আবু ইদ্রিস শ্যামনগর থেকে \ সুন্দরবন অনন্য সুন্দর। গুণে, সৌন্দর্যে, সম্পদে ভরপুর। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই নৈসর্গিক ভূস্বর্গ শুধু সৌন্দর্যের জন্য ভুবন খ্যাত নয়। এটি প্রাকৃতিক সম্পদ সহ বিভিন্ন গুণে গুণান্বিত। যা লেখনী ভাষায় তুলে ধরা সম্ভব নয়। আজকের এই আয়োজনে প্রাকৃতিকভাবে সুন্দরবনে জন্ম নেওয়া ঔষধি ফল কেওড়া সম্পর্কে। কোন পরিচর্যা ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে সুন্দরবনে জন্ম নেয় কেওড়া গাছ। দ্রুতবর্ধনশীল এই গাছ। এ গাছের গড় উচ্চতা প্রায় ২০ মিটারের মতো। গাছের পাতা দেখতে চিকন প্রকৃতির। যখন ছোট ছোট হলুদ ফুলে গাছ ভরে যায় দেখতে বেশ মনোরম দৃশ্য মনে হয়। ফলের আকার আকৃতি ও বেশ ছোটো। ফলের স্বাদ টক বা অম্ল। সাধারণত ফলের উপরিভাগ টাই মানুষ খেয়ে থাকে। এই কেওড়া ফলের গল্প বেশ পুরাতন। সুন্দরবন সম্পর্কে কোন গল্পের আসর গ্রাম, গঞ্জে বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসলে আশেপাশে কচিকাচা সহ সব ধরনের বয়সী লোকদের ভিড় জমে। বাঘ, বানর, হরিণ প্রাণী সহ গাছপালা, প্রকৃতি, নদ, নদী সম্পর্কে কত মজার গল্প কাহিনী উঠে আসে। এসব মজার গল্প কাহিনী সবাই অধীর আগ্রহে শোনে। এসব রস রসায়ন গল্পের মাঝেও অনেক দুঃখের গল্প রয়ে যায়। এগুলো নিয়ে ভাবার মত সময় কই।এগুলো পড়ে যায় স্মৃতির অতল গহ্বরে। সুন্দরবনে প্রাথমিক চিকিৎসা নেওয়ার কোন উপায় নেই। তাহলে সুন্দরবনে মানুষ রোগে আক্রান্ত হলে ওষুধপত্র মিলবে কোথা থেকে? গল্পে বলতে শুনেছি সুন্দরবনের কারো ডায়রিয়াজনিত রোগ হলে কেওড়া সিদ্ধ খেলে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। বর্তমান সময়ে সে গল্পের যথেষ্ট প্রমাণ সত্যতা মিলেছে। কেওড়া তে যথেষ্ট পরিমাণে জিংক, পটাসিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। পাতলা পায়খানা প্রতিরোধের জিংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে পাশাপাশি পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম পাতলা পায়খানা রোধে সক্রিয় কার্যকরী উপাদান হিসেবে কাজ করে। পেটের পীড়ার জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়াকে কার্যকরভাবে দমন করতে পারে উপরোক্ত উপাদানগুলি। মহামূল্যবান সহজলভ্য ফলটি তে আছে ডায়রিয়া ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধী এবং ব্যথা নাশক গুনাগুন। অতি সহজ প্রাপ্ত ও সহজলভ্য ফলটি প্রকৃতপক্ষে খুবই মূল্যবান। আমলকি, আপেল ও কমলা ফলের তুলনায় এর পুষ্টিগুণ অধিক বেশি। বিনা খরচ ও পরিচর্যায় ফলটা আমরা পাই তাই গুরুত্বের সাথে এ ফলের পুষ্টিগুণ যাচাই-বাছাই করিনা। দামি ফল হলে আমাদের কাছে মনে হয় এর পুষ্টিগুণ অধিক বেশি কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেটা না। সহজ প্রাপ্ত, সহজলভ্য ফলেও পুষ্টিগুণ অধিক পরিমাণ থাকতে পারে। বিভিন্ন গুনে গুণান্বিত তা কেওড়া নিয়ে বিবেচনা করলে সহজে অনুমান করা যায়। তাই এই কেওড়ার উপরে ব্যাপক ভিত্তিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণার প্রয়োজন। এজন্য সুন্দরবন কেন্দ্রিক ভেজস উদ্ভিদ ও ভেজস ঔষধ উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা গার প্রয়োজন। বাস্তবতা অর্থে এ ধরনের গবেষণাগার স্থাপিত হলে একদিকে প্রাকৃতিক ভেজস ঔষধ উৎপাদন হবে। অন্যদিকে বহু মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। ভেজষ ওষুধের পরিচিতি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিশ্বে তুলে ধরতে পারলে জাতীয় অর্থনীতিতে রাজস্ব বৃদ্ধির হার বহুলাংশে বেড়ে যাবে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সুন্দরবনের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে, আন্তরিক হতে হবে এর অভ্যন্তরীণ প্রাকৃতিক সম্পদ সন্ধানে। অনুসন্ধানের ভিত্তিতে কেওড়ার মতো আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপকারী ভেজাস উদ্ভিদ, লতাপাতা গুল্ম সন্ধান পাওয়া যেতে পারে। এ বিষয়ে শ্যামনগর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান প্রভাষক মোঃ সাইদুর রহমান সাঈদ এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন সুজন বোনকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করে যাচ্ছি এটি আমাদের জাতীয় সম্পদ। পাশাপাশি সুন্দরবন কেন্দ্রিক যদি গবেষণাগার স্থাপন করা হয় তাহলে প্রাকৃতিক উদ্ভিদ এর মাধ্যমে ভেজাস ঔষধ উৎপাদন করা সম্ভব। কেওড়ার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে তার কাছে জানতে চাইলেন তিনি বলেন কেওড়া যে এত মূল্যবান জিনিস তা আমার আগে জানা ছিল না। এ ধরনের মূল্যবান সম্পদ আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে রাজস্ব আয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এখানে গবেষণাগার স্থাপনের জন্য আমার পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব আমি চেষ্টা করবো সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের মাধ্যমে সহযোগিতা করার। শ্যামনগর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আসাদুজ্জামান এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন সুন্দরবন কেন্দ্রিক গবেষণাগার স্থাপনের জন্য আমাদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার চেষ্টা করব।