এফএনএস স্পোর্টস: কখনও হালকা বৃষ্টি, কখনও একটু ভারী। টানা বৃষ্টিতে খেলা শুরু হতে দেরি। অনেক অপেক্ষার পর যখন থামল বৃষ্টি, শুরু হলো ফারজানা হক ও শামিমা সুলতানার দুর্দান্ত ব্যাটিং। কিন্তু দারুণ শুরুর পর ঠিক আগের ম্যাচের মতোই দিক হারাল ব্যাটিং। তাতেই আশার মৃত্যু। দক্ষিণ আফ্রিকার পর এবার নিউ জিল্যান্ডের কাছে হেরে গেল বাংলাদেশ। মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে বৃষ্টিবিঘিœত ম্যাচে বাংলাদেশকে ৯ উইকেটে হারাল নিউ জিল্যান্ড। ডানেডিনে গতকাল সোমবার ২৭ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে ঝড়ো শুরুর পরও বাংলাদেশ আটকে যায় ১৪০ রানে। ফারজানা উপহার দেন বিশ্বকাপে দেশের হয়ে প্রথম ফিফটি। রান তাড়ায় নিউ জিল্যান্ড জিতে যায় ৪২ বল বাকি রেখে। ১৬ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে প্রথমবার ঘরের মাঠে ওয়ানডে খেলতে নেমে সুজি বেটস অপরাজিত থাকেন ৬৮ বলে ৭৯ রান করে। বিশ্বকাপে দুই ম্যাচে বাংলাদেশের দ্বিতীয় হার এটি, নিউ জিল্যান্ডের প্রথম জয়। মেয়েদের ক্রিকেটে বিশ্বের শীর্ষ দলগুলির একটি নিউ জিল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে এটি। বৃষ্টি থামার পর টস হেরে এই কঠিন কন্ডিশনে আগে ব্যাটিংয়ের চ্যালেঞ্জে নিতে হয়। তবে সেই চ্যালেঞ্জ যেন তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেন শামিমা ও ফারজানা। মূলত তিন-চারে ব্যাট করলেও ছোট হয়ে আসা ম্যাচে ওপেন করেন দলের সেরা ব্যাটারদের একজন ফারজানা। প্রথম ওভারে তার পুল শটের বাউন্ডারিতেই শুরু করে বাংলাদেশ। পরের ওভারে জেসিকা কারকে কাট করে বাউন্ডারিতে পাঠান শামীমা। শামীমা পরে দুটি বাউন্ডারি মারেন লিয়া তাহুহুর এক ওভারে। পাওয়ার প্লের ৫ ওভারে বাংলাদেশ তুলে ফেলে ৪১ রান। সেখানেই না থেমে জুটি পেরিয়ে যায় ফিফটি। এই বিশ্বকাপের আগে টানা ২৮ ওয়ানডেতে উদ্বোধনী জুটিতে ফিফটি পায়নি বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে শুরুর জুটিতে পঞ্চাশ এলো টানা দুই ম্যাচে। ৯ ওভারে ৫৯ রানের জুটিতে বাংলাদেশ পেয়ে যায় শক্ত ভিত। পেস বোলিংয়ে কাজ হচ্ছে না দেখে স্পিন আক্রমণে আনে নিউ জিল্যান্ড। এতে মেলে সাফল্য। অফ স্পিনার ফ্রান্সিস ম্যাকাইকে স্লগ সুইপ করে তাহুহুর হাতে ধরা পড়েন শামীমা (৩৬ বলে ৩৩)। স্পিনের সাফল্য দেখে অনিয়মিত অফ স্পিনার অ্যামি স্যাটার্থওয়েটের হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক সোফি ডিভাইন। স্যাটার্থওয়েট প্রথম এনে দেন দুই উইকেট! চোখধাঁধানো লফটেড শটে বাউন্ডারির মারার পর কাট করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন অধিনায়ক নিগার সুলতানা। সুইপ করার চেষ্টায় বোল্ড হয় অভিজ্ঞ রুমানা আহমেদ। এরপর সোবহানা মোসতারিকে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন ফারজানা। সেই চেষ্টাও খুব সফল হয়নি। অ্যামিলিয়া কারকে দুর্দান্ত কাভার ড্রাইভে বাউন্ডারি মারার পর হেইলে জেনসেনকে স্লগ করতে গিয়ে সোবহানা আউট হন ১৩ রানে। ফারজানা একটা পাশ আগলে দারুণ ব্যাটিংয়ে ফিফটি পূর্ণ করেন ৬০ বলে। তবে ফিফটির পরপর আউট হয়ে যান খানিকটা আলসেমিতে। ম্যাকাইয়ের বলে ড্রাইভ করে ক্রিজের একটু বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন ফারজানা। ম্যাকাই নিজের বলে ফিল্ডিং করে চোখের পলকে থ্রো করে ভেঙে দেন স্টাম্প। ৫২ রানে রান আউট হয়ে ফেরেন ফারজানা। নিচের দিকে দ্রুত রান করতে পারেন যিনি, সেই রিতু মনি প্রথম বলে বাউন্ডারি মেরে পরের বলেই আউট হয়ে যান। বাংলাদেশ আটকে যায় দেড়শর আগেই। নিউ জিল্যান্ডের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপের জন্য এই রান খুব বড় চ্যালেঞ্জ ছিল না। তাদের কাজ কঠিন করে তুলতে পারেননি বাংলাদেশের বোলাররাও। সালমা খাতুনের লেংথ বল পুল করতে গিয়ে সোফি ডিভাইন বোল্ড হন ১৪ রানে। কিন্তু সুজি বেটস ও অ্যামিলিয়া কার অনায়াসেই জুটি গড়ে দলকে নিয়ে যান জয়ের পথে। বাংলাদেশের পেস-স্পিন কিছুই ভালো হয়নি এ দিন। টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছিল ইনিংসজুড়ে। বোলারদের বল গ্রিপ করার সমস্যা ছিল স্পষ্ট। ফিফটির পর বেটসকে ফেরানোর একটি সুযোগ এসেছিল। বাঁহাতি স্পিনার নাহিদা আক্তারের বলে সহজ স্টাম্পিংয়ের সুযোগ হাতছাড়া করেন কিপার শামিমা সুলতানা। বেটস ইনিংস শেষ করেন ৮ হারে ৬৮ বলে ৭৯ রান করে। নিউ জিল্যান্ডের দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে বিশ্বকাপে হাজার রানও স্পর্শ করেন তিনি। কার অপরাজিত থাকেন ৩৭ বলে ৪৭ রানে। বেটসের সঙ্গে তার অবিচ্ছিন্ন জুটি ৮১ বলে ১০৮ রানের। তিন দিনের মধ্যে দুই ম্যাচের পর একটু বিরতি পাচ্ছে বাংলাদেশ। পরের ম্যাচ আগামী সোমবার পাকিস্তানের বিপক্ষে হ্যামিল্টনে। সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ: ২৭ ওভারে ১৪০/৮ (শামিমা ৩৩, ফারজানা ৫২, নিগার ১১, রুমানা ১, সোবহানা ১৩, রিতু ৪, সালমা ৯, লতা ৯*, জাহানারা ২, নাহিদা ০*; তাহুহু ২-০-১৯-০, জেস কার ৫-১-২৪-০, জেনসেন ৩-০-১৮-১, অ্যামিলিয়া কার ৬-০-২৮-০, ম্যাকাই ৬-০-২৪-১, স্যাটার্থওয়েট ৫-০-২৫-৩)। নিউ জিল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৪৪/১ (ডিভাইন ১৪, বেটস ৭৯*, অ্যামিলিয়া কার ৪৭*; জাহানারা ৩-০-২৫-০, তৃষ্ণা ৩-০-১৭-০, সালমা ৪-০-৩৪-১, নাহিদা ৫-১-৩১-০, রিতু মনি ২-০-১৩-০, রুমানা ২-০-১৪-০, লতা ১-০-৯-০)। ফল: নিউ জিল্যান্ড ৯ উইকেটে জয়ী। প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: সুজি বেটস।