এফএনএস: রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনের দিন যতই গড়াচ্ছে ততই বাড়ছে উত্তাপ। দিনভর প্রচার-প্রচারণায় মুখর নগরীর পাড়া-মহলা থেকে অলিগলি। ভোটযুদ্ধের আগে বাগযুদ্ধে সরব প্রার্থীরা। কেউবা দিচ্ছেন উন্নয়নের প্রতিশ্র“তি, আবার কেউ দেখাচ্ছেন আধুনিক মডেল নগরী গড়ার স্বপ্ন। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। সমানতালে চলছে প্রচারণা। মেয়র পদে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের দুই প্রার্থী ছাড়াও অন্যান্য দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আরও সাতজন অংশ নিচ্ছেন এবারের নির্বাচনে। গতকাল বুধবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত নগরীর শাপলা চত্বর, গ্র্যান্ড হোটেল মোড়, সালেক মার্কেট, শাহ জামাল মার্কেট, সালেক পাম্প ও জীবনবীমা এলাকায় গণসংযোগ করেছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী সদ্য সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। এসময় মোস্তফা বলেন, বিগত দিনের কর্মকাণ্ড ও দুঃসময়ে পাশে থাকা বিষয়গুলোকে মূল্যায়ন করে মানুষ লাঙল প্রতীকে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত থেকে তাদের ফেরানোর উপায় নেই। তিনি বলেন, জনমানুষের ঢল ও উচ্ছ¡াস দেখে বোঝা যাচ্ছে আগামী ২৭ ডিসেম্বরের নির্বাচনটি একতরফা হতে যাচ্ছে। বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ৯৮ হাজার ৬০০ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করার রেকর্ড ভঙ্গ করে এবার নতুন রেকর্ড তৈরি হবে বলে আশা করছি। এদিকে, বিকেলে নগরীর মেডিকেল মোড় এলাকায় মহানগর যুবলীগের আয়োজনে গণসংযোগ করেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া। এসময় ডালিয়া বলেন, রংপুরের মানুষ নৌকা মার্কায় ভোট দিতে উদগ্রীব হয়ে আছে। মানুষ পরিবর্তন চায়। কেননা নগরবাসীর ভাগ্য উন্নয়নের মার্কা নৌকা। ২৭ ডিসেম্বর হবে নৌকা মার্কার বিজয়ের দিন। তিনি বলেন, রংপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ। তাদের সবার সহযোগিতা ও রংপুরের সাধারণ মানুষের দোয়া ও সমর্থন নিয়ে এবার নৌকা মার্কার জয় হবে ইনশা আলাহ। অন্যদিকে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির বাইরে আলোচনায় রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার লতিফুর রহমান মিলন। তিনি রংপুর মহানগরীর আওতাধীন কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে নগরীর বুড়িরহাট এলাকায় গণসংযোগ করেছেন মিলন। এ সময় তিনি বলেন, উন্নয়নের স্বার্থে নগরবাসী পরিবর্তন চায়, এজন্য ভোটের মাঠে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। তৃতীয় মেয়াদে আগামী ২৭ ডিসেম্বর ২২৯টি কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ইভিএমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এবার মেয়র পদে জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-ইনু) শফিয়ার রহমান, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের আমিরুজ্জামান পিয়াল, খেলাফত মজলিশের তৌহিদুর রহমান মণ্ডল রাজু, জাকের পার্টির খোরশেদ আলম খোকন, বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির আবু রায়হান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেহেদী হাসান বনি ও লতিফুর রহমান মিলন প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবেন। ৩৩টি ওয়ার্ড নিয়ে ২০১২ সালের ২৮ জুন গঠিত হয় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রংপুর সিটি করপোরেশন। ওই বছরের ২০ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীক ছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওইসময় এক লাখ ৬ হাজার ২৫৫ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা পেয়েছিলেন ৭৭ হাজার ৮০৫ ভোট। বিএনপি নেতা কাওসার জামান বাবলা পেয়েছিলেন ২১ হাজার ২৩৫ ভোট। ২০১২ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন তিন লাখ ৫৭ হাজার ৭৪২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৭৯ হাজার ১২৮ জন ও নারী ভোটার এক লাখ ৭৮ হাজার ৬১৪ জন। দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বর দলীয় প্রতীকে অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা এক লাখ ৬০ হাজার ৪৮৯ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী আওয়ামী লীগের সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু পান ৬২ হাজার ৪০০ ভোট। বিএনপির প্রার্থী কাওসার জামান বাবলা পেয়েছিলেন ৩৫ হাজার ১৩৬ ভোট। ২০১৭ সালে ভোটার সংখ্যা ছিল তিন লাখ ৯৩ হাজার ৯৯৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৯৬ হাজার ৩৫৬ ও নারী এক লাখ ৯৭ হাজার ৬৩৮ জন। সংরক্ষিত ১১টি ওয়ার্ডে ৬৭ এবং ৩৩টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৭৯ জন কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।