আলা উদ্দিন, কাশিমাড়ী: কৃষিতে এক অপার সম্ভাবনার এই বাংলাদেশ। যে দেশের মাটিকে সোনার সাথে তুলনা করা হয়। সে মাটির অতল গহ্বরে সোনার খনি না থাকলেও সোনার ফসল ফলাতে এ মাটির উর্বরতা অতুলনীয়। এ দেশের ৮০ শতাংশ প্রান্তিক কৃষকের আশার আলো সঞ্চারিত হয় কৃষিকে কেন্দ্র করে। উন্নত বিশ্বের দেশগুলো শিল্পনির্ভর হলেও আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো এখনো কৃষিকে ঘিরেই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির স্বপ্ন দেখে। কৃষিতে নতুন প্রযুক্তি, উন্নত ও মানসম্মত বীজ এবং কীটনাশক ও রাসায়নিক সার নতুন মাত্রা যোগ করেছে। দেশের বিভিন্ন অংশে খাল খনন, গভীর নলকূপ স্থাপন ও উন্নত সেচব্যবস্থা কৃষিতে এনে দিয়েছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। এ জন্যই আগেকার দিনে বিঘাপ্রতি যে পরিমাণ ফসল উৎপাদিত হতো, এখন তার পরিমাণ কয়েক গুণ বেশি। এক ফসলি জমিগুলো একাধিক ফসলি জমিতে রূপ নিয়েছে। প্রমাণ করে দিয়েছেন কাশিমাড়ী ইউনিয়নের কৃতি সন্তান কৃষি উদ্যোক্তা গাজী সাইফুল ইসলাম। যেখানে আগে পানির অভাবে বোরো ধান রোপন করা সম্ভব ছিল না সেখানে এখন সবুজের সমারোহ। তিনি আইন পেশার পাশাপাশি এলাকার শিক্ষিত কৃষি উদ্যোক্তার ভুমিকা নিয়ে অত্র এলাকার এক ফসলি কৃষি জমিকে একাধিক ফসলি জমিতে রূপান্তর করার নানা বিধ উদ্যোগ গ্রহণ বাস্তবায়ন করে চলেছে। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রথমবারের মতো দুই ফসলের আওতায় এসেছে শ্যামনগরের কাশিমাড়ি ইউনিয়নের গোবিন্দপুর দক্ষিণ বিলের পাচ শতাধিক বিঘা জমি। এলাকার গরীব অসহায় কৃষকের ভাগ্যোন্নয়নের কথা চিন্তা করে স্থানীয় সরন্জামের সাথে আরও সরন্জাম হিসেবে সম্পূর্ণ নিজের অর্থায়নে দুটি জল মোটর, কয়েকটি বৈদ্যতিক মোটর, দুটি পাওয়ার টিলার সহ আধুনিক চাষাবাদ যন্ত্রপাতির সরবরাহে প্রথমবারের মত কাশিমাড়ী ইউনিয়নের গোবিন্দপুর দক্ষিণ বিলে প্রায় ৫০০ শত বিঘার মত জমিতে চলতি মৌসুমে ইরি ধান চাষ করা হয়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে প্রথমবারের মত এসকল জমিতে বোরো ধান চাষ করা হচ্ছে। সবুজে সবুজে ভরে উঠেছে পুরো বিল। দক্ষিনা বাতাসে দোল খেতে শুরু করেছে সবুজ ধানের ক্ষেত। স্বপ্নজয়ী তরুন কৃষি উদ্যোক্তা এডভোকেট গাজী সাইফুল ইসলামের ঐকান্তিক এই প্রচেষ্টার ফলে অত্র এলাকার যেসকল জমিতে আগে বছরে একটি মাত্র ফসল উৎপাদন হত, এখন সেই সকল জমিতে চলতি মৌসুমের বোরো সহ দুটি ফসল উৎপাদন হচ্ছে। ধান চাষের পাশাপাশি সাইফুল ইসলাম তার নিজ বাড়ির পুকুরে বিলুপ্ত প্রায় দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন ধরনের মাছ সংরক্ষণ করে রেখেছেন। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এডভোকেট গাজী সাইফুল ইসলামের এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে সর্বদা সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রদান করছেন। এডভোকেট গাজী সাইফুল ইসলাম বলেন, তবুও দেশের শিক্ষিত যুবকদের একটি বৃহৎ অংশ বেকারত্বের অভিশাপ নিয়ে হতাশায় নিমজ্জিত। চাকরির পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে তারা দিশেহারা। শিক্ষিত যুবসমাজের কৃষিতে আত্মনিয়োগের মধ্য দিয়েই নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচন সম্ভব। আমি এরমধ্যে একটা স্বপ্ন খুঁজে পেয়েছি। সোনার বাংলা গড়ার জন্য। যে প্রত্যয় সেটা আমার মনে হয় যে কৃষি বিপ্লবের মাধ্যমে আমাদের এই দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে সক্ষম। চাষাবাদের জন্য সর্বোচ্চ টেকনোলজি এখানে ব্যবহার করছি। সব চাষিদের মধ্যে মিষ্টি পানির হতাশা কাটিয়ে তুলে এবার প্রথম বারের মত ৫শ থেকে ৬শ বিঘা জমিতে আমি পানি সরবাহ করতে সক্ষম হয়েছি। উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (গোবিন্দপুর ব্লকে দায়িত্ব প্রাপ্ত) শামসুর রহমান জানান, এড. গাজী সাইফুল ইসলামের ‘উদ্যোগ’ কে নিয়ে গর্ব করার মত। আমরা কৃষি বিভাগ তাকে সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। আগামীতে এই এলাকার সব জমিতে বোরো চাষের আওতায় আনা হবে।