চোখের পাতা মেলে পৃথিবী দেখার সাথে
নিজের অবস্থান দেখতে শেখে নারী।
কোন পরিবারে কন্যাসন্তান জন্ম হয়েছে
এটা শুনলেই যেন সবার মুখ বিবর্ণ হয়ে যায়।
গায়ের রঙ হলো কেমন, নাকটা
টিকালো কিনা, মাথায় চুল আছে তো
নানা রকম প্রশ্ন উঠে সবার মনে।
শিশুটির গায়ের রঙ যদি কালো হয়
বাবা- মায়ের মুখও কালো বর্ণ ধারণ করে।
আত্মীয় স্বজন তো মুখ টিপে হেসে
বলতে থাকে- ব্যাংকে টাকা জমাচ্ছো তো?
মেয়ে তো পার করতে হবে!
মেয়ে একটু বড় হলেই হাজার
বাঁধা নিষেধের বেড়াজাল,
এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না
আরে মেয়েদের এতো জোরে হাসতে মানা!
সহোদর ভায়ের পাতে খাবারের স্তুপ
আর মেয়েটা যেন কোথা থেকে ভেসে এসেছে!
ভাইটা ভালো স্কুলের ভালো ইউনিফরম পরে
আর মেয়েটা? যেনতেন একটা হলেই হলো
সেই তো পরের ঘর করতে হবে
রান্নাঘরে হাড়ি ঠেলতে হবে!
তার আবার এতো কিসের পড়া?
মেয়ে একটু বড় হতেই সবার চিন্তা
আরে বিয়ে দাও, পার করো, আর কতো!
বাড়ীর লোকের চিন্তা, পাড়ার লোকের
ঘুম হারাম, আত্মীয় স্বজনের নিদারুণ উদ্বেগ!
বিয়েতে মেয়ের আবার পছন্দ কি?
ও কি বোঝে ভালো মন্দ?
ভালো ঘর আর বর হলেই হলো
মুরুব্বীরা বুঝবে সে সব
তারা যা করে সেটাই ভালো।
মেয়ে দেখতে আসার নামে
চলে আরেক প্রকার মানসিক নির্যাতন
পায়ের পাতা থেকে চুল খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে
‘দেখি তো মা একটু হেঁটে দেখাও’
একথা বলে নারীত্বকে ছোট করে
মেয়ে দেখতে আসা চৌদ্দ জনের বিশাল বহর।
কয়েকপদের ব্যঞ্জনা দিয়ে খেয়ে
নির্লজ্জের মতো দন্ত বিকশিত করে
জানান দেয় – পরে জানাবো!
এসব লাঞ্ছনার পরে যদিও বিয়ে হয়,
বিয়ের পরে নতুন বউ এর
স্বামীর পছন্দই তার পছন্দ
স্বামীর বাড়ীই আসল বাড়ী!
স্বামী, সংসার – সন্তান এটাই নারীর জগৎ!
এরপরেও নারী থেমে থাকে না
সব প্রতিকূলতা পার করে
নিজের ইচ্ছা শক্তিতে ভর করে
অদম্য সাহস আর আত্মবিশ্বাসে
সামনে এগুতে থাকে।
এতো বঞ্চনা, সহস্র লাঞ্ছনা
নারীকে থামাতে পারে না।
নারীর অগ্রযাত্রা তাই সবখানে
সমরে সংসারে, অন্দরে অন্তরীক্ষে
সাহিত্য সংগীতে, রাষ্ট্র পরিচালনায়।
সর্বক্ষেত্রে নারী রেখেছে সফলতার স্বাক্ষর।
অপরাজিতা নারী! সমাজের শিকল ভেঙে
পৌঁছে যাও সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে।