এফএনএস : দেশে গ্যাসের দাম ৭ মাসের মাথায় আবারো বাড়ানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে শিগগিরই সরকারের নির্বাহী আদেশের ঘোষণা আসতে পারে। এবার মূলত বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্প খাতে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে ভাবা হচ্ছে। সরকারের আবাসিক ও অন্যান্য খাতের গ্রাহকের গ্যাসের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা নেই। গত বছরের ৫ জুন গ্রাহক পর্যায়ে ২২ দশমিক ৭৮ শতাংশ গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছিল। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) জাতীয় গ্রিডে দৈনিক ৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুট তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহের শর্তে সর্বশেষ গ্যাসের দাম বাড়িয়েছিল। বিইআরসি ওই শর্তের ভিত্তিতে পাইপলাইনে সরবরাহকৃত গ্যাসের দাম ৯ টাকা ৭০ থেকে বাড়িয়ে ১১ টাকা ৯১ পয়সা করেছিল। কিন্তু ওই ঘোষণার প্রেক্ষাপটে গ্যাসের দাম বাড়ানো হলেও কখনোই এলএনজি সরবরাহের শর্তটি পূরণ হয়নি। বরং গ্যাসের দাম বাড়ানোর পর আরো তীব্র হয়েছে গ্যাস সঙ্কট। জ¦ালানি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জাতীয় গ্রিডে দৈনিক ৮৫০ ঘনফুট এলএনজির পাশাপাশি ২ হাজার ৩১২ মিলিয়ন ঘনফুট স্থানীয় গ্যাস যুক্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পেট্রোবাংলা ২০২২-২৩ অর্থবছরে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা কার্যকর করলেও জাতীয় গ্রিডে এলএনজি সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুটের কিছু বেশি নির্ধারণ করে। নির্ধারিত লক্ষ্য পূরণ করা যায়নি। কারণ উচ্চমূল্যের কারণে জ¦ালানি বিভাগ গত বছরের জুলাই থেকে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ রেখেছে। তাতে জাতীয় গ্রিডে ৪২০ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে আসে এলএনজি সরবরাহ। আর চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) গ্রিডে এলএনজি সরবরাহের দৈনিক গড় ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুটের কাছাকাছি ছিল। সূত্র জানায়, গত জুনে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সময় সরকারি, আইপিপি ও রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাসের দাম ইউনিটপ্রতি ৪ টাকা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫ টাকা ২ পয়সা করা হয়েছিল। তাছাড়া ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ খাতে ১৩ টাকা ৮৫ থেকে বাড়িয়ে ১৬ টাকা, সার উৎপাদনে ৪ টাকা ৪৫ থেকে ১৬ টাকা, শিল্প খাতে ১০ টাকা ৭০ থেকে ১১ টাকা ৯৮, চা শিল্পে ১০ টাকা ৭০ থেকে ১১ টাকা ৯৩ এবং আবাসিকের মিটারভিত্তিক গ্রাহকের ১২ টাকা ৬০ থেকে ১৮ টাকা করা হয়। তার সঙ্গে আবাসিকে গ্যাসের দাম এক চুলার গ্রাহকের জন্য ৯২৫ থেকে বাড়িয়ে ৯৯০ এবং দুই চুলার জন্য ৯৭৫ থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৮০ টাকা করা হয়। আর চলতি মাসেই ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম। তার মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে আবারো গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হলে তা খাতটির উৎপাদনকারী ও ভোক্তা উভয় পর্যায়েই বড় ধরনের চাপ তৈরি করবে। সূত্র আরো জানায়, বিইআরসি যেসব শর্ত বিবেচনায় নিয়ে গ্যাসের দাম বাড়িয়েছিল, গ্যাস বিতরণ কোম্পানি ও পেট্রোবাংলা তা পূরণ করতে পারেনি। বরং সরবরাহ কমে গিয়ে শিল্প, বিদ্যুৎ থেকে শুরু করে আবাসিকের গ্রাহকরাও গ্যাস সংকটে ভুগছে। এমন পরিস্থিতিতে আবারো গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে তা ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যমান অর্থনৈতিক চাপকে আরো জোরালো করে তুলবে। এদিকে এ প্রসঙ্গে কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলম জানান, জাতীয় গ্রিডে যে পরিমাণ এলএনজি সরবরাহের প্রাক্কলন করে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছিল পেট্রোবাংলা তা দিতে পারেনি। পেট্রোবাংলা ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করেছে। ওই টাকা তারা তাদের রাজস্ব চাহিদার সঙ্গে সমন্বয় করেছে কিনা তা জানা নেই। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সংস্থাটি ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণা করছে। পেট্রোবাংলা নিয়ম ভঙ্গ করে ওসব করছে। অন্যদিকে এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইনস) প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান খান জানান, চলতি অর্থবছরে দীর্ঘমেয়াদি উৎস থেকে ৪০০ মিলিয়ন এবং দাম কমা সাপেক্ষে স্পট এলএনজির ২০০ মিলিয়ন যুক্ত করে মোট ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুটের কিছু বেশি গ্রিডে দেয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু উচ্চমূল্যের কারণে গ্রিডে স্পট এলএনজি দেয়া সম্ভব হয়নি।