এফএনএস স্পোর্টস: দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করে ছুটছিলেন জো রুট। ইংল্যান্ডের রান চারশর দুয়ারে। এরপরই চমকটা এলো। অ্যাশেজের প্রথম দিনেই ইনিংস ঘোষণা করে দিলেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস! অনেকের কাছে যেমন, তেমনি বিষয়টি বিস্ময় হয়ে এলো হয়তো প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়ার জন্যও। এজবাস্টন টেস্টে প্রথম দিন ৭৮ ওভারে ৮ উইকেটে ৩৯৩ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করেছে ইংল্যান্ড। অ্যাশেজের কোনো টেস্টে সবচেয়ে কম ওভার ব্যাট করে প্রথম দিনে প্রথম ইনিংস ঘোষণার নজির এটিই। টেস্ট ইতিহাসে এর চেয়ে কম ওভার ব্যাট করে প্রথম দিনে প্রথম ইনিংস ঘোষণার ঘটনা আছে আর তিনটি। স্টোকসের ওই কৌশল অবশ্য প্রথম দিনে কাজে লাগেনি। ৪ ওভার ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে নিরাপদেই দিন পার করে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, বিনা উইকেটে করেছে তারা ১৪ রান। দিনের সবচেয়ে উজ্জ্বল নাম রুট। ১৫২ বলে ১১৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক। যেখানে ৭টি চারের পাশে ছক্কা ৪টি, যার দুটি মারেন রিভার্স স্কুপে। ২০১৫ সালের পর এই প্রথম অ্যাশেজে তিন অঙ্কের স্বাদ পেলেন তিনি। তার ক্যারিয়ারের শতক হলো ৩০টি। এ ছাড়া ফিফটি আসে জ্যাক ক্রলি ও জনি বেয়ারস্টোর ব্যাট থেকে। ক্রলি ৭৩ বলে ৬১ ও বেয়ারস্টো ৭৮ বলে করেন ৭৮ রান। ইংল্যান্ডের ব্যাটিংয়ের ৭৮ ওভারের ২৯টিই করেন ন্যাথান লায়ন। ১৪৯ রানে ৪ উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সফলতম বোলারও অভিজ্ঞ এই অফ স্পিনার। ফ্ল্যাট উইকেটে শুক্রবার টস জিতে ব্যাটিং নেন স্টোকস। ম্যাচের প্রথম বলেই চার মেরে শুরু করেন ক্রলি। তার সঙ্গী বেন ডাকেট অবশ্য টিকতে পারেননি। কদিন আগে ওভালে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল থেকে একাদশে একটি পরিবর্তন আনে অস্ট্রেলিয়া। মিচেল স্টার্কের জায়গায় ফেরেন জশ হেইজেলউড। তার হাত ধরেই আসে প্রথম সাফল্য। এই পেসারের অফ স্টাম্পে বেরিয়ে যাওয়া বলে কাট করার চেষ্টায় কিপারের গøাভসে ধরা পড়েন ডাকেট (১০ বলে ১২)। শুরুর ধাক্কা ইংল্যান্ড সামলে ওঠে ক্রলি ও অলি পোপের পঞ্চাশোর্ধ জুটিতে। ক্রলি ফিরতে পারতেন ৪০ রানে। স্কট বোল্যান্ডের ডেলিভারি তার ব্যাট ছুঁয়ে কিপারের গøাভসে গিয়েছিল, তবে অস্ট্রেলিয়ার কেউ আবেদন করেননি। পরে আল্ট্রা এজে ব্যাটে বলের স্পর্শের প্রমাণ মেলে। খানিক পরই লায়নের বলে পোপ (৪৪ বলে ৩১) এলবিডবিøউ হলে ভাঙে ৭০ রানের জুটি। অস্ট্রেলিয়া উইকেটটি পায় রিভিউ নিয়ে। ৫৬ বলে ফিফটি করে ক্রলি বিদায় নেন লাঞ্চের আগে শেষ ওভারে। এবারও অস্ট্রেলিয়া সাফল্য পায় রিভিউ নিয়ে। কট বিহাইন্ডের আবেদনে সাড়া দেননি মাঠের আম্পায়ার। রিপ্লেতে দেখা যায়, বোল্যান্ডের বল ব্যাটসম্যানের গøাভস ছুঁয়ে গিয়েছিল। প্রথম সেশনে ২৭ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ইংল্যান্ডের রান ছিল ১২৫। বিরতির পর বোল্যান্ডের বলে ডিপ পয়েন্টে হ্যারি ব্রæকের ক্যাচ ফেলেন ট্রাভিস হেড। ২৪ রানে জীবন পেয়ে বেশিদূর অবশ্য যেতে পারেননি ব্রæক। ৩৭ বলে ৩২ রান করে ফেরেন তিনি অদ্ভুতুড়ে এক আউটে। লায়নের বাড়তি বাউন্সের ডেলিভারিতে ব্রæকের থাই প্যাডে লেগে বল উঠে যায় উপরে, এরপর ব্যাটসম্যানের কাঁধে পড়ে বল মাটিতে ড্রপ খেয়ে আঘাত হানে স্টাম্পে! পরের ওভারেই হেইজেলউডের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ড্রাইভ করে কিপারের গøাভসে ধরা পড়েন অধিনায়ক স্টোকস। তখন ১৭৬ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে ইংল্যান্ড। তবে দারুণ ব্যাটিংয়ে সেই চাপ সরিয়ে দেন রুট ও বেয়ারস্টো। রুট ফিফটি করেন ৭৪ বলে। পঞ্চাশ ছুঁতে বেয়ারস্টোর লাগে ৫৮ বল। ১২৭ বলে স্পর্শ করে তাদের জুটির শতরান। দলকে তিনশর কাছে নিয়ে লায়নের বলে স্টাম্পড হয়ে ফেরেন বেয়ারস্টো। ৭৮ বলে ১২ চারে গড়া তার ৭৮ রানের ইনিংস। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে আসে ১২১ রান। দলের ডাকে অবসর ভেঙে ফেরা মইন আলি বেশিক্ষণ টেকেননি। ১৭ বলে ২ চার ও এক ছক্কায় ১৮ রান করে তিনিও ফেরেন লায়নের বলে স্টাম্পড হয়ে। ব্রড ২১ বলে করেন ১৬। রুট এরপর শতকে পা রাখেন অলি রবিনসনের সঙ্গে জুটি বেঁধে। লায়নের এক ওভারে রুটের দুই ছক্কা ও একটি চারের পর ইনিংস ঘোষণা করে দেন স্টোকস। দিনের বাকি তখন ২০ মিনিটের মতো। অল্প সময়ে নতুন বলে ডেভিড ওয়ার্নার ও উসমান খাওয়াজাকে তেমন ভাবাতে পারেননি ব্রড ও রবিনসন। ২০০৯ সালের পর এই প্রথম ঘরের মাঠে কোনো টেস্টে নতুন বল হাতে নিলেন না জেমস অ্যান্ডারসন। সংক্ষিপ্ত স্কোর: ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৭৮ ওভারে ৩৯৩/৮ ডিক্লে. (ক্রলি ৬১, ডাকেট ১২, পোপ ৩১, রুট ১১৮*, ব্রæক ৩২, স্টোকস ১, বেয়ারস্টো ৭৮, মইন ১৮, ব্রড ১৬, রবিনসন ১৭*; কামিন্স ১৪-০-৫৯-০, হেইজেলউড ১৫-১-৬১-২, বোল্যান্ড ১৪-০-৮৬-১, লায়ন ২৯-১-১৪৯-৪, গ্রিন ৬-০-৩২-১)। অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ৪ ওভারে ১৪/০ (ওয়ার্নার ৮, খাওয়াজা ৪*; ব্রড ২-০-৯-০, রবিনসন ২-০-৫-০)।