কলারোয়া (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি \ সাতক্ষীরার কলারোয়ায় মুজিব শতবর্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রায়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে ভূমিহীনদের জমি ক্রয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, বিগত ২০২২ সালের ১৩ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ০৩, ০২, ০০০০, ৭০১, ০২, ৪৯৮, ২২-৬০৮ নং স্মারকে এক পরিপত্রে উপজেলায় ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের পুনর্বাসনের নিমিত্তে ৬৪ টি পুনর্বাসিত পরিবারের জন্য কলারোয়া উপজেলার ৪ টি মৌজায় ১৩৮.৬০ শতাংশ জমি ক্রয় বাবদ ৭৯ লক্ষ ৩৯ হাজার ৯ শত ৯১ টাকা ও রেজিষ্ট্রেশান বাবদ ৫ লক্ষ ১৯ হাজার ৩ শত ৪০ টাকা প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। কিন্তু ভ‚মিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসনের জন্য জমি সংস্থান সংক্রান্ত নীতিমালা লংঘন করে গৃহ নির্মাণের জন্য উর্বর তিন ফসলি জমি, বিরোধপূর্ণ জমি ও বাজার মূল্যের চেয়েও বেশী দামে জমি ক্রয় করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসনের জন্য জমি সংস্থান নীতিমালা-২০২১ অনুযায়ী সমঝোতার মাধ্যমে বাজার মূল্যে বা তার নীচের দামে জমি ক্রয়ের নির্দেশনা উপেক্ষা করে দ্বিগুণ মূল্যের জমি কেনা হয়েছে। ক্রস চেকের মাধ্যমে টাকা পরিশোধের বিধান থাকলেও জমির মালিকদের সাথে যোগসাজসে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে বসে নগদ টাকা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২০২৩ সালে কার্যকর উপজেলার গণপতিপুরে জমির মৌজা রেট ডাঙ্গা/ বাগান/ পুকুরের জমির শতক প্রতি ৩৮ হাজার এবং ধানী/ বিলান/ পতিত জমি ১৪ হাজার টাকা। কিন্তু এই মৌজার গণপতিপুর গ্রামের নুর আলী বিশ^াসের ছেলে মাজেদের নিকট থেকে ৫৫ হাজার টাকা শতক দরে ৩২ শতক উর্বর তিন ফসলি বিবাদমান জমি ১৭ লাখ ৬০ হাজার টাকায় ক্রয় করা হয়েছে। এমনকি এই ধানী জমির মাটি ভরাটে তার নিকট থেকে এক লাখ টাকা নিয়েছে বলে মাজেদ জানায়। ভূমি সংস্থান নীতিমালায় বিরোধ পূর্ণ জমি ক্রয়ে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এই জমির হাল নামজারি ও ২০২২ সালের খাজনার দাখিলা গণপতিপুর গ্রামের জামালউদ্দিন সরদারের ছেলে আঃ ওয়াজেদের নামে থাকা স্বত্তে¡ও এই জমি কিভাবে সরকার মাজেদের নিকট থেকে রেজিষ্ট্রি করেছে সেটা নিয়েও নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে জনসাধারণের মাঝে। ফলে জমির মূল মালিক আঃ ওয়াজেদের কার্যবিধি ১৪৫ ধারার পি-২৫৪৫/২২ নং মামলায় সাতক্ষীরার বিজ্ঞ আদালতের আদেশে উক্ত আশ্রায়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। এদিকে উর্বর তিন ফসলি শতশত বিঘা জমির মধ্যেস্থলে আশ্রায়ণ প্রকল্পের অধিবাসিদের হাঁস, মুরগী, ছাগল পালনে ফসল হানির আশাংকায় গণপতিপুরের কৃষকরা ২৭ ডিসেম্বর ২২তারিখে ইউএনও বরাবর আবেদন করেছেন। এ দিকে জয়নগরের মৌজা রেট ডাঙ্গা/বাগান/পুকুরের জমির শতক প্রতি সাড়ে ২২হাজার এবং ধানী/বিলান/পতিত জমি সাড়ে ১৩ হাজার টাকা। কিন্তু সরকারী টাকা লোপাটের লক্ষ্যে কম দামে জমি ক্রয় করে বেশী দাম দেখিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করার গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। মৌজা রেটের দ্বিগুণের বেশী ৫৫ হাজার টাকা শতক দরে জয়নগরের আ: গণি সরদারের ছেলে আব্দুল লতিফ গং এর নিকট থেকে ৪৫.৬০ শতক জমি ২৫ লাখ ৮ হাজার টাকায় দলিল রেজিঃ করা হয়েছে। কিন্তু দাতা লতিফ জানান, ইউএনও অফিসে ডেকে তাদের হাতে নগদ উনিশ লাখ পয়ষট্টি হাজার টাকা দেওয়া হয়। বাকসা বাগাডাঙ্গার একই শ্রেণীর জমির মৌজা রেট যথাক্রমে সাড়ে ২৬ হাজার এবং সাড়ে ১৬ হাজার টাকা। কিন্তু এই মৌজায় দ্বিগুণের বেশী দামে ৬০ হাজার টাকা শতক দরে বোয়ালিয়া গ্রামের বাবর আলী সরদারের ছেলে ইউনূছের কাছ থেকে ৩৩ শতক উর্বর তিন ফসলি জমি ১৯ লাখ ৮০ হাজার টাকায় দলিল রেজিঃ করা হয়েছে। রেজিঃ খরচ বাবদ ইউএনও অফিসের কেরানী একলাখ টাকা নিয়েছে বলে ইউনূছ আলী জানায়। উপজেলার রামকৃষ্ণপুরে একই শ্রেণীর জমির মৌজা রেট শতক ২৪ হাজার এবং সাড়ে ২৭ হাজার টাকা। কিন্তু এই গ্রামের আবু বক্কারের ছেলে সাইদুজ্জামানের নিকট থেকে ৬০ হাজার ৫’শ টাকা শতক দরে ২১ শতক জমি ১২ লাখ ৭২ হাজার টাকায় ক্রয় করেছেন। তবে বাজার মূল্যের অনেক বেশী দামে সরকারের কাছে জমি বিক্রি করেছেন বলে সাইদুজ্জামান স্বীকার করেন। এছাড়া এসব জমি ক্রয়ের পূর্বে উপজেলা ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের নোটিশ বোর্ডে সপ্তাহ কাল প্রচারের বিধান লংঘন করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ইউপি সুত্র জানায়। উপজেলা জমি সংস্থান কমিটির সদস্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুল হোসেন মিয়া বলেন, ভূমিহীন বাছাই কমিটিতে আছি, জমি সংস্থান কমিটিতে আমি আছি কিনা জানি না। তবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্যার ভাল বলতে পারবেন। জমি ক্রয় কমিটির অপর সদস্য সাব-রেজিষ্টার মঞ্জুরুল হাসান বলেন, এটা অনেক আগের বিষয় স্মরণে নেই. তবে রেজিষ্ট্রির সময় মাজেদের নামে খতিয়ান ও দাখিলা উপস্থাপন করা হয়েছিল। উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুলী বিশ্বাস বলেন, গণপতিপুর মাজেদের জমির বিষয়টি সমাধান হয়েছে এবং বিধি মোতাবেক জমি ক্রয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে।