মাছুদুর জামান সুমন \ অনন্য অসাধারন সৌন্দর্য্য আর সম্পদে পূর্ণ, বিশ্বের দেশে দেশে আলোচিত, বিশ্ব বিভূইয়ে আলো ছড়ানো সুন্দরবন ভাল নেই। আর দেশের মর্যাদা ও সম্মানের প্রতিমুখ সুন্দরবন সুন্দর না থাকা, ভাল না থাকার অন্যতম কারন এক শ্রেনির বনখেকোদের সুন্দরবন এর বৃক্ষ, জীব বৈচিত্র্য ধ্বংস করা। বাংলাদেশের পরম নির্ভরতা এবং রক্ষা কবচ হিসেবে চিহিৃত সুন্দরবনের কল্যানে বছর বছর প্রকৃতির নিষ্ঠুরতা আর নির্দয়কে পরাভূত, প্রতিরোধ করে উপকূলীয় সহ দেশবাসিকে পরম অবস্থা বিশ্বাসের ক্ষেত্র হিসেবে সুন্দরবন তার অবস্থান জানান দিয়ে চলেছে। শত সহস্র বৃক্ষরাজির পরিবেষ্টিত আমাদের সুন্দরবন প্রতিনিয়ত, প্রতিমুহুর্তে বৃক্ষ নিধনের শিকার হচ্ছে। এক শ্রেনির দেশোদ্রোহীরা সুন্দরবনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে বৃক্ষ নিধনের উৎসব করলেও প্রতিকার বা প্রতিরোধ কতটুকু তা পরিস্থিতিই বলে দিচ্ছে। একাধিক সূত্র জানায় বিশালাকৃতির সুন্দরী, পশুর, গরান, শাল, সেগুন বৃক্ষ অবাধে কেটে সুন্দরবন সংলগ্ন নদী দিয়ে পার করছে বনখেকোরা। সুন্দরবনে নাম জানা, অজানা হাজারো প্রকৃতির বনজ, ফলজ আর ঔষধী বৃক্ষের উপস্থিতি যদি সুসংহত না থাকে তাহলে বনের অস্তিত্ব যে বিপন্ন হবে তা সহজেই বলা বাহুল্য। সুন্দরবনের প্রাণখ্যাত নানান ধরনের জীব বৈচিত্র্য তথা প্রাণিকূল দিনে দিনে অনিরাপদ হচ্ছে এবং এক শ্রেনির চোরা শিকারীরা অবাধে নিধন করে চলেছে প্রাণিকূলকে। সুন্দরবনের অতন্দ্র প্রহরী খ্যাত রয়েলবেঙ্গল টাইগার (স্থানীয় ভাষায় বাঘ বলে পরিচিত) ও চোরা শিকারীদের কাছে নিরাপদ নয়। রক্ত মাংস খাওয়া অতি হিংস্র এই প্রানিকেও নিধন করছে এবং বাঘের চামড়া, হাড়, দাঁদ সহ অপরাপর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রি করছে দেশোদ্রোহীরা। সূত্র জানায় বাঘ শিকারের ক্ষেত্রে বিষাক্ত খাদ্য বড়ি, গ্যাস ট্যাবলেট, বিশ ¯েপ্র, এবং ফাঁস কল। বাঘের বাচ্চা ও শিকার করা হচ্ছে, বেশ কিছুদিন পূর্বে সুন্দরবনের অভ্যন্তর হতে চোরা শিকারীরা বাঘের বাচ্চা শিকার করে পরবর্তিতে জনবহুল এলাকায় আইন শৃংখলা বাহিনীর হাতে বাঘের বাচ্চা সহ শিকারী চক্র আটক হয়। বন হতে বাঘ শিকার হচ্ছে বিষয়টি কতটুকু দুঃসাহসিক এবং অনভিপ্রেত সে অপেক্ষা অধিকতর উদ্বেগের বিষয় বন বিভাগের দায়িত্বহীনতা। কয়েকবছর পূর্বে কথা, বন খেকো ওসমান গনি কথাই বলতে হয় এবং স্মরন করতে হয় বন অভ্যন্তরে, বন বিভাগে তাহলে বন খেকো ওসমান গনিদের প্রেতাত্বাদের অবস্থান সক্রীয়। সুন্দরবনের সর্বত্র অপরূপ সৌন্দর্য্যরে বিকিরন ছড়িয়ে চলা হরিন। অত্যন্ত অমায়িক, স্পর্শকাতর আর মায়ার প্রতিক হরিন শিকার আজকের নয়, এক শ্রেনির সৌখিন শিকারীরা হরিন শিকারে উৎসবে মেতে ওঠার ধারাবাহিকতা বর্তমান সময় গুলোতেও বহমান। হরিন শিকারের ক্ষেত্রেও সনাতন পদ্ধতির পাশাপাশি আধুনিক পদ্ধতির ¯েপ্র, গ্যাস ট্যাবলেট, কারেন্ট জাল সহ নানান ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করে চলেছে। সুন্দরবন সত্যিকার অর্থে সুন্দর নেই আর এই ধারা অব্যাহত থাকলে আমাদের সুন্দরবন কেবলমাত্র স্মৃতি এবং ইতিহাসের অংশ হিসেবে পরিচিতি পাবে। সুন্দরবন অভ্যন্তরে বহু শাখা নদী ও খাল বিধৌত। এক শ্রেনির মৎস্য আহরন কারীরা নির্বিচারে ছোট বড় সব ধরনের মৎস্য নিধন করায় বিরূপ প্রভাব পড়ছে সুন্দরবন কেন্দ্রীক মৎস্য সম্পদে। সুন্দরবনের অভ্যন্তরে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত বনজীবিদের ভাষ্য মতে বন অভ্যন্তরের ছোট ছোট খাল ও জলাশয়ে বিশ দিয়ে মৎস্য শিকার করার প্রবনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় রেনুপোনার বিস্তর ঘটানোর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। জীব বৈচিত্র্যের অন্যতম পাথেয় বনবিড়াল, বানর, কচ্ছোপ, কাকড়া, নানান প্রজাতির পাখি শিকার ও নিধন চলছে তো চলছেই। সুন্দরবন আমাদের অস্তিত্ব, অহংকার, সম্মান, মর্যাদা আর রক্ষা কবচ, বিধায় সুন্দরবনকে সুন্দর রাখতে হবে। ভাল রাখতে হবে। আর তবেই না আমাদের প্রানের স্পন্দন, বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ম্যানগ্রোভ আলোছড়াবে, বেঁচে থাকবে। সুন্দরবন রক্ষায় দায়িত্বশীলদের দায়িত্বশীলতায় অবতীর্ণ হতে হবে। বন রক্ষায় নিয়োজিতরা যদি মনে করেন তারা তাদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পবিত্রতার সাথে পালন করবেন তাহলে কোন ভাবেই সুন্দরবনের সামান্যতম ক্ষতি, বলা যায় এক ফোটা পানিও কেউ নিতে পারবে না।