এফএনএস স্পোর্টস: বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে সর্বশেষ ২০০৬ সালের ৫ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বগুড়াবাসী ভুলেই গেছে, উত্তরবঙ্গে একটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম আছে! ১৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে জ¦লে না এর ফ্লাডলাইট। এরইমধ্যে ২ মার্চ রহস্যজনকভাবে স্টেডিয়ামটি থেকে কর্মকাÐ গুটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। যদিও দেড় মাসের মধ্যে নিজেদের সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে এসেছে তারা। নতুনভাবে স্টেডিয়ামে কাজ করবে বাংলাদেশের ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। পাশাপাশি ভ্রমণ সংক্রান্ত জটিলতা কেটে গেলেই আন্তর্জাতিক ম্যাচ ফেরানোর আশা শুনিয়েছে তারা। বিসিবির ভেন্যুর তালিকা থেকে শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামকে বাদ দেওয়ার পর থেকেই ক্রিকেট ভক্তদের মাঝে ছিল বিরূপ প্রতিক্রিয়া। বোর্ডের এমন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। স্টেডিয়াম প্রাঙ্গণে মানববন্ধনও করেছিলেন স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই এমন পরিণতি হয়েছে এক সময়ের আন্তর্জাতিক ভেন্যুটির। অবশেষে তাদের দাবির প্রেক্ষিতে আবারও স্টেডিয়ামটিতে কার্যক্রম ফিরতে যাচ্ছে। শনিবার দুপুর ১২টায় জাতীয় ক্রীড়া সংস্থার (এনএসসি) সঙ্গে আলোচনা করে ভেন্যুটি আনুষ্ঠানিকভাবে বুঝে নেয় বিসিবি।
বৈঠক শেষে বিসিবির পরিচালক ইসমাইল হায়দার মল্লিক গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অধীনেই থাকবে। বিসিবি যেভাবে দেখাশোনা করছিল, সেভাবেই করবে। আমরা আজ রোববার থেকে কার্যক্রম শুরু করবো। আমাদের মাননীয় বোর্ড সভাপতিও যত দ্রæত সম্ভব কাজ শুরু করতে ছাড়পত্র দিয়ে দিয়েছেন। আমাদের অধীনে এনে এটাকে পরিচর্যা করতে হবে আগে। এরপর খেলা কবে হবে কিংবা কার খেলা হবে সেগুলো গ্রাউন্ডস কমিটি ঠিক করবে। যে কোনো খেলার আগেই আমরা প্রথমে তালিকাগুলো গ্রাউন্ডস কমিটিতে পাঠাই, তারা অনুমোদন দিলে তবেই খেলা হয়।’ এদিকে বিসিবির পরিচালক ও গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুব আনাম তো বলে দিলেন, এই মাঠে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফিরবে। এজন্য বগুড়ার অনেক ইতিবাচক দিকও তুলে ধরেছেন তিনি। বৈঠক শেষে মিরপুরে সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, ‘প্রথমত বগুড়াতে এখন হোটেলের সমস্যা নাই। বগুড়াতে আন্তর্জাতিক দলগুলোকে রাখার মতো মানসম্পন্ন হোটেল সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত। নতুন যে ধারাগুলো এসেছে সেগুলো নিয়েও আমরা আলাপ করেছি। আগে বগুড়াতে আমরা খেলা পরিচালনা করেছি, বাসে করে যেতে হতো। আজকাল খেলা এত পরিমাণে হচ্ছে, যাত্রার সময়টা সংকীর্ণ হয়ে গেছে। তবে এ ব্যাপারেও ওঁরা যে প্রস্তাবনা দিয়েছেন সেটা সম্ভব। আমরা এ নিয়ে সরকারের সাথে আলাপ আলোচনা করবো।’ বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে কবে আন্তর্জাতিক ম্যাচ ফিরবে? এমন প্রশ্নে মাহবুব আনাম বলেছেন, ‘আপনারা জানেন জাতীয় দলের প্রথম ৬ মাসের খেলা সমাপ্তির পথে। অনূর্ধ্ব-১৯, ‘এ’ দলের কিছু খেলা আছে। যেগুলোর ভেন্যু ইতোমধ্যে চ‚ড়ান্ত। আমরা দেখবো কোনো কিছু করা যায় কি না। যেহেতু আন্তর্জাতিক সূচি জুন-জুলাইয়ের আগে নেই, সেহেতু হাতে সময় আছে। শুধু মাঠ তো না, মাঠের অবকাঠামো, ড্রেসিংরুম ছাড়াও ইনডোর ও অন্য সুবিধাগুলো ঠিকঠাক আছে কি না আমরা দেখবো। আইসিসির কাছে এজন্য পুনরায় অনুমোদন নিতে হবে।’ এর আগেও নানা সময় আশার কথা শুনিয়েছে বিসিবি। সত্যিকার অর্থেই বগুড়াতে আন্তর্জাতিক ফেরানো সম্ভব কি না? মাহবুব আনাম বলেছেন, ‘অবশ্যই সম্ভব। ভ্রমণের যে ব্যাপারটা মানে জটিলতা, সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেটা সমাধান করতে পারলে সম্ভব।’ সভাতে উপস্থিত ছিলেন বগুড়ার সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান রিপু। তিনি বলেছেন, ‘আপনারা শুনেছেন আবার নতুনভাবে শুরু হচ্ছে। ক্রীড়ামন্ত্রী, (নাজমুল হাসান) পাপন ভাই ও সকল বোর্ড কর্মকর্তাকে আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি যে তারা বুঝতে পেরেছেন। বগুড়ায় আন্তর্জাতিক মানের খেলার মাঠ থাকলেও আমাদের লোকাল খেলার কোনো মাঠ ছিল না। যার জন্য এই সংকট তৈরি হয়েছিল। ওঁরা আশ্বাস দিয়েছেন আলাদা মাঠ করবেন লোকাল খেলার জন্য। আমি মনে করি বগুড়া বাংলাদেশ ক্রিকেটে অনেক বড় অবদান রাখতে পারবে।’ বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মো. মাসুদুর রহমান মিলন আশা করেন, অতি দ্রæত বগুড়াতে আন্তর্জাতিক ম্যাচ ফিরবে, ‘আমি ক্রিকেট বোর্ডের একজন কাউন্সিলর। বগুড়ায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফেরাতে আমাদের আলাপ আলোচনা হয়েছে। সকল সমস্যা সমাধান করে ইনশাআল্লাহ আন্তর্জাতিক ম্যাচ ফেরাবো। এয়ারপোর্ট বলেন বা অন্য সমস্যা, সবকিছু সমাধানের লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। আমাদের জেলা প্রশাসক সব ব্যাপারেই পদক্ষেপ নিয়েছেন। ইনশাআল্লাহ অচিরেই আপনারা ভালো কিছু দেখতে পারবেন।’