ডুমুরিয়া প্রতিনিধি \ ১৫ মিটার গার্ডার ব্রীজ নির্মাণে মেয়াদ ছিল ৬ মাস। কিন্তু বছর পেরিয়ে গেলেও কাজ শেষ হয়নি। ফলে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ডুমুরিয়া বাজারের দক্ষিণে শালতা নদীর শাখা খালের উপর সাড়ে ৭৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ব্রীজটি নির্মাণ করছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস। অন্যদিকে অভিযোগ উঠেছে, মাত্র ৩০ ভাগ কাজ করেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বেশিরভাগ বিল তুলে নিয়েছে। অবশ্য পিআইও অফিস বিষয়টি অস্বীকার করে বলছে, কাজে ৪০ ভাগ অগ্রগতি হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কোন বিলই পরিশোধ করা হয়নি। পিআইও জানায়, যোগাযোগ সহজ করতে ডুমুরিয়া বাজার হতে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স অভিমুখে শালতা নদীর শাখা খালের উপর ১৫ মিটার গার্ডার ব্রীজ এবং দুইপাশে ১৫ মিটার করে মোট ৩০ মিটার ডাবল ইট বসাতে প্রকল্প গ্রহন করা হয়। ব্রীজটি নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি হয় সাড়ে ৭৮ লাখ টাকা। কাজ করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স ওমর ফারুক। ২০২২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মেয়াদ ধরা ছিল ২০২২ সালের ১৪ আগষ্ট। অর্থ্যাৎ সময় ছিল মাত্র ৬ মাস। কিন্তু এক বছরেও সেই কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। সরেজমিন দেখা গেছে, বেইজ ঢালাইয়ের কিছু কাজ করা হয়েছে। অন্য কোন কাজই হয়নি। দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় রোদ-বৃষ্টিতে ব্রীজে ব্যবহৃত রডে মরিচা এসেছে। কাজ আপাতত বন্ধ রয়েছে। প্রদীপ নাথ ও গোবিন্দসহ স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, সামান্য কাজ করে ঠিকাদারের লোকজন চলে যায়। দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ। কিন্তু কাজ ফের শুরু হচ্ছে না। আশপাশের ব্যবসায়ীরা আরও জানান, কাজ বন্ধ থাকায় নদী লাগোয়া দোকানঘর ভেঙে পড়ছে। এছাড়া ক্রেতারাও দোকানেও আসতে চাই না। ফলে বেচা-বিক্রি একদম কমে গেছে। জনগণকেও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ঠিকাদার অভিযোগ করেন, সবমিলিয়ে মাত্র ৩০ ভাগ কাজ বাস্তবায়ন হতে পারে। অথচ সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বেশিরভাগ বিলই পরিশোধ করা হয়েছে। খুলনা সচেতন নাগরিক কমিটির আহবায়ক অ্যাডভোকেট কুদরত-ই খুদা-বলেন, বাজারে মানুষের যাতায়াত ও পণ্য বাজারজাত সহজ করতে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবায়নে বিলম্ব হওয়ায় জনগণ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। মানুষের কষ্টার্জিত করের টাকারও অপচয় হচ্ছে। তাই এ ব্যর্থতার দায়ে সংশ্লিষ্টদের শাস্তি ও জবাবদিহির মুখোমুখি করা উচিত। ডুমুরিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাসেল আহমেদ জানান, নির্মাণ সামগ্রী দাম চড়া সেকারণেই ঠিকাদার মূলত কাজ করেনি। এছাড়া জোয়ারের পানিও কিছুটা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। তিনি জানান, কাজে ৪০ ভাগ বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কোন বিল পরিশোধ করা হয়নি। বরং নির্ধারিত সময়ে কাজ না করায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হচ্ছে। ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরীফ আসিফ রহমান বলেন, অর্থ সংকটে প্রকল্পটি সময়মতো বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। প্রকল্পটি রিভাইজড করা হবে। এরপর ঠিকাদার ঠিকমতো কাজ না করলে কার্যাদেশ বাতিল করা হবে। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এখনও কোন বিল পরিশোধ করা হয়নি বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি।