জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে \ উচ্ছেদ অভিযানের ঝুঁকি কম থাকায় ভূমিদস্যুদের জন্য বন বিভাগের জমি এখন নিরাপদ সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে। কারণ এই সম্পত্তি একবার কেউ দখলে নিলে ফেরত দেয়া লাগে না। ফলে কর্তৃপক্ষের দুর্বলতার সুযোগে অবাধে দখল হয়ে যাচ্ছে সরকারি এই সম্পত্তি। সংকুচিত হয়ে পড়ছে বনায়নের আওতা। অনুসন্ধান দেখা গেছে, সব সরকারের সময় ভাগ-বাটোয়ারার মাধ্যমে বেহাত হয়েছে বনের সম্পত্তি। এখনো চলমান আছে এই প্রক্রিয়া। সরকারি দল, বিরোধী দল এবং রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় শিল্পপতি নামধারী ভূমিদস্যুরাও সুযোগ বুঝে কজ্বায় নিচ্ছে। আবার সংসদীয় কমিটির অনেক প্রভাবশালী সদস্যদের নজর পড়েছে ওই জমির দিকে। এ নিয়ে কিছু সংসদীয় কমিটিতে বাক-বিতন্ডের ঘটনাও ঘটেছে। বন বিভাগ বলছে, যারা সম্পত্তি দখলে নিচ্ছেন সবাই রাষ্ট্রের অসাধারণ মানুষ। এসব প্রভাবশালীদের সঙ্গে সীমিত জনবল দিয়ে পেরে উঠা সম্ভব না কর্তৃপক্ষের। এ অসহায়ত্তে¡র সুযোগে কুমতলববাজদের নজর বনের জমি দখলে বেশি। তবে পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছে, জনবল সংকটের খোঁড়া অজুহাত ও প্রভাবশালীদের সঙ্গে পেরে না উঠার কারণে বন বিভাগের জমি বেদখল হচ্ছে -এ ধরণের যুক্তি অবান্তর। কারণ বন বিভাগ ও দখলকারী দুজনই ‘চোরে চোরে মাসতুত ভাই’। আইন আছে সঠিকভাবে প্রয়োগ না হওয়াই বন বিভাগ এই বিশৃঙ্খলা। সংসদীয় কমিটিতে উত্থাপিত নথির তথ্যমতে, ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন বাদে দেশের নয়টি অঞ্চলে বন বিভাগের রাবার বাগানের জমি আছে। এসব জমির পরিমাণ ৪২ হাজার১১৬ দশমিক ০১ একর। যারমধ্যে সর্বশেষ তালিকানুযায়ী বন বিভাগের হাত ছাড়া হওয়া জমির পরিমাণ ৬ হাজার ২২ দশমিক ৮৯ একর। তবে নামমাত্র কিছু জমি উদ্ধার হলেও তার পরিমান যত-সামান্য অর্থাৎ ১৯৬ একর। তা-ও মামলাতে আটকে আছে। এ প্রসঙ্গে বন ও পরিবেশ উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার বলেন, বনের জমির জায়গা দখল এই প্রথম না; বহু আগে থেকেই এই দখল কার্যক্রম চলে আসছে। বেদখল জমি উদ্ধারের জন্য যে ধরণের জনবল ও সরঞ্জাম দরকার, তা নেই বন বিভাগের। বন বিভাগের নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনার জন্যও জনবল সঙ্কট রয়েছে। এমনকি জমি উদ্ধার করতে গিয়ে মানুষ খুনও হয়েছে। যারাই জমি দখল করেন তারা সাধারণ মানুষ না অসাধারণ মানুষই করেন। বন ও পরিবেশ সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বেদখল হওয়া জমি উদ্ধারে সর্বদা তৎপর আছেন বলে জানান। পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, দেশের সুষম পরিবেশ বজায় রাখার জন্য বন বিভাগের গুরুত্ব অপরিসীম। দেশের বন ও প্রাকৃতিক পরিবেশকে ইতিমধ্যে ধ্বংস করা হয়েছে। তাই এটা ধ্বংস হয়ে বন্ধ হয়ে গেছে এমন না। বরং বন দখলের চলমান প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুর রব বলেন, যেভাবেই হোক যত বন নিধন ও দখল হবে (শিল্প কারখানা বা বসতি) ততই আমাদের পরিবেশের জন্য মারাত্বক হুমকি হবে। আর যারাই দখল করেন তাদের নিবৃত্ত করা এবং বন সংরক্ষণের জন্য সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। এর জন্য মানুষকে সচেতন করতে হবে। সিপিআরডির নির্বাহী পরিচালক মো. শামসুদ্দোহা বলেন, বন বিভাগ পাবলিক কমন্স। বন যেটা আছে সেটা আর কাটা যাবে না। নতুন বন সৃজন করতে হবে। এখানে উল্টো ঘটনা দেখে আসছি, নতুন বনায়ন এবং সংরক্ষণ করতে পারছি না । বরং বনের যেটুকু আছে দখল করে শিল্প কল-কারখানা স্থাপন করছি।