এফএনএস: দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মতো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে ক্যাডার সার্ভিসের মাধ্যমে সব কর্মকর্তা নিয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, সরকারকে দ্রুততম সময়ে বিচার বিভাগে যে প্রক্রিয়ায় বিচারক নিয়োগ হয়, সেই প্রক্রিয়ায় দুদকের সব কর্মকর্তা নিয়োগের মাধ্যমে একটি নিয়মতান্ত্রিক ক্যাডার সার্ভিসে পরিণত করা উচিত। একই সঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের আপিল বিভাগ এবং হাইকোর্ট বিভাগের সুনাম ও দক্ষতাসম্পন্ন সাবেক বিচারপতিদের থেকে নিয়োগ দেওয়ার পরামর্শ দেন হাইকোর্ট। বুধবার পাঁচ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার মামলায় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির টেকনিশিয়ান আবদুর রহিমকে দেওয়া সাজার রায় বাতিল করেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক বেঞ্চ সাজা বাতিল করে ঘোষিত রায়ে এসব কথা বলেন। গতকাল শনিবার সংশ্লিষ্ট কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আশেক মোমেন এ তথ্য জানান। রায়ে আদালত বলেছেন, সার্বিক পরিস্থিতিতে এটি অত্র আদালতের নিকট স্পষ্ট প্রতীয়মান যে, দুদক হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে ৫০০ বা ৫০০০ (পাঁচশো বা পাঁচ হাজার) টাকার অতি সাধারণ দুর্নীতির পেছনে জনগণের লাখ লাখ টাকা ব্যয় করছে। পত্র-পত্রিকায় এটি দেখা যাচ্ছে যে, পাঁচ হাজার টাকার একটি মোকদ্দমার জন্য দুদকের পাঁচ লাখ টাকা থেকে শুরু করে ২০ লাখ টাকার মতো খরচ হয়। এখন জনগণের কষ্টের টাকা এ পাঁচ হাজার টাকার একটি দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য মামলা দায়ের থেকে আপিল বিভাগ পর্যন্ত ৮-১০ লাখ টাকা ব্যয় করা কতটুকু সমীচীন তা নিয়ে প্রশ্ন রেখেছেন আদালত। আদালত বলেন, যেখানে পত্র-পত্রিকা এবং ইলেট্রনিক মাধ্যমে আমরা দেখি, হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হচ্ছে এবং হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হচ্ছে। সুতরাং দুর্নীতি দমন কমিশনকে এ মর্মে নির্দেশনা প্রদান করা যাচ্ছে যে, আজ থেকে দুর্নীতি দমন কমিশন শুধুমাত্র ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্সির ১-২৫ পর্যন্ত এ ধরনের সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রথমে শুধুমাত্র অনুসন্ধান এবং তদন্ত করবেন। এরপর ব্যাংক পরিচালক, ব্যাংকের মালিক, ব্যাংকের এমডি, ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং ব্যাংকের সিইওদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধান এবং বড় আন্তর্জাতিক ক্রয়াদেশসহ গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রের সবচেয়ে অতি গুরুত্বপূর্ণ হাজার হাজার কোটি টাকা যেখানে সম্পৃক্ত, সেসব মামলা মোকদ্দমা প্রথম বিবেচনায় আজ থেকে দুদক তদন্ত করবে বলেও রায়ে উলেখ করেন হাইকোর্ট। রায়ে আরও বলা হয়, ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্সির এক থেকে সর্বশেষ এবং ওপরে নির্দেশিত ব্যাংক পরিচালকসহ এই যে দুর্নীতি যখন সম্পূর্ণভাবে ওখানে আর কোনো অভিযোগ এবং দুর্নীতির কোনো আলামত পাওয়া না যাবে, তখন একমাত্র সেক্ষেত্রে দুদক এ ধরনের লোকের (ক্ষুদ্র কর্মচারী) বিরুদ্ধে মামলা মোকদ্দমা অনুসন্ধান গ্রহণ এবং দায়ের করবে। ওপরের নির্দেশনা দুদককে এখন থেকেই অনুসরণ করতে হবে।