এফএনএস স্পোর্টস: ইনিংসের প্রথম বলে চার মেরে শুরু। ওই আক্রমণাত্মক ঢঙেই অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের এলোমেলো করে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ওপেনার হিসেবে দেশের মাটিতে অ্যাশেজ টেস্টে দ্বিশতকের সম্ভাবনা জাগালেন জ্যাক ক্রলি। অল্পের জন্য যদিও পারলেন না তিনি। তবে ক্রলির দেড়শ ছাড়ানো ইনিংস এবং জো রুটের সঙ্গে তার বিস্ফোরক জুটিতে ম্যানচেস্টার টেস্টের নিয়ন্ত্রণ নিল ইংল্যান্ড। সিরিজের চতুর্থ টেস্টের দ্বিতীয় দিন অস্ট্রেলিয়াকে ৩১৭ রানে থামিয়ে ইংল্যান্ড ৪ উইকেট হারিয়ে তুলেছে ৩৮৪ রান। ওভারপ্রতি রান তুলেছে তারা ৫.৩৩ করে। লিড ৬৭ রানের। দিনের সব আলো কেড়ে নেন ক্রলি। ১৮২ বলে ১৮৯ রানের মাস্টারক্লাস ইনিংস খেলেন ২৫ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। যেখানে ২১টি চারের পাশে ছক্কা ৩টি। ১৯৯৭ সালে এজবাস্টনে নাসের হুসেইনের ২০৭ রানের পর ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইংল্যান্ডের কারও সর্বোচ্চ ইনিংস এটিই। দেশের মাটিতে অ্যাশেজে ইংল্যান্ডের ওপেনারদের মধ্যে ক্রলির চেয়ে বড় ইনিংস আছে ¯্রফে তিনটি- ১৯৩৮ সালে ওভালে লেন হাটনের ৩৬৪, একই মাঠে ১৯৮৫ সালে গ্রাহাম গুচের ১৯৬ ও লিডসে ১৯৭৭ সালে জেফ বয়কটের ১৯১। রুট ৯৫ বলে ৮ চার ও এক ছক্কায় করেন ৮৪ রান। ক্রলির সঙ্গে তার তৃতীয় উইকেট জুটিতে ২০৬ রান আসে ¯্রফে ১৮৬ বলে। মইনের ব্যাট থেকে আসে ৮২ বলে ৫৪ রান। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে অস্ট্রেলিয়া বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিন শুরু করে ৮ উইকেটে ২৯৯ রান নিয়ে। দিনের প্রথম বলেই প্যাট কামিন্সকে ফিরিয়ে ম্যাচে নিজের প্রথম উইকেট নেন জেমস অ্যান্ডারসন। পরের ওভারে জশ হেইজেলউড ¯িøপে ধরা পড়লেও ‘ওভারস্টেপ’ করেন বোলার ক্রিস ওকস। এরপর অস্ট্রেলিয়া যোগ করে আরও ১৭ রান। হেইজেলউডকে ফিরিয়েই অ্যাশেজে প্রথম এবং ক্যারিয়ারে পঞ্চমবার পাঁচ উইকেটের স্বাদ পান ওকস। মিচেল স্টার্ক অপরাজিত থাকেন ৬ চারে ৯৩ বলে ৩৬ রান করে। জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে ইংল্যান্ডের শুরুটা ভালো ছিল না। তৃতীয় ওভারে বেন ডাকেটকে কট বিহাইন্ড করে ফেরান স্টার্ক। ক্যামেরন গ্রিনের বলে ২০ রানে ক্রলিকে আম্পায়ার এলবিডবিøউ দিলেও রিভিউ নিয়ে বাঁচেন ব্যাটসম্যান। মইনের সঙ্গে তিনি গড়ে তোলেন জুটি। ক্রলি ফিফটি স্পর্শ করেন ৬৭ বলে। পঞ্চাশ ছুঁতে মইনের লাগে ৭৪ বল। এরপর একবার জীবন পেলেও বেশিদূর আর যেতে পারেননি মইন। স্টার্কের শর্ট বলে ক্যাচ তুলে মইন ফিরলে ভাঙে ১২১ রানের জুটি। ৭ চারে ৮২ বলে গড়া বাঁহাতি স্পিনিং অলরাউন্ডারের ৫৪ রানের ইনিংস। এই ইনিংসের পথে ৩ হাজার রানের মাইলফলকও ছুঁয়ে ফেলেন মইন। ষোড়শ ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে অন্তত ৩ হাজার রান ও ২০০ উইকেটের ডাবল স্পর্শ করলেন তিনি। রুট উইকেটে যাওয়ার পর রান আসতে থাকে দ্রæত। দারুণ সব শটে এগিয়ে যাওয়া ক্রলি চতুর্থ টেস্ট সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ৯৩ বলে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্টে ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানের তৃতীয় দ্রæততম সেঞ্চুরি এটি। ১৯০২ সালে ওভালে ৭৬ বলে সেঞ্চুরি করে চ‚ড়ায় আছেন গিলবার্ট জেসপ। যেকোনো দলের বিপক্ষেই ইংল্যান্ডের দ্রæততম সেঞ্চুরি এটি। ১৯৮১ সালে লিডস ও ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ৮৬ বলে শতক ছুঁয়েছিলেন ইয়ান বোথাম। জুটির শতরান পূর্ণ হয় ৮২ বলে। দ্বিতীয় সেশনে ২৫ ওভারে ইংল্যান্ড তোলে ১৭৮ রান! চা-বিরতির পর রুট পঞ্চাশে পা রাখেন ৪৫ বলে। ১৫২ বলে দেড়শ ছুঁয়ে ক্রলি ছুটছিলেন দ্বিতীয় দ্বিশতকের পথে। কিন্তু মাইলফলক থেকে ১১ রান দূরে থাকতে গ্রিনের অফ স্টাম্পের বল স্টাম্পে টেনে আনেন তিনি। রুট এরপর আর বেশিক্ষণ টেকেননি। হেইজেলউডের নিচু হওয়া বলে বোল্ড হন সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক। দিনের বাকিটা কাটিয়ে দেন হ্যারি ব্রæক (১৪*) ও বেন স্টোকস (২৪)।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: (আগের দিন ২৯৯/৮) ৯০.২ ওভারে ৩১৭ (স্টার্ক ৩৬*, কামিন্স ১, হেইজেলউড ৪; ব্রড ১৪-০-৬৮-২, অ্যান্ডারসন ২০-৪-৫১-১, ওকস ২২.২-৪-৬২-৫, উড ১৭-৫-৬০-১, মইন ১৭-১-৬৫-১)
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৭২ ওভারে ৩৮৪/৪ (ক্রলি ১৮৯, ডাকেট ১, মইন ৫৪, রুট ৮৪, ব্রæক ১৪, স্টোকস ২৪; স্টার্ক ১৫-০-৭৪-২, হেইজেলউড ১৫-২-৬২-১, কামিন্স ১৬-০-৯৩-০, গ্রিন ১০-১-৪০-১, হেড ৬-০-৪৮-০, মার্শ ৯-০-৫৭-০, লাবুশেন ১-০-৩-০)