এফএনএস: আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের যে প্রস্তাবিত বাজেট জাতীয় সংসদে পেশ করা হয়েছে তা বাস্তবায়নে সরকার ব্যর্থ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গতকাল শুক্রবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, গত পাঁচ বছরে আমরা যে বাজেটগুলো দিয়েছি, প্রতি বছরই বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা কতটা বাস্তবায়ন করতে পেরেছি, তা সবসময় প্রচার করেছি। ফেল করিনি, ইনশাআল্লাহ আগামীতেও ফেল করব না। এটি আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা এখানে যারা উপস্থিত হয়েছি প্রত্যেকের দেশপ্রেম আছে। দেশপ্রেম আছে বলেই আমরা বার বার বিজয়ী হয়েছি। আমরা ফেল করি না। তিনি বলেন, এদেশের সব কিছুর মূলে হলো মানুষ। তাদের কর্মদক্ষতা, দেশের প্রতি তাদের মায়া-মমতা, দায়বদ্ধতা অসাধারণ এক উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। আমার বিশ্বাস আমরা পরাজিত হবো না, বিজয়ী হবোই হবো। প্রস্তাবিত বাজেটে দেওয়া রাজস্ব আদায় সম্ভব কি না- এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই সরকার যখন ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসে, তখন রাজস্ব আদায় ছিল ৫৯ হাজার কোটি টাকা। এখন আমাদের রাজস্ব ২ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। ৫৯ হাজার কোটি টাকা থেকে যদি ৩ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছানো যায় তাহলে এখন যেটা বাড়তি বলা হচ্ছে, তা আমরা অর্জন করতে পারব। মূল্যস্ফীতি নিয়ে সরকারও শঙ্কিত: মূল্যস্ফীতি নিয়ে সরকারও শঙ্কিত বলে জানান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ে আমরা নিজেরাও শঙ্কিত। সারাবিশ্বই এখন মূল্যস্ফীতিতে আছে। আমরা খাবার তো বন্ধ করতে পারবো না। মানুষকে খাবার না দিয়ে রাখা যাবে না। আমরা একটা ফ্লেক্সিবল ওয়েতে এগোচ্ছি। যেসব কারণে এটি হয়, সেটি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। প্রয়োজন অনুযায়ী আমরা ছাড় দিচ্ছি। তিনি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তার মাধ্যমে প্রচুর খাদ্য সরবরাহ করছি। পাশাপাশি যেসব পণ্য নিত্যপ্রয়োজনীয়, সেখানে নিজেরা নিয়ন্ত্রণ করে সরকারকে সাহায্য করছি। এভাবে আমরা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করছি। মুস্তফা কামাল বলেন, যখন আমরা ক্ষমতায় আসি, তখন মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ শতাংশ। পরের ১০ বছরে সেটি ৬ শতাংশে নেমে আসে। সারাবিশ্বে মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়েছে। এখন খুব খারাপ সময়। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা ভালো আছি। এবারও যেসব প্রজেকশন আমাদের আছে, সবই আমরা বাস্তবায়ন করতে পারবো বলে আশা করি। অর্থমন্ত্রী বলেন, পুরো বাজেটই গরিব মানুষের জন্য উপহার। এ দেশে অনেক মধ্য আয়ের মানুষ আছে, সময় এসেছে তাদের ট্যাক্স পেমেন্ট করতে হবে। যারা আয় করেন ট্যাক্স দেওয়ার সক্ষমতা আছে তাদের ট্যাক্স দিতে হবে। আইএমএফের প্রেসক্রিপশনে বাজেট করিনি: আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রেসক্রিপশনে বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে মর্মে বিভিন্ন মহল থেকে ওঠা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে অর্থমন্ত্রী বলেন, আইএমএফের প্রেসক্রিপশনে বাজেট প্রণয়ন করিনি। বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠেছে সরকার আইএমএফের দেওয়া শর্তের ভিত্তিতে বাজেট প্রণয়ন করেছে- এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা তাদের প্রেসক্রিপশনে বাজেট করিনি। তাদের পরামর্শের যেটুকু গ্রহণ করা যায় সেটুকু করবো। সেখানে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আইএমএফের সঙ্গে যারা কাজ করে সেটি ভালো। তারা শুধু অর্থ দিয়ে সাহায্য করে না, অর্থনৈতিক বিভিন্ন সংস্কারে সহায়তা করে। তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখারও থাকে। তিনি বলেন, আমরা এখন বিশ্বের সবার সঙ্গে সম্পৃক্ত। কেউ আলাদাভাবে বসবাস করার কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। আপনি যদি আমদানি করেন, তাহলেও কাউকে লাগবে, রপ্তানি করলেও কাউকে লাগবে। একজনও কালো টাকা সাদা করেননি: সুযোগ দেওয়া সত্তে¡ও গত এক বছরে একজনও কালো টাকা সাদা করেননি বলে জানান অর্থমন্ত্রী। মুস্তফা কামাল বলেন, আমি গত বছরের বাজেট বক্তৃতায় বলেছিলাম, কেউ যদি অপ্রত্যাশিত টাকা দেশে নিয়ে আসে, তাহলে সেই টাকার কোনো কর দিতে হবে না। গত বাজেটে এ সুযোগটি দেওয়ার পরও এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রত্যাশিত টাকা বাংলাদেশে আসেনি। তাই এবারের বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়নি। দুই কোটি ৪৫ লাখ মানুষের চাকরির ব্যবস্থা করেছি: বর্তমান সরকার দুই কোটি ৪৫ লাখ মানুষের চাকরির ব্যবস্থা করেছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। কর্মসংস্থান বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, এ পর্যন্ত যেসব কমিটমেন্ট আমি দিয়েছি, সবগুলো পূরণ করেছি। আমি বলেছি দুই কোটি মানুষের চাকরির ব্যবস্থা করবো, কিন্তু আমরা দুই কোটি ৪৫ লাখ মানুষের চাকরির ব্যবস্থা করেছি। দেশের জনসংখ্যা বাড়ছে, চাকরিপ্রার্থীও বেড়েছে। তবে এখন কর্মসংস্থানও বেড়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন করা সম্ভব উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা যখন দেশ পরিচালনা শুরু করি, তখন ৫৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করতাম, সেটি দুই লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করতে পেরেছি। সুতরাং এবারও আমরা বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারবো। এসময় রিটার্ন দাখিল করলে দুই হাজার টাকা কর দেওয়া বাধ্যতামূলক প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, এটি আমি অনুরোধ করবো দেখে নিন কাদের টিআইএন আছে। টিআইএন বাধ্যতামূলক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের জন্য, গাড়িসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে। গরিব মানুষের জন্য তো টিআইএন বাধ্যতামূলক নয়। তাই আমি মনে করি তাদের দুই হাজার টাকা সরকারের কোষাগারে দিয়ে উন্নয়নে শামিল হওয়া গর্বের ব্যাপার। এসময় কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ড. শামসুল আলম, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারসহ উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য বাজেটের আকার চ‚ড়ান্ত করা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা। নতুন বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি (অনুদান ব্যতীত) ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয় ২ লাখ ২৭ হাজার ৫০৭ টাকা। মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছর ছিল ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৬ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেট ২৬ জুন অনুমোদন হবে। আর ১ জুলাই থেকে নতুন অর্থবছর শুরু হবে।