এফএনএস স্পোর্টস: ঢাকা টেস্টে ভারতের বিপক্ষে জয়ের প্রত্যাশা নিয়ে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ব্যাটিং ব্যর্থতায় অস্বস্তির কাঁটা নিয়েই প্রথম দিন শেষ করতে হয়েছে। পুরনো ‘গল্পই’ রচিত হয়েছে মিরপুরের ২২ গজে। ব্যাটারদের ব্যর্থতার এই গল্প যেন শেষ হওয়ার নয়। সাকিব, লিটন, মুশফিক, সোহানদের ব্যর্থতার মিছিল চলছেই। তাদের ব্যর্থতায় বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস থেমেছে মাত্র ২২৭ রানে। শেষ বিকালে ভারতের ব্যাটারদের বিপক্ষে ৮ ওভার বোলিং করেও সাফল্য পায়নি স্বাগতিক বোলাররা। শুক্রবার ২০৮ রান পিছিয়ে থেকে ভারত দ্বিতীয় দিন শুরু করবে। ‘আপনি টস জিতলেন, যদি ব্যাটিংয়ের সুযোগ পান তাহলে ৩৫০-৩৮০ রান করতে হবে। প্রথম ইনিংসের মূল্য কতটা তা নিশ্চয়ই আমরা বুঝতে পারছি। উইকেট শুষ্ক। এজন্য আপনাকে অবশ্যই প্রথম ইনিংসে ভালো অবস্থানে থাকতে হবে’- কথাগুলো পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ডের। টেস্ট শুরুর আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে এভাবেই কথা বলেছিলেন তিনি। কিন্তু টস জিতে ম্যাচের অনেকখানি হাতে পাওয়া সাকিবরা খামখেয়ালিপনায় সেই সুযোগটুকুও হেলায় হারালেন। ৩৮০ রান তো দূরের পথ, আড়াইশ’ও পার করতে পারেননি লিটন-মুশফিকরা। অথচ দলের বেশিরভাগ ব্যাটারই দারুণ শুরু পেয়েছিলেন। থিতু হয়ে আউট হয়ে গেছেন বাজে শট সিলেকশনে। টস জয়ের পর দুই ওপেনার জাকির-শান্ত মিলে দারুণ প্রতিরোধ গড়েছিলেন। ১৪ ওভার পর্যন্ত কোনো সুযোগই দেননি ভারতীয়দের। ১৫তম ওভারের শেষ বলে উনাদকাটের বাড়তি বাউন্সের বলে কাট করতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন জাকির। গ্লাভস ছুঁয়ে বল চলে যায় স্লিপে। তাতে ৩৯ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে তার বিদায়ে। প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরি করা এই ব্যাটার ৩৪ বলে ১৫ রান করেছেন। পরের ওভারে অশ্বিনের বলটি ঠিকমতো বুঝতে পারেননি শান্তও। পা বাড়িয়ে ডিফেন্ড করেছিলেন। লেগ বিফোরের আবেদনে আম্পায়ার আঙুলও তুলে দেন। পরে রিভিউ নিয়েও শান্ত বাঁচতে পারেননি। জাকিরের পর ফেরা শান্ত ২৪ রান করতে পেরেছেন। ৪ বলের ব্যবধানে দুই ওপেনারকে হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ। প্রাথমিক সেই বিপর্যয়ে থেকে দলকে উদ্ধার করার চেষ্টা করেন লম্বা সময় ধরে ফর্মহীন মুমিনুল হক। অনেক দিন পর চার নম্বরে নামা সাকিবকে সঙ্গে নিয়ে লাঞ্চ বিরতিতে যান তারা। কিন্তু লাঞ্চ থেকে ফিরে এসে প্রথম বলেই দায়িত্বহীনতার পরিচয় দেন অধিনায়ক সাকিব। উমেশ যাদবের লেংন্থ বল মিডউইকেটের উপর দিয়ে খেলতে গিয়েছিলেন। বল চলে গেছে সোজা পূজারার হাতে। বাজে শট সিলেকশনে সাকিবের সম্ভাবনাময় ইনিংসেরও সমাপ্তি ঘটে। তাদের ৪৩ রানের জুটি ভাঙলে মুশফিকুর রহিম, লিটন দাসও জুটি গড়ে মুমিনুলকে সঙ্গ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু খুব বেশি সতর্ক না হওয়ায় দ্বিতীয় সেশনে উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন তারা। মিডল অর্ডারে দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটার মুশফিক-লিটনও প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে চায়ের বিরতির ৬ মিনিট আগে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছিলেন লিটন। উইকেটকিপার এই ব্যাটারের উইকেট কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটি বোঝাতে বিরাট কোহলি, জো রুট, স্টিভেন স্মিথ অথবা মারনাশ লাবুশানের সঙ্গে তুলনা করে থাকেন ডমিঙ্গো। হেড কোচ তাই আশা করেছিলেন লিটন নিজের এই ভুল বুঝতে পারবেন! কিন্তু ঢাকায় দ্বিতীয় টেস্টেও একই লিটনকে পাওয়া গেলো। চা বিরতির ২৪ মিনিট আগে মুমিনুলের সঙ্গে ৪২ রানের জুটি গড়ে ফ্লিক করতে গিয়ে বল তুলে দেন বাতাসে। মিডউইকেটে রাহুলের সহজ ক্যাচে পরিণত হয়ে ২৫ রানে ফিরতে হয়েছে তাকে। লিটনের আগে উনাদকাটের বল বুঝতে না পেরে আউট হয়েছেন মুশফিক। বল ব্যাটের কানায় লেগে জমা পড়ে কিপারের গ্লাভসে। আউট হওয়ার আগে মুশফিক মুমিনুলের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৪৮ রানের জুটি গড়েন। মিডল অর্ডারে এই দুই ব্যাটার ফিরে যেতেই মূলত বাংলাদেশের বড় স্কোরের সম্ভাবনার মৃত্যু ঘটে। অবশ্য প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের স্বস্তির খবর ছিল একটি। লম্বা সময় ধরে রান খরায় ভুগতে থাকা মুমিনুল হক রানের দেখা পেয়েছেন। দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির মালিক কিন্তু সর্বশেষ দুই টেস্টে একাদশের বাইরে ছিলেন। ঢাকা টেস্টেও জায়গা পাওয়ার কথা ছিল না। পাক্কা ২০ মাস ধরে ব্যাটে রান নেই তার। সেই মুমিনুল বৃহস্পতিবার মিরপুরের ২২ গজে রাজত্ব করেছেন। ১২ ইনিংস পর তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের ১৬তম হাফসেঞ্চুরি। ২২ ইনিংস আগে সেঞ্চুরির দেখা পাওয়া মুমিনুল সেই পথেও এগিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সঙ্গীর অভাবে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ নড়ে যায় তার। আউট হওয়ার আগে খেলেছেন ৮৪ রানের অসাধারণ একটি ইনিংস। তার এই ইনিংসের ওপর দাঁড়িয়েই বাংলাদেশ কোনো রকমে ২২৭ রানের সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছে। ভারতীয় বোলারদের মধ্যে উমেশ যাদব ও রবিচন্দ্রন অশ্বিন থ্রেট হয়ে উঠছিলেন। দুজনই চারটি করে উইকেট নিয়েছেন। ১২ বছর পর টেস্ট দলে ফেরা জয়দেব উনাদকাট দুটি উইকেট নিয়েছেন। বাংলাদেশকে অলআউট করে শেষ বিকালে ভারত ৮ ওভার ব্যাটিং করেছে। বাংলাদেশের বোলাররা বেশ কয়েক বার সুযোগ তৈরি করলেও শেষ পর্যন্ত অবিচ্ছিন্ন থেকে ড্রেসিংরুমে ফিরেছেন সফরকারী দুই ওপেনার। লোকেশ রাহুল (৩) ও শুভমান গিল (১৪) রান নিয়ে ব্যাটিং করছেন। এমন অবস্থায় কোনোভাবেই স্বস্তিতে থাকার সুযোগ নেই স্বাগতিকদের। কারণ, দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনটি নিজেদের করে নিতে না পারলে দ্বিতীয় দিনেই হার চোখ রাঙাতে পারে! প্রথম দিন শেষে সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ৭৩.৫ ওভারে ২২৭ (মুমিনুল ৮৪, মুশফিক ২৬, লিটন ২৫, শান্ত ২৪; উমেশ ৪/২৫, অশ্বিন ৪/৭১, উনাদকাট ২/৫০)। ভারত প্রথম ইনিংসে ৮ ওভারে ১৯/০ (রাহুল ৩*, শুভমান ১৪*)।