কলারোয়া (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি \ সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার মুরারিকাটি গ্রামে উৎপাদিত মাটির টালি এখন ইউরোপ-আমেরিকায় রফতানি হচ্ছে। সেখানকার মৃৎশিল্পীরা নিপুণ হাতে ফেক্স অ্যাঙ্গুলার টালি, হেড ড্রাগুলার, স্কাটিং, স্টেম্প, স্কয়ার, রুপ, ব্রিকস ও ফ্লোর টালি তৈরি করেন। সেগুলো শোভা পাচ্ছে পাশ্চাত্যের বিভিন্ন স্থাপনায়। মুরারিকাটিতে উৎপাদিত টালির রফতানি কারক খুলনার নিকিতা ইন্টারন্যাশনাল, মা-কটোস ইন্টারন্যাশনাল, কুমিল্লার আর নো এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট ও কলারোয়া টালি ইন্টারন্যাশনালসহ আরো ১০-১২টি প্রতিষ্ঠান সম্পৃক্ত রয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তির পাশাপাশি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দেশের রফতানিতে মুরারিকাটির টালি আরও ভূমিকা রাখতে পারে। রফতানিজাত টালি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স কলারোয়া টালি ঘরের স্বত্বাধিকারী ও স্থানীয় কয়লা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. আবুল হোসেন জানান, ২০০৯ সাল থেকে তারা টালি উৎপাদন করে আসছে। প্রতি মৌসুমে ৮-১০ লাখ টালি উৎপাদন হয় তার কারখানায়। উৎপাদিত এসব টালি বিভিন্ন রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করেন। রফতানিতে অনেক সম্ভাবনাময় মুরারিকাটির মাটির টালি। ইউরোপ-আমেরিকায় ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আবুল হোসেন আরও জানান, যারা দিন-রাত পরিশ্রম করে দৃষ্টিনন্দন মাটির টালি উৎপাদন করেন, তারা সরকারের প্রণোদনা পান না। প্রণোদনা দেয়া হয় প্রভাবশালী রফতানিকারককে। মুরারিকাটি গ্রামে অন্তত ৪০-৪৫টি কারখানায় উৎপাদন হয় এ টালি। এসব কারখানা থেকে বছরে ১৫-২০ কোটি টালি উৎপাদন হয়, যার রফতানি মূল্য ১৫০ কোটি টাকার ওপরে। তবে করোনার সময়ে কয়েকটি কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। রফতানিজাত এ টালি শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে স্বল্প সুদে ঋণসহায়তার পাশাপাশি সরকারি ভর্তুকিতে আধুনিক প্রযুক্তি সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। দীপা টালির স্বত্বাধিকারী বাদল চন্দ্র পাল জানান, ২০০৫ সালের দিকে প্রথম রফতানিজাত টালি উৎপাদন শুরু হয়। এরপর ২০০৬-০৭ পর্যন্ত খুব ভালো ব্যবসা হয়। তারপর কারখানা যত বাড়তে থাকে ততই শুরু হয় প্রতিযোগিতা। রফতানির পরিমাণ বাড়লেও আগের মতো মুনাফা হচ্ছে না। এটির বাজার ব্যবস্থার জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে রফতানিজাত এ টালি শিল্পকে টিকিয়ে রাখা মুশকিল হবে। ১৬-১৭ বছর আগেও প্রকার ভেদে একেকটি টালিতে উৎপাদন খরচ বাদে মুনাফা থাকত, যা বর্তমানে প্রায় একই রয়ে গেছে। অথচ এখন শ্রমিকের বেতন-ভাতা প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। মাটি ও জ্বালানির দামও অস্বাভাবিক। ফলে কোনো রকম টিকে রয়েছে এখানকার কারখানাগুলো। রফতানিকারক নিকিতা ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপক সুলতান আহমেদ বলেন, ইউরোপ ও আমেরিকার ছয়-সাতটি দেশে মুরারিকাটির টালি রফতানি হচ্ছে। বিশেষ করে জার্মানি, ইতালি, স্পেন, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় প্রতি বছর ৪৫-৫০টি কনটেইনার টালি পাঠানো হয়। তবে এখন এর চাহিদা বেড়েছে। তিনি আরও জানান, মোট রফতানির ২৫ শতাংশ টালি তারা নিজেরাই উৎপাদন করেন এবং বাকি ৭৫ শতাংশ বিভিন্ন কারখানা থেকে সংগ্রহ করে রফতানি করা হয়। সাতক্ষীরা বিসিক শিল্পের উপ-ব্যবস্থাপক গোলাম সাকলাইন বলেন, মুরারিকাটি মাটির টালি সাতক্ষীরার জন্য অনেক বড় সুনামের। এ শিল্পের প্রসার বাড়াতে বিসিকের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে। সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ জানান, দৃষ্টিনন্দন টালি সাতক্ষীরা জেলাসহ দেশ-বিদেশে পরিচিত করেছেন কলারোয়ার মুরারিকাটি গ্রামের মৃৎশিল্পীরা। এখান থেকে বছরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে সরকার। এ শিল্পকে আরো সম্ভাবনাময় করতে সরকারের পক্ষ থেকে স্বল্প সুদে ঋণসহ অন্যান্য সহযোগিতা করা হবে।