সিরাজুল ইসলাম খুলনা থেকে \ খুলনায় প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। তবে রোগী বাড়লেও তা প্রতিরোধে তেমন কার্যকর কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। এমনকি ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার জন্য হাসপাতালগুলোতে খোলা হয়নি আলাদা কোনো ইউনিট। সাধারণ ওয়ার্ডে অন্য রোগীর সঙ্গেই চিকিৎসা নিচ্ছেন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা। ফলে ডেঙ্গু আরও বেশি ছড়ানোর শঙ্কা রয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার জন্য আলাদা ওয়ার্ডের প্রস্তুতি শেষ করেছেন এদিকে, খুলনায় চলমান উন্নয়ন কাজের ধীরগতির কারণে চলতি বর্ষা মৌসুমে যেখানে সেখানে জমে থাকছে পানি। এতে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়ার ঝুঁকি দেখছেন বাসিন্দারা। খুলনার একাধিক হাসপাতাল সূত্রে জানাগেছে, কোরবানির ঈদের পর থেকেই খুলনা জেলাসহ বিভাগে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বর্তমানে ২১ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে চারজন রোগী। আর চলতি বছরে খুলনায় সর্বমোট ৬৬ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। খুলনা বিভাগে যশোর ও নড়াইলে ডেঙ্গু রোগীর প্রাদুর্ভাব সবথেকে বেশি। যশোরে ৬৭ ও নড়াইলে ৫৩ জন রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে বিভাগে এখনো কোনো রোগী মারা যায়নি। নগরীর ৫ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার দৌলতপুর বীণাপাণি স্কুল এলাকার বাসিন্দা মোজাম্মেল হক বলেন, বেশ কয়েক মাস ধরেই আমাদের এলাকায় ড্রেন নির্মাণের কাজ করছে সিটি করপোরেশন। ড্রেন নির্মাণ করতে গিয়ে খুড়ে রাখা হয়েছে অনেক জায়গা। যেখানে পানি জমে থাকছে দিনের পর দিন। এই পানি অপসারণের কোনো পদক্ষেপ কাউকে নিতে দেখা যায়নি। তাছাড়া যে ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে তা আশপাশের বাড়ির চেয়ে অনেক উঁচু। বাড়ির পানি ড্রেনে যেতে পারছে না। এমনকি খোলা জায়গার পানিও ড্রেনে না গিয়ে জমে থাকছে। সেই জায়গা আগে থেকেই মশার প্রজননক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এ বিষয়ে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ মু. আশরাফ উজ জামান বলেন, খুলনায় একাধিক সংস্থা উন্নয়ন কার্যক্রম চালাচ্ছে। কিন্তু তাদের কাজের গতি এত ধীর যে নগরবাসী চরম ভোগান্তির মধ্যে রয়েছে। চলাচলের রাস্তা কেন্দ্রিক এই উন্নয়ন কার্যক্রমগুলোর কারণে যানবাহনের ভাড়া অধিক গুনতে হচ্ছে। সেইসঙ্গে সড়কের পাশের ড্রেনের চলমান উন্নয়ন কাজে গাফিলতির কারণে অধিকাংশ ড্রেন বন্ধ হয়ে গেছে। সেগুলো থেকে পানি অপসারণ হয় না। ফলে জমে থাকা পানিতে ডেঙ্গুসহ অন্য মশার বংশ বিস্তার হতে পারে। খুলনা বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. মো. মনজুরুল মুরশিদ বলেন, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। রোগীর সংখ্যা বাড়লে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে ৩০ শয্যার একটি আলাদা ডেঙ্গু ওয়ার্ডের প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। এ বিষয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. নিয়াজ মুস্তাফি বলেন, চিকিৎসকরা শুধুমাত্র চিকিৎসাসেবা দিতে পারেন। আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করলেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। এজন্য প্রয়োজন সব স্টেকহোল্ডারদের সমন্বিত কার্যক্রম। তিনি বলেন, কোনো অবস্থাতেই বাড়ির চারপাশে পানি জমতে দেওয়া যাবে না, এ দায়িত্ব সাধারণ মানুষকে নিতে হবে। দুইদিনের বেশি সময় জ্বর হলেই নিকটস্থ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি খুলনা সিটি করপোরেশনের কঞ্জারভেন্সি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধ খুলনা সিটি করপোরেশন বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। ড্রেন পরিষ্কার, নিয়মিত ফগার মেশিন দিয়ে মশা নিরোধক ওষুধ ছিটানোরসহ যেসব বাড়িতে ছাদবাগান রয়েছে তা মনিটরিং করা হচ্ছে। সে কারণেই ঢাকা বা অন্য জেলার তুলনায় খুলনাতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা অনেক কম।