০ সবুজশিল্পের মধ্যে ৪৮টি বাংলাদেশের, এটা নিয়ে আমরা গর্বিত। এখন আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করলে আমরা আরও এগিয়ে যাবো। এসব লোকাল সেফটি নিশ্চিতের জন্য ইসাব জমি চেয়েছে। আমিও সরকারকে অনুরোধ করবো তাদেরকে জমি দেওয়ার জন্য। ফায়ার, সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি এক্সপোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ফিনল্যান্ড, মধ্যপ্রাচ্য, ভারত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, হংকংসহ ৩০টিরও বেশি দেশের ১৬০টিরও বেশি ব্র্যান্ড অংশ নিয়েছে। এই এক্সপোতে চারটি বিশেষভাবে ডিজাইন করা প্রযুক্তিগত সেমিনার আয়োজন করছে। যার মধ্যে দুটি গতকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাকি দুটি অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ২৫ নভেম্বর। এছাড়াও শেষ দিনে আকর্ষণীয় গোলটেবিল আলোচনাও অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি, ইসাব এক্সপোর দ্বিতীয় দিনে ‘ইসাব সেফটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২২’-এর আয়োজন করেছে। ২৪ থেকে ২৬ নভেম্বর প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত নিবন্ধিত দর্শনার্থীদের জন্য এক্সপো উন্মুক্ত রয়েছে। বিনামূল্যে নিবন্ধনের জন্য অনুষ্ঠানস্থলে বুথ স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও, অংশগ্রহণকারীরা ইভেন্টের ওয়েবসাইটের িি.িরভংংব.পড়স মাধ্যমেও নিবন্ধন করতে পারেন।