সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:৫৭ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
শুল্কমুক্ত সুবিধায় হাজার হাজার টন চাল আমদানিতেও বাজারে প্রভাব পড়েনি বিএনপির মহাসচিবের সঙ্গে ইইউ রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ শীতজনিত রোগীর চাপ রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি হাসপাতালে বাড়ছে সাতক্ষীরা পৌর—মেয়রের বরখাস্তের আদেশ অবৈধ: হাইকোর্ট স্কুল থেকে ফেরার পথে ট্রেনে কাটা পড়ে শিশুর মৃত্যু সম্মেলনকে কেন্দ্র করে কিশোরগঞ্জে দুই পক্ষের সংঘর্ষে বিএনপি নেতা নিহত মোবাইল—ইন্টারনেটে কর প্রত্যাহার না হলে এনবিআর ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি ভারত থেকে এলো ২৭ হাজার মেট্রিক টন চাল টিউলিপের উচিত ক্ষমা চাওয়া: ইউনূস বিজিবি—জনগণ ‘শক্ত অবস্থান’ নেওয়ায় ভারত পিছু হটেছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের অভিমত \ শীত চলে যায়নি ফের শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বুধবার, ১১ জানুয়ারী, ২০২৩

## দ্রুত সূর্য উঠায় রাজধানীতে দিনে গরম অনুভূত হচ্ছে
জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে \ গত কয়েকদিনে হাঁড়-কাঁপানো শীতের মধ্যে মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) রাজধানী ঢাকায় দিনের বেলায় হঠাৎ গরম অনভূত হয়েছে। এতে মানুষের মধ্যে এক ধরণের স্বস্তি পেতে দেখা গেছে। তবে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা স্বাভাবিক। শীত এখনো চলে যায়নি। চলতি মাসেই আরো দু-একটি শৈত্য-প্রবাহ দেখা দিতে পারে। আর রাজধানীতে আকর্ষিক গরম পড়ার কারণ সূর্যের আলোটি সকাল ৯টার মধ্যে উদিত হওয়া। দীর্ঘসময় ধরে সূর্যের আলো অব্যাহত থাকা। এর ফলে কর্মজীবীসহ সাধারণ মানুষ ঘর থেকে বাইরে বের হয়েছেন। এ ছাড়া শহরকেন্দ্রীক বিশাল বিশাল অট্ট্রালিকা ও যানবহনের অতিমাত্রায় চলাচলের কারণে দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেড়ে যাওয়ায় দিনে গরম অনুভূত হচ্ছে। তারা বলছেন, রাজধানীতে গরম অনুভূত হলেও দেশের উত্তরাঞ্চল-পশ্চিমাঞ্চলে এখনো তীব্র শীত রয়েছে। কারণ পৌষ-মাঘ এই দুইমাস শীতকাল। গত কয়েক বছর এ সময়ে শীত কম ছিল। চলতি বছরে উত্তর গোলার্ধ সূর্যের কাছাকাছি অবস্থান করায় এ অঞ্চলে তীব্র শীত দেখা দিয়েছে, – যা স্বাভাবিক। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ ড. আবদুল মান্নান বলেন, হঠাৎ তীব্র শীতের মধ্যে সূর্যের কিরণটা দ্রুতসময়ে উঠার কারণে দিনে কিছুটা গরম অনুভূত হচ্ছে। কারণ সূর্যকিরণটা লম্বা সময় পাওয়া যাচ্ছে। এর ফলে তাপমাত্রা ২০ থেকে বেড়ে ২৫ ডিগ্রিতে অবস্থান করছে। এ ছাড়া গত কয়েকদিনে আমরা সর্বনি¤œ তাপমাত্রায় ছিলাম। ফলে কিছুটা স্বস্তিবোধ করছি। আবার শীতের অনুভূতিটা আমরা পারছি না। বলেন, দেশের উত্তরাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলে রাতের তাপমাত্রা আগের তুলনায় কমেছে। কিন্তু শীতের অনুভূতি কমবে না। শুধু রাজধানীসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে সকাল ৯টার মধ্যে সূর্য উঠছে। মানুষ কাজের প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হচ্ছে। এতে সূর্যের তাপমাত্রা বেশি পাচ্ছে। যার কারণে মানুষের শরীর থেকে শীতের অনভূতি কমে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এই পরিস্থিতির মধ্যে কোন ব্যক্তি যদি মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত ঘরের বাইরে অবস্থান করেন, তাহলে শীতের তীব্রতা তিনি হাড়ে হাড়ে টের পাবেন। এছাড়া রাতের তাপমাত্রা আরও কয়েকদিন কমবে। সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাবে। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের তুলনায় ঢাকার চিত্র কিছুটা ভিন্ন থাকবে। এখানে শহরকেন্দ্রীক উঁচু দালালকোঠা, যানবহনের চাপের সঙ্গে মানুষের ঘন-বসতির কারণে এই পরিস্থিতি হয়ে থাকে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাওসার পারভীন বলেন, বড় মাত্রার একটি কুয়াশা পাকিস্তান, ভারত ও বিহার-উড়িষ্যা হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল। এটা গত কয়েকদিন ধরে বিরাজ করছে। এর ফলে দিনের বেলায় সূর্যের আলো পৃথিবীতে পড়েনি। দিনের বেলা ঘন-কুয়াশার কারণে বাতাসের আদ্রতা বেড়ে যাওয়ায় চরম শীতে জুবুথুবু অবস্থা তৈরি হয়েছিল। এর প্রভাব পড়েছিলো রাতেই। ফলে দিনে-রাতেই কনকনে ঠান্ডা ছিল। হঠাৎ কেন গরম পড়ছে; শীত কি চলে গেছে জানতে চাইলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের এই উপ-পরিচালক বলেন, শীত এখনো চলে যায়নি। আগামী ১২ তারিখের মধ্যে দেশের কোথাও কোথাও হালকা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হতে পারে। এর মাধ্যমে আকাশ পরিস্কার হয়ে যাবে। তখন দিনে কিছুটা গরম পড়লেও রাতে ঠান্ডা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, পুরো পৃথিবীতেই জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। এই সময়ে বিরাজ করছে ঘন-কুয়াশা; আর শীতের তীব্রতা গত এক সপ্তাহজুড়ে অবস্থান করছে। এটা অনেক সময় ১৫দিন পর্যন্ত থাকে। এসব নারা কারণে দিনে গরম থাকবে। কিন্তু রাতে শীতের অনুভূত অব্যাহত থাকবে। তিনি আরও বলেন, মধ্য জানুয়ারির পর আরেকটি শৈত্যপ্রবাহ আসবে। এ সময় সূর্যের আলো দিনে দেখা যাবে না। এ কারণে দিনে-রাতে ফের তীব্র শীত অনুভূত হবে। বলা যায়, -পুরো জানুয়ারি মাসজুড়েই এটা চলতে থাকবে। দিনে-রাতে গরম-ঠান্ডার এই তারতম্যের কারণে সর্দি-জ্বর ও ইউমোনিয়াসহ শ্বাসকষ্টজনিত রোগ দেয়া যায়। কারণ কনকনে শীতের কারণে ঠান্ডাটা বুকে বসে যায়। এ বিষয়ে সবাইর উচিত ঠান্ডা দেখা দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল­াহ বলেন, হঠাৎ শীতে একটু বাড়তিই সতর্কতা গ্রহণ করতে হবে। এই সময় সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, সাইনাস, কান ও টনসিলের প্রদাহ বাড়ে। এ জন্য পরিবারের সবার উচিত কুসুম কুসুম গরম পানি খাওয়া। বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক বলেন, পরিবারের কেউ ঠান্ডা-জ্বরে আক্রান্ত হলে অন্যদেরও সাবধান থাকতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের অধ্যাপক আবদুল রব বলেন, পৌষ ও মাঘ এই দুই মাস শীতের মৌসুম, বলা যায় এটা চিরায়ত। গত কয়েক বছরের এ সময়ে শীতের তীব্রতা দেখা যায়নি এটা অস্বাভাবিক (এবনরমাল)। কিন্তু রাজধানী ঢাকায় ১০-১১ ডিগ্রি তাপমাত্রা নরমাল। তবে দেশের কোথাও কোথাও ৬ ডিগ্রি নেমেছিল। উপরে তাপমাত্রা ১৫-২০ ডিগ্রি। এটি খুবই সাধারণ। মূলত শীতটা হয় উত্তর সাইবেরিয়া থেকে হিমালয় হয়ে কাশ্মির -ভারত-পাকিস্তান-পাঞ্জাব-পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। উত্তর গোলার্ধে পৃথিবী সূর্য থেকে দূরে সরে যায়। দক্ষিণ-গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল এবং উত্তর-গোলার্ধে সূর্য কাছাকাছি আসায় আমাদের এখানে শীত অনুভূত হয়। কারণ পৃথিবী সাড়ে ২৩ ডিগ্রি হেলে পড়ায় এসব অঞ্চলে তীব্র শীত অনুভূত হয়। এই অধ্যাপক আরও বলেন, সাইবেরিয়ান থেকে হাওয়াটা আসে এবং এটা উঁচু-নীচুতে নামে তাহলে শীতটা কমে-বাড়ে। সুতারাং এইটা হলো মূল কারণ। বলেন, এখনো শীত চলে যায়নি। আরও দু-একটি শৈত্য-প্রবাহ আসতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com