দৃষ্টিপাত রিপোর্ট \ মৃত্যু দূত হিসেবে বজ্রপাত বিশেষ ধরনের প্রাকৃতিক দূর্যোগ। আমাদের দেশের জনসাধারন প্রাণঘাতি এই বিয়োগান্তক দূর্যোগ এর শিকার প্রতিনিয়ত। ছয় ঋতুর বাংলাদেশ বৈশাখ জ্যৈষ্ঠমাসের কালবৈশাখি ঝড় বৃষ্টির সাথে বজ্রপাতের ঘটনা বিশেষ ভাবে পরিলক্ষিত হয়। আষাঢ়, শ্রাবন মাসের বর্ষনমুখর দিন রাতে বজ্রপাত নামতে দেখা যায়। অপরাপর প্রাকৃতিক দূর্যোগ দূর্বিপাক জনজীবনের, সম্পদের ক্ষতি করে কোন কোন সময়ে মানব মৃত্যুও ঘটায় কিন্তু বজ্রপাত এমন ধরনের বিপদজনক ঘাতক যে ব্যক্তির উপর বা প্রাণির উপর আছড়ে পড়ে তার শেষ পরিনতি মৃত্যু। প্রকৃতির এই অসম এবং নিষ্ঠুরতাকে প্রতিরোধ করা সম্ভব না হলেও সতর্কতা অবলম্বন করা যেতে পারে। নিরাপদ আশ্রয় বিশেষ ভাবে বজ্রপাতের হিংস্রতা হতে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। বাংলাদেশের বাস্তবতায় বজ্রপাতে মৃত্যু ঘটনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বজ্রপাত অরাপর প্রাকৃতিক দূর্যোগের মতই এবং ভয়াবহ যে কারনে সরকার দুই হাজার ষোল সালে বজ্রপাতকে প্রাকৃতিক দূর্যোগের তালিকায় অন্তভূক্ত করেছে। দেশের বজ্রপাতের সময়কাল হিসেবে আবহাওয়াবিদদের অভিমত বজ্রপাতের সময় সীমা সাধারনত ত্রিশ থেকে পয়তালিশ মিনিট স্থায়ী হয় এবং বজ্রপাতের পূর্বে আকাশ ঘন কালো মেঘে ছেয়ে যায় বিধায় আকাশ মেঘাচ্ছন্ন বা কালো হলে ঘরের বাইরে বের না হওয়ায় শ্রেয়। বজ্রপাতে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে বিদ্যুৎ প্রবাহীত হয় বিধায় হৃদপিন্ড অকার্যকর হয়ে মৃত্যু মুখে পতিত হয়। বজ্রপাত মধ্যরাত দুই ধরনের হয়। কোন ব্যক্তি বা প্রাণির উপর সরাসরি পড়তে পারে অথবা একটি বড় এলাকা জুড়ে বজ্রপাত হতে পারে। কোন ব্যক্তির উপর সরাসরি বজ্রপাত হলে সে মুহুর্তেূর মধ্যে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যায়। বজ্রপাত সরাসরি কোন ব্যক্তির উপর বর্সিত হলে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীন তবে আশপাশে পড়লে সেই বজ্রপাতের বিদ্যুৎ যদি কোন মানুষকে স্পর্শ করে তাহলে সাথে সাথে চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অভিমত বজ্রপাতে আহত ব্যক্তির বৈদ্যুতিক শকে আহতদের মতো করেই চিকিৎসা করা হয়। মানব ঘাতক বজ্রপাত কে প্রতিহত করার সুযোগ নেই কারন প্রকৃতির অমোঘ বিধান এই বজ্রপাত তবে সাবধানতার বিকল্প নেই, বজ্রপাতের ক্ষেত্রে স্থান কাল পাত্র নির্দেশনা করে না তবে বিশেষ ভাবে কিছু কিছু স্থান এলাকা ও অবস্থান বজ্রপাতের জন্য উপযুক্ত বিধায় নির্মোক্ত সাবধানতা অবলম্বনের বিকল্প নেই, আকাশে বিদ্যুৎ চমকালে বা ঘনকালো মেঘের উপস্থিতি হলে বাইরে বের হওয়া অনুচিত অতি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে পায়ে লবারের জুতা পরে বের হতে হবে। এ ক্ষেত্রে লবারের জুতা বিদ্যুৎ বাহিত হতে রক্ষা করে। খোলা স্থানে, উচু জায়গা, বড় বড় গাছ বজ্রপাতের সহনীয় ক্ষেত্র বিধায় বজ্রপাতের সময় গুলোতে ফাঁকা জায়গা, উচু স্থান, গাছ তলা এড়িয়ে চলতে হবে। বজ্রপাতের সময় ধানক্ষেত বা সবজি বাগানে থাকলে হাটুগেড়ে কানে হাত দিয়ে বসে পড়–ন, কোন অবস্থাতেই শুয়ে পড়বেন না, ধান বা সবজি ক্ষেত্রের যে স্থানে বসবেন সেই স্থানের ধান যেন আপনার মাথার উপরে থাকে। বজ্রপাতের সময় টিনের আশ্রয় এড়িয়ে চলুন, বড় বিল্ডিং এ আশ্রয় নিন, কোন ভাবে ঘরের বারান্দায় বা জানালার কাছে অবস্থান নেওয়া যাবে না, বৈদ্যুতিক খুটি বা ধাতব পদার্থ হতে দুরে থাকতে হবে, মোবাইল, টেলিফোন, টিভি, ফ্রিজ বন্ধ রাখাই উত্তম। বজ্র সৃষ্টির সময়ে কোন অবস্থাতেই ধাতব হাতল যুক্ত ছাতা ব্যবহার করা যাবে না, প্রয়োজন হলে প্লাষ্টিকের অথবা কাঠের হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার করতে হবে। ফাকা মাঠে খেলাধুলা হতে বিরত থাকতে হবে। বজ্রপাতের সময় কোন ভাবেই পানিতে অবস্থান করা যাবে না, পানি অন্যতম শক্তিধর বিদ্যুৎ বাহিত/নদীতে বা পুকুর জলাশয়ে মাছ ধরা হতে বিরত থাকতে হবে। বিশেষ প্রয়োজনে যদি নৌকা নিয়ে নদীতে থাকতে হয় তাহলে অবশ্যই ছাউনি নৌকা হতে হবে। বজ্র বৃষ্টির সময় বসতবাড়ীর ধাতব কল, সিড়ির লোহার রেলিং, পানির পাইপ স্পর্শ হতে দুরে থাকতে হবে। বজ্রপাতের নির্দয় সময় গুলোতে যানবাহনে থাকলে বিশেষ করে যাত্রী বাহি বাসের যাত্রী হলে লবারের জুতা পরে নিন, এবং সিটের উপর পা তুলে বসুন, গাড়ীর কোন ধাতব অংশে ও কাঁচে হাত রাখা হতে বিরত থাকতে হবে। মোটর সাইকেল ধাতব পদার্থে পরিপূর্ণ বিধায় বজ্রপাতের ও বৃষ্টির সময় মোটর সাইকেল চালনা হতে দুরে থাকা বাঞ্জনীয় একই সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলা সমুচিন নয়, বন্ধ রাখাই ভাল। আকাশে কালো মেঘ দেখা দিলে ঘরের বাইরে বের না হওয়ার পাশাপাশি শিশুদের কে কোন অবস্থাতেই বারান্দায় বা উঠানে খেলা ধুলা করতে দেওয়া যাবে না। বিদ্যুৎ চমকানোর সময় গুলোতে মা বোনেরা ঘর গৃহস্থালীর কাজ যেমন ধান তোলা, কাঠ তোলা, জামা কাপড়, ওঠানোর কাজ করে এসময় ঘরের বাইরে রেব হওয়া মানেই বিপদ ডেকে আনা। বজ্রপাতের সময় কোন ভাবে ঘরের বাইরে বা মাঠে কাজে আটকিয়ে থাকা মানব সন্তানদের একই স্থানে না থেকে পৃথক পৃথক ভাবে থাকতে হবে। এমনকি বাসা বাড়ীতেও এক কক্ষে অনেকের অবস্থান করা ভাল, বাসা বাড়ীতে বজ্রপাত নিরোধক দন্ড স্থাপন করা বজ্রপাত হতে রক্ষা পাওয়ার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। হাদিসের পাতায় চোখ বুলালে দেখা যায়, বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তার উম্মতদের বিভিন্ন দোয়া শিখিয়েছেন। হযরত আব্দুলাহ ইবনে ওমর (রাঃ) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন রাসূল (সাঃ) যখন বজ্রপাতের শব্দ শুনতেন তখন বলতেন, আলাহুম্মা লা তাকতুলনা বিগজাবিকা ওয়ালা তুহলিকনা বিআজাবিকা ওয়াআ-ফিনা কবলা জালিকা। (তিরমিজি ৩৪৫০) বজ্রপাতের শক্তি এবং প্রভাবে মানব সন্তান চরম অসহায় আর তাই নির্দয়, নির্মম, প্রাণঘাতি বজ্রপাত হতে রক্ষা পেতে করনীয় নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে পালন করুন এবং ভয়াবহতা হতে নিজেকে ও অন্যকে রক্ষা করুন।