## নিবন্ধনের একটি শর্ত ঘাটতি থাকলে নিবন্ধন পাবে না ## সেচ্ছায় আবেদন বাতিল চেয়েছে দুইটি দল
জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে \ আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্ব›দ্বীতায় অংশ নিতে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা সব কয়টি রাজনৈতিক দলই অসম্পূর্ণ তথ্য দিয়ে জমা দিয়েছিল নির্বাচন কমিশনে (ইসি)। কমিশনের তথ্য যাচাই কমিটি প্রাথমিক বাছাইয়ে এমনই তথ্য পেয়েছে। ইতিমধ্যে কিছু দলকে অযোগ্য বিবেচনায় বাতিল করা হয়েছে। তথ্যে কিছু ঘাটতি থাকায় কয়েকটি দলকে অসম্পূর্ণ তথ্য দিতে ফের চিঠি পাঠানোর বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়াও দুটি রাজনৈতিক দল সেচ্ছায় আবেদন প্রত্যাহার চেয়ে পত্র দিয়েছে কমিশনকে। তবে ইসি বলছে, নিবন্ধনের জন্য একটি শর্ত অপূর্ণ রেখে কোনো দলকে নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন দেবে না। এটা কঠোরভাবে তদারকি করা হবে কমিশন থেকে। খবর ইসির নিবন্ধন শাখা সূত্রের। সূত্রমতে, নতুন আবেদন করা ৯৩টি দলের মধ্যে মধ্যে আবেদন ফরম পূরণে ত্র“টি ও চালানে অসঙ্গতি থাকায় ১৪টি দলকে বাতিল তালিকায় ফেলেছে ইসি। বাকি ৭৭টি দলকে নিবন্ধনের শর্তপূরণ সাপেক্ষে পুনরায় চিঠি দেয়া হচ্ছে। চিঠি প্রাপ্তির পর ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে ইসিকে সহায়তা করবেন তারা। আর সেচ্ছায় নিবন্ধন আবেদন বাতিলা চাওয়া দল দুটি হচ্ছে, – ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা কল্যাণ পরিষদ। জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ এ প্রসঙ্গে বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন দল হিসেবে প্রায় একশটি দল আবেদন নিবন্ধন পেতে আবেদন করেছিল। আবেদন করা দলের সংখ্যা ৯৩টি। এসব দলগুলোর তথ্য যাচাই করার জন্য আমরা বাছাই কমিটি করে দিয়েছিলাম। কমিটি আমাদের কাছে যে তথ্য দিয়েছে সেটা কিছুটা বিস্মিত হওয়ার মতো। কারণ ৯৩টি দলই অসম্পূর্ণ তথ্য দিয়ে আবেদন করেছে। কিছু দল আবেদন ফরমও পূরণ করতে পারেনি। আবেদনের যে চালান দিয়েছে দেখা গেছে সেখানেও অসঙ্গতি। তাই ১৪টি দলকে প্রাথমিক বাছাইকে অযোগ্য ঘোষনা করা হয়েছে। বাকি দলগুলোকে শর্ত পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে ফের চিঠি দেয়া হচ্ছে। আবার দুটি দল সেচ্ছায় আবেদন বাতিল করার জন্য আবেদন করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যথার্থ প্রক্রিয়ায় আবেদন করতে না পারা ও চালানে অসঙ্গতির জন্য বাতিল করা ১৪টি দল হচ্ছে, – মুসকিল লীগ; বঙ্গবন্ধু দুস্থ ও প্রতিবন্ধী উন্নয়ন পরিষদ; বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক মুক্তি আন্দোলন (বিজিএমএ); বৈরাবরী পার্টি; বাংলাদেশ বিদেশ প্রত্যাগত প্রবাসী ও নন প্রবাসী কল্যাণ দল; বাংলাদেশ জনমত পার্টি; বাংলাদেশে ডেমোক্রেসি মুভমেন্ট (বিডিএম); নতুন ধারা বাংলাদেশ-এনডিবি; মুক্তিযোদ্ধা কমিউনিজম ডেমোক্রেটিক পার্টি; ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী ন্যাপ); সাধারণ জনতা পার্টি (জিপিপি); জাতীয় ইসলামী মহাজোট; বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ; এবং স্বদেশ কল্যাণ কর্মসূচি। তথ্য চেয়ে পুনরায় চিঠি দেয়া ৭৭ দল হচ্ছে, নাগরিক ঐক্য; বাংলাদেশ ইত্যাদি পার্টি; নৈতিক সমাজ; বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা লীগ; বাংলাদেশ ন্যাশনাল রিপাবলিকান পার্টি; নতুন বাংলা; বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক পার্টি (কেএসপি); বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি (বিআরপি); প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক জোট (পিডিএ); বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি; বাংলাদেশ আম জনতা পার্টি ও বাংলাদেশ তৃণমূল জনতা পার্টি (বাংলাদেশ টিজেপি), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম; সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদ; বাংলাদেশ এলডিপি; বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টি; বাংলাদেশ ন্যাশনাল গ্রিন পার্টি; বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি; বাংলাদেশ সর্বজনীন দল; গণরাজনৈতিক জোট-গর্জো; বাংলাদেশ বেকার সমাজ; জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলামী পার্টি; , বাংলাদেশ হিন্দু লীগ; বাংলাদেশ জাতীয় দল; জাতীয় জনতা পার্টি; বাংলাদেশ তৃণমূল লীগ; বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএনডিপি); কৃষক শ্রমিক পার্টি ( কেএসপি); ভাসানী অনুসারী পরিষদ; নাকফুল বাংলাদেশ; মুক্ত রাজনৈতিক আন্দোলন; বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পাটি, বাংলাদেশ হিউম্যানিস্ট পার্টি-বিএইচপি; বাংলাদেশ তৃণমূল কংগ্রেস; যুব স্বেচ্ছাসেবক লীগ; ন্যাপ (ভাসানী); বাংলাদেশ ইসলামিক গণতান্ত্রিক লীগ; , বাংলাদেশ জাতীয় লীগ; বাংলাদেশ মাইনরিটি পিপলস পার্টি; বাংলাদেশ জাতীয় বঙ্গ লীগ; রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন; বাংলাদেশ সনাতন পার্টি; বাংলাদেশ জনতা পার্টি (বিজেপি); জনতার অধিকার পার্টি (পিআরপি); বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা লীগ; বাংলাদেশ লেবার পার্টি; বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি); জনস্বার্থে বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জাতীয় ইনফাস পার্টি; ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি); বাংলাদেশ মানবতাবাদী দল; বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট গ্রিন পার্টি; বাংলাদেশ গণআজাদী লীগ; বাংলাদেশ ইউনাইটেড ইসলামিক পার্টি; মুক্তিযোদ্ধা যুব কমান্ড; গণঅধিকার পার্টি; বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি; বাংলাদেশ পিপলস পার্টি-বিপিপি; বাংলাদেশ গরিব পার্টি, জাতীয় লীগ; বাংলাদেশ লেবার পার্টি; বাংলাদেশ ফরায়েজী আন্দোলন; বাংলাদেশ শ্রমজীবী পার্টি; বাংলাদেশ সৎ সংগ্রামী ভোটার পার্টি; বাংলাদেশ জনতা পার্টি; ডেমোক্রেটিক পার্টি; বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী গ্রুপ); জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ-শাজাহান সিরাজ); বাংলাদেশ জাতীয় লীগ (বিজেএল); জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টি; বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএলডিপি) এবং ফরওয়ার্ড পার্টি। এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, কোনো দলের একটি শর্তও যদি অপূর্ণ থাকে ওই দলকে নিবন্ধন দেওয়া হবে না। শর্ত পূরণের ক্ষেত্রে এক শতাংশ কম থাকলেও নিবন্ধন পাবে না। যে কোনো দলের জন্য এটা প্রযোজ্য; যোগ করেন এই কমিশনার। তিনি জানান, নতুন দল হিসেবে নিবন্ধিত হতে হলে একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দেশের কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কমিটি এবং সদস্য হিসেবে অন্তত ১০০টি উপজেলা/মহানগর থানায় প্রত্যেকটিতে কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থন সম্বলিত দলিল থাকার শর্ত পূরণ করতে হবে। প্রসঙ্গত, এক-এগারো সেনা সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্বের পর পুনগর্ঠিত এটিএম শামসুল হুদার কমিশন প্রথম নিবন্ধনের প্রথা চালু করেছিল। সে সময় শতাধিক দল থেকে সব শর্ত পূরণ করে মাত্র নিবন্ধনের যোগ্য হয়েছিল মাত্র ৪৪টি। নানা কারণে ৫টি দলের নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় বর্তমানে দলের সংখ্যা ৩৯টি দল। শর্তসাপেক্ষে নিবন্ধন পেলেও স্থায়ী সংশোধিত গঠনতন্ত্র দিতে না পারায় ২০০৯ সালে ফ্রিডম পার্টির নিবন্ধন বাতিল হয়। দশম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন আদালত অবৈধ ঘোষণা করে। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে গেজেট প্রকাশ করা হয়; সেখানে বলা হয়, আদালত জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করায় আরপিও অনুযায়ী দলটির নিবন্ধন বাতিল করা হলো।