দৃষ্টিপাত রিপোর্ট \ কথায় বলে আমড়া কাঠের ঢেকি সারমর্ম এমনই যে, এই কাঠ অতি দুর্বল বিধায় ইহার কাঠে ঢেকি হয় না। আমড়া কাঠ অনেকটা অকেজো এবং মুল্যহীন হলেও আমড়া ফল অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং ঔষধী সমৃদ্ধ পুষ্টিগুনে ভরা এক ফল। আমাদের দেশের অতি পরিচিত এই ফলটি বিশেষ লোভনীয়। খুব বেশী মুল্য না হলেও এর চাহিদা ও গ্রহনযোগ্যতার শেষ নেই। বর্তমান বাজারে আমড়া উঠতে শুরু করেছে গাছিরা গাছ থেকে আমড়া ভাংতে শুরু করেছে। ইতিপূর্বে আমড়া গাছ বসতবাড়ীর পাশে, পতিত জায়গায়, রান্না ঘরের চালার পাশে অযতেœ অবহেলায় জন্মালেও বর্তমান সময় আমড়ার অর্থনৈতিক মুল্যের কারনে বানিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করছেন চাষীরা। অপেক্ষাকৃত কম মূল্যের হওয়ায় একই সাথে মানবদেহের উপকারিতার কারনে আমড়ার চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় আমড়ার চাষ দিনে দিনে অধিকতর ক্ষেত্র বিস্তৃত হচ্ছে। সাতক্ষীরার হাট বাজার গুলোতে ব্যাপক ভাবে আমড়া ফলের উপস্থিতি এবং কেজি প্রতি ৩০/৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সব শ্রেনির মানুষের অন্যতম পছন্দের তালিকায় এই ফল। পুরোপুরি টকরা পুরোপুরি মিষ্টি নয়, দৃশ্যতঃ টক এবং মিষ্টি উভয়ের সংমিশ্রিত এই ফল মহিলাদের মাঝেও অত্যন্ত প্রিয়। আমড়া সাধারনত কাচা খাওয়ায় অভ্যস্থ অনেকে, কাঁচা খেতে টক মিষ্টির স্বাদ লাগলেও এই ফল পাকলে পরিপূর্ণ মিষ্টি হয়। আমড়া রান্নায় সবজি হিসেবেও বহুল ব্যবহৃত একটি ফল। আগষ্ট থেকে সেপ্টম্বর মাস পর্যন্ত আমড়ার মৌসুম। এই ফলে অন্ততঃ ৯০ ভাগ পানি সমৃদ্ধ। ৪-৫ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট ও সামান্য প্রোটিন থাকে। ১০০ গ্রাম আমড়ায় ভিটামিন সি পাওয়া যায় ২০ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ২৭০ মাইক্রোগ্রাম, সামান্য ভিটামিন বি, ক্যালসিয়াম ৩৬ মিলিগ্রাম, আয়রন ৪ মিলিগ্রাম, আমড়া মানব দেহের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয়তা আনায়ন করে। আমড়ার ঔষধী গুনাগুনের মধ্যে অন্যতম ইহা কোষ্ঠ কাঠিন্য দুর করে এবং ওজন কমাতে সহায়তা করে। রক্তের চর্বি কমাতে সহায়তা করে এবং রক্তস্বল্পতা দুর করে। আমড়া মুখের অরুচি দুর করে এবং ক্ষুধা বৃদ্ধি পায়। বদহজম হতে পরিত্রান জোগায় আমড়া, সর্দিকাশি রোধে আমড়ার গুনাগুনের শেষ নেই। সাতক্ষীরার বাস্তবতায় সা¤প্রতিক বছর গুলোতে ব্যাপক ভিত্তিক আমড়া চাষ হচ্ছে। পূর্বে অবস্থা পরিবর্তন হয়েছে সারি সারি আমড়া গাছে পরিচর্যা আর বেড়ে ওঠা সেই সাথে ফলধরা এবং অপরুপ সৌন্দর্য্যরে লীলাক্ষেত্র বিনির্মান করে চলেছে। আমড়া চাষী ও ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানাগেছে পাইকারী ভাবে আমড়া বেচা কেনার মাধ্যম হলো ফল সহ গাছ বিক্রি। ক্রেতারা গাছের ফল হিসেব করে গাছ ক্রয় করে থাকে। জুলাই হতে সেপ্টম্বর পর্যন্ত এই মৌসুম থাকে। সাতক্ষীরার বিপুল সংখ্যক মানুষ আমড়া ব্যবসার সাঙ্গে জড়িত এবং অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করছে। আমড়ার মরব্বা, আমড়ার চাটনি, আমড়ার কোরমা অত্যন্ত রসনা তৃপ্ত। সাতক্ষীরায় বানিজ্যিক ভাবে আমড়ার চাষ হওয়ায় এই ফলের অর্থনৈতিক গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। সাতক্ষীরার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকার বাজার সহ অপরাপর বিভাগীয় শহর গুলোতে আমড়া যাচ্ছে। যার সুফল সাতক্ষীরার ব্যবসায়ীরা পাচ্ছে। আমড়ার বাজার ও অর্থনৈতিক মূল্যের কারন হেতু বসতবাড়ী সহ বসতবাড়ী সংলগ্ন, ভিটায় আমড়া গাছ রোপনের কর্মযজ্ঞ চলছে।