এফএনএস: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে বিশ্ব পরিমন্ডলে প্রতিষ্ঠিত করতে পদক্ষেপ নেবে। পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের চিন্তাধারার সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের সংস্কৃতির বিকাশে জোরালো উদ্যোগ নেবে যাতে, এই নতুন প্রজন্ম তাদের সংস্কৃতির স্বাতন্ত্র্য ভুলে না যায়। ছয়টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং আরেকটি উদ্বোধনের সময় শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যেমন আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, তেমনি আমাদের সাংস্কৃতিকভাবেও এগিয়ে যেতে হবে। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব যাতে আমাদের সংস্কৃতি বিশ্ব অঙ্গনে একটি শক্তিশালী অবস্থান নিতে পারে। গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর শাহবাগে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে যুক্ত হন সরকার প্রধান। তিনি বলেন, তাঁর সরকার সংস্কৃতির আরও উন্নতির জন্য প্রযুক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করতে কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন প্রযুক্তির আবির্ভাবে আমাদের বাচ্চাদের চিন্তাভাবনা এবং বিশ্বাসগুলো সর্বদা পরিবর্তিত হচ্ছে। তাদের চিন্তাধারা অনুযায়ী আমাদের সংস্কৃতিকে উন্নত করতে হবে যাতে তারা কখনই বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে ভুলে না যায়। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সংস্কৃতির উন্নতি ও বিকাশের জন্য অতীতের ন্যায় প্রয়োজনীয় যা যা কিছু করা দরকার সে ব্যাপারে তাঁর সরকারের প্রতিশ্রæতি পুনর্ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ইতোমধ্যে ১৮৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪১টি উন্নয়ন প্রকল্প সম্পন্ন করেছে এবং বাংলাদেশী সংস্কৃতির উন্নয়নে গত সাড়ে ১৪ বছরে আরো ১৪টি প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি অপর ৪১টি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। কেউ যদি কোনো দেশকে ধ্বংস করতে চায় তাহলে সংস্কৃতির ওপর আক্রমণ করবে, এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলাদেশকে সাংস্কৃতিকভাবে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছিল। কারণ, তাদের নিশ্চিত পরাজয় জেনেও তারা মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল। সরকার প্রধান বলেন, আমরা সবসময় আমাদের সংস্কৃতিকে ধারণ করার পাশাপাশি এটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি এবং এইভাবে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ২০০৯ সাল থেকে বাঙালি জাতির ইতিহাস ও সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সাহিত্য ও গবেষণামূলক কাজকে রক্ষা ও সংরক্ষণ করে প্রযুক্তিগত জ্ঞানসম্পন্ন একটি শিক্ষিত জাতি গঠনে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বিশ্ব প্রযুক্তি দ্বারা আঁকড়ে আছে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম জাতিকে আধুনিক ও জ্ঞানভিত্তিক গড়ে তুলতে আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে প্রযুক্তিকে যুক্ত করতে হবে। সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র তৃণমূল পর্যায়ে আমাদের নিয়ে যাওয়া এবং সাংস্কৃতিক চর্চায় প্রযুক্তিকে সম্পৃক্ত করে আধুনিক জ্ঞান সম্পন্ন জাতি গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র তৃণমূল পর্যায়ে আমাদের নিয়ে যেতে হবে। তৃণমূলের মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে। অনেক মেধা সেখানে লুকিয়ে আছে। সেগুলো আমাদের উৎসাহিত করতে হবে, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে এবং আমাদের জাতীয় পর্যায়ে সেগুলো মূল্যায়ন করতে হবে। আমাদের দেশের মানুষ উদার মানসিকতার, অসা¤প্রদায়িক চেতনার। সেই দিকটি যাতে আরও বিকশিত হয়, সে ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে। তিনি বলেন, আজকের বিশ্ব প্রযুক্তির বিশ্ব। প্রযুক্তি শিক্ষা এবং প্রযুক্তিকে ব্যবহার করা, আমাদের সাংস্কৃতিক চর্চায় প্রযুক্তিকে সম্পৃক্ত করে, আধুনিক জ্ঞান সম্পন্ন জাঁতি হিসেবে আমাদের প্রজন্মকে গড়ে তুলতে চাই। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, যেকোনো দেশের বা যেকোনো জাতির সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করতে গেলে সংস্কৃতির উপরেই আঘাতটা আসে। সেই আঘাতটা এনেছিল পাকিস্তানী শাসকরা। সে ১৯৪৮ সালে আঘাতটা আসে। বাংলা ভাষায় কথা বলা যাবে না, উর্দু ভাষা বলতে হবে। নানাভাবে আমাদের মাতৃভাষার অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। আমাদের সংস্কৃতিটাই ধ্বংস করতে চেয়েছিল। আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে ধরে রাখা, তা বিকশিত করা এবং তারই মাধ্যমে আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে। সরকারপ্রধান বলেন, বেশ কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। বাংলা ভাষার, সাহিত্য, সঙ্গীত, নাটক, চলচ্চিত্র, চারুকলা, সৃজনশীল প্রকাশনাসহ শিল্পের সব শাখার উৎকর্ষ সাধন, চর্চার ক্ষেত্রে আরও প্রসারিত করার উদ্যোগ নিয়েছি। এই লক্ষ্যে জেলার শিল্পকলা একাডেমি ভবন এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ বা তাদের জন্য অনেক জায়গায় একাডেমিও নির্মাণ করে দিয়েছি। শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যখন দেশ শাসনের দায়িত্ব নেন, তখন আমাদের কোনো রিজার্ভ মানি ছিল না, কারেন্সি নোট ছিল না। এমন একটি অবস্থায় তিনি দেশের শাসনভার হাতে নিয়েছিলেন। তার উপর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ কিন্তু তখনও সংস্কৃতি বিকাশের কথা তিনি ভুলেন নাই। তিনি বলেন, জাতীয় গ্রন্থাগারগুলো ডিজিটাল করার উদ্যোগ নিয়েছি। পর্যায়ক্রমে সব উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের সরকারি লাইব্রেরি কার্যক্রম করার উদ্যোগ আমরা গ্রহণ করবো। জেলা পর্যায়ে একটি করে লাইব্রেরিগুলো রয়েছে, সেগুলো ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে। লাইব্রেরিকে আমাদের আরও বৈচিত্র্যময় এবং পাঠকবান্ধব করে গড়ে তুলতে হবে। পাবলিক লাইব্রেরিতে নতুন আঙ্গিকে গড়ে তোলার জন্য ৫২৪ কোটি টাকা ব্যয় গ্রন্থাগার অধিদপ্তরের বহুতল ভবন নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী যে ছয়টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সেগুলো হলো: গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের জন্য নতুন বহুতল ভবন, পুরান ঢাকা শহরের রোজ গার্ডেন, ঢাকায় কবি নজরুল ইনস্টিটিউট ভবন, কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ শিল্পকলা একাডেমি এবং আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং জাতীয় জাদুঘরে শিশু গ্রন্থাগার। তিনি কপিরাইট ভবনের একটি নবনির্মিত ১২তলা ভবনও উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি এবং সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের সচিব খলিল আহমদ।