এফএনএস বিদেশ: জাতিসংঘের তথ্যমতে এখন পর্যন্ত পাঁচ লাখেরও বেশি বেসামরিক মানুষ ইউক্রেন ছেড়ে পালিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলছে, প্রায় ৪০ লাখ মানুষ রাশিয়ার এই আক্রমণের কারণে দেশত্যাগের চেষ্টা করবে। এমনকি ইউক্রেনীয় উদ্বাস্তুদের জন্য সংস্থাটি নিজেদের নীতিমালাও বেশ শিথিল করেছে। দুইবাহু মেলে উদ্বাস্তুদের আমন্ত্রণ করছে বলেও জানিয়েছে তারা। সীমান্ত পেরিয়ে মূলত পশ্চিমের প্রতিবেশি দেশগুলোতেই যাচ্ছে ইউক্রেনীয় উদ্বাস্তুরা। এরমধ্যে পোল্যান্ড, রোমানিয়া, স্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি এবং মালদোভাতেই বেশি যাচ্ছে তারা। পাঁচ লাখেরও বেশি ইউক্রেনীয় অধিবাসী সীমান্ত পেরিয়ে দেশগুলোতে প্রবেশ করেছে বলে সোমবার জানিয়েছে জাতিসংঘ। এ ছাড়া এদের মধ্যে দুই লাখ ৮০ হাজার মানুষ শুধু পোল্যান্ডেই গেছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। দেশটির সরকারি তথ্যমতে, প্রতিদিনই প্রায় ৫০ হাজার মানুষ দেশটিতে প্রবেশ করছে। পোল্যান্ড আহত ইউক্রেনীয়দের জন্য মেডিক্যাল ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে এবং হাসপাতালে পাঠানোর জন্য ১ হাজার ২৩০ জনের তালিকা তৈরি করেছে। ক্রিমিয়াতে ২০১৪ সালে রাশিয়ার হামলার পর থেকে ১০ লাখেরও বেশি ইউক্রেনীয় পোল্যান্ডে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছেন। রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত জাতিসংঘের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, হাঙ্গেরিতে ৭১ হাজার ১৫৮ জন, রোমানিয়াতে ৪৩ হাজার ১৮৪ জন, মালদোভাতে ৪১ হাজার ৫২৫ জন এবং স্লোভাকিয়াতে ১৭ হাজার ৬৪৮ জন ইউক্রেনীয় প্রবেশ করেছেন। স্লোভাকিয়া বলছে, দেশটি প্রতিদিন ১০ হাজারেরও বেশি উদ্বাস্তু গ্রহণ করছে। প্রথমিকভাবে দেশগুলোতে প্রবেশের জন্য কোনো ধরনের কাগজপত্রের দরকার নেই বলা হলেও পাসপোর্ট এবং জন্মসনদের মতো জিনিসগুলো নিতে বলা হয়েছে। তবে উদ্বাস্তু হিসেবে কেউ তখনই গণ্য হবে যখন তিনি ইউক্রেনের অধিবাসী কিংবা বিদেশি শিক্ষার্থীদের মতো আইনগতভাবে দেশটিতে অবস্থান করছে। তবে পার হবার জন্য অনেকেই সীমান্তে দিনের পর দিন অপেক্ষা করছেন আবার কেউবা শহর ছাড়ার জন্য ট্রেনই ধরতে পারছে না। ইউক্রেন ছেড়ে আসাদের মধ্যে যাদের আত্মীয়-পরিজন কেউ নেই তাদের জন্য বিশেষ কেন্দ্রের ব্যবস্থা করে খাবার এবং চিকিৎসার বন্দোবস্ত করেছে শরনার্থীদের জায়গা দেয়া দেশগুলো। তবে এসব কেন্দ্রে সাধারণত নির্দিষ্ট সময়ের পর থাকার অনুমতি না থাকলেও ইউক্রেনীয়দের জন্য সেই নিয়ম শিথিল করা হয়েছে। এছাড়া শরনার্থীদের সাহায্যের লক্ষ্যে এগিয়ে এসেছে ব্রিটেন। ব্রিটিশ যেকোনো নাগরিকের নির্ধারিত আত্মীয়ের জন্য সীমান্ত খোলা রয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটি। ইউক্রেনে অন্তত ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ যুদ্ধ থেকে বাঁচতে নিজ দেশের মধ্যে স্থানান্তরিত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলছে, এই সংখ্যা সাত মিলিয়নে পৌঁছাতে পারে। এ ছাড়া এই যুদ্ধের কারণে ১৮ মিলিয়ন মানুষ সরাসরি আক্রান্ত হতে পারে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। ইইউ এবং ফ্রেঞ্চ কর্মকর্তারা জানিয়েছে, যুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা শরনার্থীদের ব্লকভুক্ত দেশগুলোতে তিন বছর পর্যন্ত থাকার এবং কাজের অধিকার নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া সামাজিক কল্যান, বাড়ি, চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং শিশুদের জন্য পড়াশোনার ব্যবস্থার কথাও ভাবছে তারা। ১৯৯০ সাল থেকে যুদ্ধের ক্ষেত্রে বলকান রাষ্ট্রগুলোর জন্য চালু করা এই ব্যবস্থা এবারই প্রথমবারের মতো ব্যবহার হতে যাচ্ছে। শরনার্থীদের জন্য নিয়মিত বিধি শিথিল করে ইউক্রেনীয়দের ব্লকভুক্ত দেশগুলোর যেখানে ইচ্ছে থাকার সুযোগও তৈরি করা হয়েছে।