পাটকেলঘাটা প্রতিনিধি \ পাটকেলঘাটার ধানদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এক কমিটি দিয়ে চলছে ১০ বছরেরও অধিক সময়। দলীয় কার্যক্রমে একেবারে নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েছে পুরনো কমিটির নেতৃত্ব। ফলে তীব্র হতাশায় ভুগছেন দলীয় কর্মীরা। নেতৃত্বের ব্যর্থতায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভরাডুবি ঘটেছে আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাটি ধানদিয়ায়। তালা উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৪ হাজার ৭শ’ ৭১ ভোট পেয়ে প্রথমবারের মতো চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন বিএনপি সমর্থিত জাহাঙ্গীর আলম। সেবার আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সন্তোষ কুমার বিশ^াস গরুর গাড়ী প্রতিকে ভোট পান ৩ হাজার ৬শ’ ৬২ ভোট। এর আগে ২০০১ সালে সন্তোষ কুমার বিশ^াস ধানদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। নির্বাচন অফিস সূত্রে আরও জানা যায়, ২০১৬ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে ৭ হাজার ২শ’ ৯০ ভোট পেয়ে জাহাঙ্গীর আলম দ্বিতীয়বারের মতো চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। অপরদিকে নৌকা প্রতীকে সন্তোষ কুমার বিশ^াস পান ৫ হাজার ৪শ’ ৪৭ ভোট। তবে সর্বকালের রেকর্ড ভেঙে ২০২১ সালের নির্বাচনে মাস্টার শহিদুল ইসলাম মাত্র ১ হাজার ২শ’ ৮০ ভোট পেয়ে পরাজিত হন। এদিকে, ২০০৬ সালে সবশেষ ধানদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটি গঠিত হয়। কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান যথাক্রমে সহিদুল ইসলাম ও মাস্টার সহিদুল ইসলাম। তবে তারা এখন পুরোপুরি নিস্ক্রিয়। দলীয় কোন ধরণের কার্যক্রম দেখা যায়না ধানদিয়া ইউনিয়নে। এছাড়া বিএনপি নেতাদের সাথে আতাত করে চলেন আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা। ।নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একাধিক কর্মী জানান, সভাপতি সহিদুল ইসলাম ওরফে সহিদুল মেম্বর বয়সের ভারে ন্যুজ। বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভূগছেন তিনি। আর মাস্টার সহিদুল ইসলাম পরাজয়ের পর চুপসে গেছেন। ইউনিয়নে তার পরাজয়েও রয়েছে নানা সমালোচনা। ইউনয়ন আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল,ব্যক্তি হিসেবে তাকে অধিকাংশের পছন্দ না হওয়া,নেতা-কর্মীদের সাথে ভালো আচরণ না করাসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। স্থানীয় একাধিক নেতা-কর্মী অভিযোগ করেন, গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকাকে বিক্রি করে দিয়েছিলেন মাস্টার শহিদুল ইসলাম। নিজে নৌকার প্রার্থী হয়েও নির্বাচনের আগের দিন তিনি অনেক ভোটারকে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীকে ভোট দিতে উৎসাহিত করেছিলেন। নতুন কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক হতে চান একাধিক ব্যক্তি। নতুন যে সকল ব্যক্তির নাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে উচ্চারিত হচ্ছে,তারা হলেন পাঁচপাড়া গ্রামের মাসুম বিলাাহ,ধানদিয়ার মিলন মেম্বর ও সেনেরগাঁতী গ্রামের মাস্টার কামরুল ইসলাম। তবে সভাপতি পদে সন্তোষ বিশ^াস ছাড়া অন্য কারো নাম তেমন উচ্চারিত হচ্ছেনা। ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাসুম বিলাহ জানান,আমার পরিবার বা পাড়ার সবাই পরীক্ষিত আওয়ামী লীগ সমর্থক। আমি দীর্ঘদিন ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিয়েছি। তাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটিতে আমাকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করলে আমি আওয়ামী লীগকে পুনরজ্জীবিত করতে পারব। সন্তোষ বিশ^াসের বিষয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অভিমত,তিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সাতক্ষীরা সিটি কলেজের সাবেক এই অধ্যাপক আর্থিক ও সামাজিকভাবে বেশ প্রতিষ্ঠিত। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার পরাজয় ও নতুন কমিটি বিষয়ে অধ্যাপক সন্তোষ কুমার বিশ্বাস জানান, দীর্ঘ দিন ধরে একই কমিটি থাকায় নেতাকর্মীরা হতাশ। সভাপতি ও সাধারণ ইচ্ছে মত চলেন। কমিটিতে কারা আছে সেটাও অনেকে জানেন না। এর ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে। আমি মনে করি, আগামী নির্বাচনের আগে এই কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে নতুন কমিটি করা উচিত। এতে দলীয় সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি পাবে ও নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলীয় কর্মসূচীতে সক্রিয়তা বৃদ্ধি পাবে। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ডাঃ সহিদুল ইসলাম বলেন, দলীয় কার্যক্রম ঠিক থাকলেও ভোটের সময় নেতা কর্মীরা নৌকার পক্ষে না থেকে বিরোধিতা করে। যার কারণে বারবার নৌকা পরাজিত হয়। নির্বাচনে খুবই কম ভোটপাওয়া বিষয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাস্টার শহিদুল ইসলাম বলেন, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের দলীয় কোন্দল, একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী সর্বপরি দলের কর্মীরা নিষ্ক্রিয় থাকার কারণে এমন বিপর্যয় হয়েছে। ইউনিয়নে সাংগঠনিক দূর্বলতার কথা অকপটে স্বীকার করেন তিনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের বারবার নির্বাচিত সভাপতি শেখ নুরুল ইসলাম বলেন আমাদের ভিতরে একটু ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। সেটা উপেক্ষা করে ধানদিয়ায় আবার নতুনভাবে কমিটি দেওয়ার জন্য আমরা ইতিমধ্যে আলোচনা শুরু করেছি। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সনৎ ঘোষ বলেন, তালা উপজেলায় আওয়ামী লীগের দলীয় ক্রোন্দল নেই। তবে প্রার্থী অপেক্ষাকৃত দূর্বল ও কর্মীরা নিষ্ক্রিয় থাকায় ধানদিয়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচনে পরাজয় হয়েছে।