দৃষ্টিপাত রিপোর্ট \ বাংলাদেশ এবং তার উপকুল বারবার প্রকৃতির নিষ্ঠুর ছোবলে ক্ষত বিক্ষত হয়েছে। লন্ড ভন্ড হয়েছে জনবসতি বিবর্ন হয়েছে মানবতা, তবুও উপকুল দূর্যোগ দুর্বিপাক সাইক্লোন, জ্বলোচ্ছ¡াস, ঘুর্ণিঝড় বন্যার কাছে মাথা নত করেনি। ঘুরে দাড়িয়েছে জনমানব, নিজেকে উন্নত মমশিরে নিয়েছে ক্ষতিগ্রস্থ জনজীবন। প্রকৃতির রুদ্ররোষের সাথে সংগ্রাম করে, প্রকৃতির নিষ্ঠুরতাকে অবদমিত করে সুন্দর স্বাভাবিক, স্বচ্ছন্দময় জীবন যাত্রার জয়গান গেয়েছে। প্রকৃতির অমোঘ বিধান, প্রতিহত করার বা পুরোপুরি প্রতিরোধ করার সুযোগ নেই কিন্তু মোকাবিলার দৃঢ়তা, সাম্ভাব্য সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহন এবং বাস্তবায়নই পারে ধ্বংস যজ্ঞ, জীবনহানী রোধ করতে। গত কয়েকদিন যাবৎ দেশের অপরাপর উপকূলীয় এলাকার ন্যায় সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকার জনপদে ঘুর্ণিঝড় মোখা নিয়ে উদ্বেগ, আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। জন্ম হতেই প্রকৃতির হিংস্রতার সাথে পরিচিত, প্রকৃতির দানবীয়তায় বিপন্ন, বিপর্যস্থ, আবার প্রকৃতির শক্তিকে অবদমিত করে বেঁচে থাকা, টিকে থাকা মানুষ গুলো বর্তমান সময়ে ব্যাপক ভাবে ভয় পায় না, উপকুলীয় এলাকার অধিবাসিদের প্রকৃতির তান্ডব দেখতে দেখতে, মোকাবিলা করার প্রানন্তকর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে তাদের সয়ে গেছে। তারপর এ ঝড়ের গতিবেগ আর জ্বলোচ্ছাসের ধরন নিয়ে উদ্বেগের শেষ নেই। চোখ রাঙাচ্ছে মোখা। অতীতের ন্যায় বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহারে আবহাওয়ার গতি প্রকৃতি জানা যেমন সহজসাধ্য অনুরুপ মোকাবিলা প্রস্তুতি টেকসই। সাতক্ষীরার উপকুলীয় জনপদের মানুষদের কে নিরাপদ এবং নিশ্চিন্ত রাখার ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করেছে। মোখা প্রবল ঘুর্ণিঝড়ে পরিনত হয়ে বাংলাদেশ মুখি আসছে বলা হচ্ছে সাতক্ষীরা উপকুল দিয়ে অতিক্রম না করার সম্ভাবনা, কিন্তু প্রকৃতির ইচ্ছা অনিচ্ছা জানা কতটুকু সম্ভব? যে কোন সময়ে দিক পরিবর্তন করে সাতক্ষীরা উপকুল অতিক্রম করবে না এমনটি বলা কি সম্ভব? বিধায় সাতক্ষীরার উপকুলীয় জনপদকে সর্বাত্মক সতর্কতাবস্থায় থাকতে হবে। নিরাপদ আশ্রয়ে এবং আশ্রয় কেন্দ্রে উপস্থিত হতে হবে। শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানির মওজুদ রাখতে হবে। সামান্যতম অবহেলায় আপনার জীবন বিপন্ন হতে পারে। প্রকৃতির রুদ্ররোষ প্রকৃতির উপর ছেড়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। অসম্ভব ধরনের ঘুর্ণিঝড় আর জ্বলোচ্ছাস মোকাবিলা করনের ক্ষেত্রে তাই আশ্রয় কেন্দ্র গুলোই ভরসা। অনেকে মনে করেন গত ঝড়ের সময় ঘরে ছিলাম কিন্তু কিছু হইনি এবারও নিজ বাড়ীতে থাকবো, এমন দুঃসাহসী, বিবেচনা ও কান্ডকজ্ঞানহীন সিদ্ধান্ত হতে বিরত থাকতে হবে। আমাদের উপকুলে প্রকৃতির নির্দয় ধ্বংস যজ্ঞ নতুন নয় ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর ২২৪ কিলোমিটার বেগে ঝড় আর ২০/২৫ ফুট জ্বলোচ্ছাসের বিবর্ণ ঘটনা আজও ডুগরে কাঁদে উপকুল, ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের জ্বলোচ্ছাস মানবতার মৃত্যু দুঃস্বপ্নের স্মৃতি হয়ে আছে। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিডরের ক্ষত এখনও উপকুলীয় এলাকাকে অভিশপ্ত করে রেখেছে। ২০০৮ সালে নার্গিস, ২০০৯ সালে ২৫ শে মে আইলা নিকট অতীতে বুলবুল, আম্ফান এর স্মৃতিকেবল বেদনাহত। বৈজ্ঞানীক যুগ জামানা আর তথ্য প্রযুক্তির অবাধ সমারোহ প্রাকৃতিক দূর্যোগ সম্পর্কে আগামবার্তা পেলেও প্রকৃতির শক্তির কাছে মনুষ্য শক্তি অতি ক্ষুদ্র, ক্ষয়িষ্ণু ও নগন্য তাই নিরাপদ আশ্রয়ই শেষ কথা, মনে রাখতে হবে ঝড় আর জ্বলোচ্ছাস কোনটি হতে কোনটি কম নয়, তবে ঝড় অপেক্ষা সর্বাধিক আতঙ্ক আর ভয়ের কারন জ্বলোচ্ছাস অর্থাৎ পানি। আমরা যে যার অবস্থান হতে, নিরাপদে থাকি, অন্যকে নিরাপদে থাকার পরামর্শ দিই।