দৃষ্টিপাত রিপোর্ট \ যে সময় ছিল বৃটিশ শাসনের যুগ ১৮৬৫ সাল। আধুনিকতা সমাজ সেরা, সমাজ সংস্কার পরোপকার, জন হিতৈষী সর্বপরি জনস্বার্থ রক্ষায় বাঙ্গালীদের খুব বেশী অনুভুতি ছিল না। তবে কোন কোন মহান ব্যক্তি, সমাজ সংস্কারক জনকল্যানে, উন্নয়নে নিজেকে বিলিয়ে ছিলেন। সাতক্ষীরার এমনই এক প্রবাদ পুরুষ, ত্যাগী, সৃষ্টিশীল, পন্ডিত, গুনতাপস নিজেকে জনস্বর্থে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। তিনি হলেন সাতক্ষীরার মা মাটির দরদী সন্তান জমিদার প্রাণনাথ রায় চৌধুরী। নিজ অর্থে শ্রমে এক কথায় চরম অধ্যবসায়ে তিনি সাতক্ষীরার জন্য, সাতক্ষীরার মানুষের কল্যানে খনন করেন খাল। দেশ বরেন্য স্বর্গীয় জমিদার প্রান নাথের নামানুসারে খালটির নাম করন হয় প্রাণ সায়র, প্রান সায়ের বা প্রানের খাল। ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ২০০ ফুট প্রশস্ত খালটি তৎকালীন ¯্রােতন্বেসী মরিচ্চাপ নদীর মোহনায় এল−ারচন থেকে নৌখালি খালের সাথে সংযুক্ত করে। সৃষ্টিশীল জমিদার প্রান নাথ রায় চৌধুরী অনুভব করেছিলেন সাতক্ষীরার উন্নয়নে বিশেষ করে ব্যবসা বানিজ্য, যাতায়াত যোগাযোগ সৌন্দর্যবর্ধন সর্বপরি পরিবেশ রক্ষায় শহরের মধ্যবর্তী স্থানে পানি প্রবাহের বিকল্প নেই। আর তাই তিনি ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ খালটি খনন করে সেই মহা কাজটি করেছিলেন। সাতক্ষীরার গর্ব জমিদার প্রান নাথ চৌধুরী লোকান্তরে তার অপর কীর্তি প্রান সায়ের খাল আজ সাতক্ষীরা শহর বাসির জন্য দুর্দান্ত অভিশাপ। অথচ প্রান সায়ের ছিল আর্শীবাদ আর উন্নয়নের বরপুত্র। দখলে দুষনে, শ্রীহীনতায় আজ বিবর্ন, অসহনীয় অকেজো খাল যা সাতক্ষীরার বোঝা হয়ে বোবা কান্নায় অশ্র“সিক্ত। আমাদের স্বর্গীয় জমিদার প্রান নাথ রায়ের অমর সৃষ্টি কেবল অবহেলিত নয়, তার সৃষ্টি কর্মকে আলোকিত করতে, প্রান ফিরিয়ে দিতে বারবার নদী খেকোদের অর্থ তসরুপের ক্ষেত্রে পরিনত হয়েছে। জলবায়ু ট্রাস্ট, পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় সেই সাথে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা বরাদ্ধ হলেও তা যথার্থ ভাবে ব্যবহৃত না হয়ে মহল বিশেষ অসম বানিজ্য করে নিজেদের অর্থ উপার্জনের মাধ্যম করেছে আর প্রান সায়ের ডুগরে ডুগরে কেঁদে ফিরে নিজের অক্ষমতা ও অসহায়ত্বের দিনলিপি জানিয়ে চলেছে। প্রান সায়েরের প্রানহীন করার খেলা সর্বপ্রথম শুরু হয় ১৯৬৫ সালে, সে সময় খালের দুই মাথায় দুই স−ুইজগেট নির্মান করে পানি প্রবাহের অবাধ ধারাকে বাঁধাগ্রস্থ করা হয় সে কারনে জেয়ার ভাটা সংকুচিত, নিয়ন্ত্রিত হয় সময়ের ব্যবধানে তা বন্ধ হয়। শহরের বর্য সহ নানান ধরনের অস্বাস্থকর সামগ্রীর শেষ ঠিকানা প্রানসায়ের আর তাই প্রতিনিয়ত প্রান সায়ের ভক্ষন করে চলেছে তার মৃত্যু সামগ্রী। আজকের আধুনিক, প্রানচাঞ্চল্য, সমৃদ্ধ সাতক্ষীরার সুতি কারবার প্রান সায়ের। দুর দুরান্ত হতে ব্যবসায়ীরা ইঞ্জিন নৌকা, পাল তোলা নৌকায় পরমা সাজিয়ে বানিজ্যে আসত বৃটিশ আসলে সাতক্ষীরা বিশেষ বানিজ্য নগরীতে পরিনত হয় আর তার কারন ছিল প্রানসায়ের। সাতক্ষীরার পৌরবাসির বুক ভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার উন্মুক্ত পথেয় প্রানসায়ের কিন্তু প্রান সায়েরের প্রানহীনতা বিষাক্ত নিঃশ্বাসের ক্ষেত্রে পরিনত হয়েছে। প্রাণ সায়েরের প্রান ফিরিয়ে আনতে হবে, শহরবাসির স্বাস্থ্য রক্ষা বিনোদন ক্ষেত্রে পরিনত করতে হবে। দুই মাথায় দুই ¯−ুইজ গেট অপসারন পরবর্তি মরিচ্চাপ নদীর সাথে সংযুক্ত করতে হবে। প্রান সায়ের হতে পারে চরম মহৎকার, নান্দনিক পর্যটন কেন্দ্র, যাতায়াত যোগাযোগ আর ব্যবসার মহাক্ষেত্র। প্রানসায়েরের দুই তীর ক্ষত বিক্ষত, দীর্ঘ ১৩ কিলোমিটারের পরতে পরতে পানি হীনতা ভয়াবহ দৃশ্য। ২০০ ফুট প্রশাস্তের প্রান সায়ের কতক ফুটে এসে থেমেছে। প্রতিদিনই দখল এবং দুষনে পরিনত হচ্ছে। সাতক্ষীরার প্রান রক্ষায় প্রান সায়েরের প্রান ফিরিয়ে আনতে হবে। আর এজন্য কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপই শেষ কথা।