সংসদ প্রতিবেদক \ কোন রাজনৈতিক দলের নাম উলেখ না করে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অনির্বাচিত সরকারের দুঃস্বপ্ন থেকে আপনারা বেরিয়ে আসুন। কারণ এটা হচ্ছে, আতংকের নাম। যারা অনির্বাচিত সরকারের কথা বলছে তারা দেশ ও জনগণকে আতংকের মধ্যে ফিরিয়ে নিতে চায়। অনির্বাচিত সরকার এদেশের জনগণ মেনে নেবে না। অনির্বাচিত সরকার ফিরে আসবে না। সরকারে যাইতে চাইলে নির্বাচনে আসুন। এ জন্য শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করুন। বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্র“য়ারি) জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে এ সব কথা বলেন তিনি। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে শেখ হাসিনা বলেন, যারা অনির্বাচিত সরকার আনতে চায়, তারা কি দেশের সংবিধানে বিশ্বাস করে? গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে? স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে? তিনি বলেন, কিছু কিছু লোক বলে যাচ্ছে যে, দুই-তিন বছর অনির্বাচিত সরকার থাকলে ক্ষতিটা কী? এতে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে? এটি কোন ধরনের কথা। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার আসবে, যার জন্য আমাদের সংগ্রাম, আত্মত্যাগ, জেল-জুলুম অত্যাচার পর্যন্ত সহ্য করা। তিনি আরো বলেন, অনেকেই বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না। এখানে নাকি অনির্বাচিত সরকার আনতে হবে। অনির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে যাদের ক্ষমতায় আসার ইচ্ছা, তাদেরকে বলবো, রাজনীতি করেন, জনগণের কাছে যান। জনগণের ভোট নিয়ে ক্ষমতায় আসেন। জনগণ যাদেরকে ভোট দিবে তারাই ক্ষমতায় আসবে। আওয়ামী লীগ সরকার ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছে উলেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন যে অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়, সেটা তো আমরা প্রমাণ করে দিয়েছি। রংপুরের মেয়র নির্বাচনে আপনারা দেখেছেন। সেখানে আমরা হেরেছি। এখনো উপ-নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আসা ছয়জন সংসদ সদস্য বক্তব্য রেখেছেন। এই উপ-নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে আওয়ামী লীগের আমলে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। নির্বাচন নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেনি। বাংলাদেশের একজন মানুষও কি এই নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলতে পেরেছে? তুলতে পারেনি। তবে কিছু লোক আছে, তাদেরসব সময় উল্টো কথা বলতেই হবে। শেখ হাসিনা বলেন, এই নির্বাচন যে স্বচ্ছ হয়েছে, অবাধ নিরপেক্ষ হয়েছে, এটা কি প্রমাণ করে না যে, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আছে, নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীন, নিরপেক্ষভাবেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত করবার সক্ষমতা রাখে? সেখানে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করেনি, করেও না, করবেও না। জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার জন্যই তো আমাদের আন্দোলন, জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের জন্য আমরা সংগ্রাম করেছি। সেই সংগ্রামের সাফল্য বয়ে এনে আজকে ভাতের অধিকার যেমন আমরা নিশ্চিত করেছি, ভোটের অধিকারও আমরা নিশ্চিত করেছি। এটিই বাস্তবতা। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, টেলিফোনে আড়িপাতা নিয়ে কেউ কেউ কথা বলছেন। কিন্তু আড়িপাতা না গেলে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন করা হবে কিভাবে? আড়িপাতার মাধ্যমেই জানা সম্ভব, কারা ষড়যন্ত্র করছে, সন্ত্রাস সৃষ্টি ও জঙ্গি তৎপরতার পরিকল্পনা করছে। তাই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু করা হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এটা আইনসিদ্ধ বলেও দাবি করেন তিনি। সরকারের ধারাবাহিকতার কারণেই উন্নয়ন দৃশ্যমান উলেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় এসে আমরা মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত করেছি। দেশের কোন মানুষ গৃহহীন ও অভুক্ত থাকবে না। সে লক্ষ্যেই কাজ করছে সরকার। ডিজিটাল বাংলাদেশকে স্মাট বাংলাদেশ করার কাজ চলছে। ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা উন্নত বিশ্বের কাতারে পৌছাবো। যার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলা সম্ভব বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। আগামী রমজানে দেশে কোন খাদ্য সংকট দেখা দিবে না বলে উলেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশে পর্যন্ত খাদ্য মজুদ রয়েছে। রমজান মাসে খাদ্য সরবরাহ ঠিক রাখতে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এরপরও গুজব ও মিথ্যাচারের মাধ্যমে কেউ কেউ বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এলসি খোলায় অনিয়ম করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন। সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থনীতিক নীতিমালা গ্রহণ ও যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে বলেই দেশের দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে। এর ফলে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে জনগণের মাঝে স্বস্তি ও শান্তি ফিরে এসেছে। আওয়ামীলীগ সরকার ধারাবাহিকভাবে তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় দারিদ্র্যের হার ৪০ শতাংশ থেকে কমে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে বলেন, সরকার জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস দমন, দূর্নীতি নিয়ন্ত্রণ এবং দেশের মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছে। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ডিজিটাল সুবিধা ব্যবহার করে করোনা মহামারি মোকাবেলা করেছে। কোভিড মহামারী মোকাবেলায় উপমহাদেশে বাংলাদেশ প্রথম ও সমগ্র বিশ্বে পঞ্চম স্থান অধিকার করেছে। বেকার যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দেওয়ায় ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।