এফএনএস স্পোর্টস: ‘আজকে থেকে বাংলাদেশ দলের ওয়ানডে অধিনায়কত্ব থেকে পদত্যাগ করছি’- বেশ স্বাভাবিক থেকেই বললেন তামিম ইকবাল। এক মাস আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে আকস্মিক অবসর ঘোষণার সময় আবেগের কাছে হার মেনে বারবার থমকে যাওয়া সেই তামিমের লেশমাত্রও দেখা গেল না এদিন। অনেকটা স্বাভাবিকভাবেই তিনি জানিয়ে দিলেন অধিনায়কত্ব ছাড়ার খবর। তবে হৃদয়ের সবটুকু তো আর বাইরে ফুটে ওঠে না সবসময়। নেতৃত্ব ছাড়ার বেদনা ঠিকই স্পর্শ করেছে তামিমকে। সেই কষ্টের চেয়েও বেশি রয়েছে অবশ্য নিজের অধিনায়কত্বে দলের সাফল্যের গর্ব। অধিনায়কত্বের অধ্যায়ে পেছন ফিরে তাকিয়ে নিজেকে বেশ ভালো নম্বরই দিয়েছেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান। চিকিৎসা নিতে লন্ডন যাওয়ার আগেই তামিম বলেছিলেন, দেশে ফিরে বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুসের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন তিনি। সেখানেই আসতে পারে গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত। সেই অনুযায়ী বৃহস্পতিবার হলো সেই আলোচনা। যেখানে থাকলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানও। এ দিন রাতে তার বাসভবনে সবার আগে হাজির হন জালাল। কিছুক্ষণ পর আসেন তামিমও। পরে নাজমুল হাসান এলে শুরু হয় তিন জনের বৈঠক। প্রায় ঘণ্টাখানেকের আলোচনার পর সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়কত্ব ছাড়ার ঘোষণা দেন তামিম। তাকে মূল্যায়ন করতে বলা হয় নিজের অধিনায়কত্ব। ৩৪ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান শোনালেন তৃপ্তির কথাই। “আমি মনে করি (অধিনায়ক হিসেবে) যাত্রাটা দারুণ ছিল। ফলাফলই এর পক্ষে কথা বলবে। আমার মনে হয়, আমি অধিনায়ক হিসেবে খুব ভালো করেছি।” ২০১৯ বিশ্বকাপের পর মাশরাফি বিন মুর্তজার চোটে প্রথমবার ওয়ানডে অধিনায়কত্ব পান তামিম। পরের বছর মাশরাফি দায়িত্ব ছাড়লে পাকাপাকিভাবে তাকেই নেতৃত্বের ভার দেয় বিসিবি। নিয়মিত ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে মাঠের ক্রিকেটে তার দায়িত্ব শুরু হয় ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে। সব মিলিয়ে ৩৭টি ম্যাচে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেন তামিম। এর মধ্যে জয় ২১টি, পরাজয় ১৪টি। ফলাফল হয়নি দুই ম্যাচে। সাফল্যের শতকরা হার ৬০ শতাংশ। বাংলাদেশকে ৫টির বেশি ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দেওয়া অধিনায়কদের মধ্যে সাফল্যের হারে তিনিই সফলতম। তার অধিনায়কত্বে বিশ্বকাপ সুপার লিগে তৃতীয় অবস্থানে থেকে সরাসরি মূল পর্বের টিকেট নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। তার পরও অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ার পেছনে তার চোটের কারণে তৈরি অনিশ্চয়তার কথাই বারবার বললেন তামিম। দলের কথা ভেবেই নেতৃত্বকে বিসর্জন দিয়েছেন বলে দাবি তার। “আমি (নাজমুল হাসান) পাপন ভাইকে একটা কথাই বলেছি যে, আমি যদি অধিনায়ক হিসেবে থেকে যেতে চাই, তাহলে সেটা স্বার্থপরের মতো কাজ হবে। কারণ আমার মনে হয়, আমি একটা সিরিজ খেলছি না এবং এরপরও প্রশ্নের জায়গা আছেৃ এই অবস্থায় যদি আমি দায়িত্বটা ধরে রাখি, তাহলে এটি স্বার্থপরতা হবে। যারা আমাকে চেনে, আমি সবসময়ই নিজের চেয়ে দলকে এগিয়ে রাখি।” “আমি হয়তো নামে অধিনায়ক থাকব না। কিন্তু একাদশে যখনই খেলব, আমি অধিনায়ক হিসেবেই কাজ করব। অধিনায়ক হিসেবে বলতে, যে অধিনায়কত্ব করবে, তাকে আমার তরফ থেকে যতটা সাহায্য করা সম্ভব, সবই করার চেষ্টা করব। হয়তো (অধিনায়ক হিসেবে) নামটা থাকবে না, তবে নিজের সর্বোচ্চটাই দেব নতুন অধিনায়ককে।” তামিম দায়িত্ব ছাড়ায় নতুন কাকে অধিনায়ক করা হবে, তা এখনই ঠিক করেনি বিসিবি। কিছু দিন সময় নিয়ে জানানো হবে এই সিদ্ধান্ত। তবে নতুন যে-ই দায়িত্ব পান, তার ও দলের প্রতি একটাই বার্তা সদ্য বিদায়ী অধিনায়ক তামিমের। “আমার কাছ মনে হয়, সবার লক্ষ্যটা একই। একদিকেই তাকিয়ে আছি আমরা, বিশ্বকাপে খুব ভালো করা। আমি অধিনায়ক থাকি বা অন্য কেউ থাকুক, লক্ষ্য একটাই। এটা নতুন করে আর বলার কিছু নেই।” ২০২০ সালে অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর থেকে বেশ কয়েকবারই দলকে নিয়ে ২০২৩ বিশ্বকাপে বড় স্বপ্নের কথা বলেছেন তামিম। সে লক্ষ্যে যাত্রাটাও ছিল দারুণ। বিশ্বকাপ সুপার লিগে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সই এর প্রমাণ। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে এখন বিশ্বকাপের দুই মাস আগে সরে গেলেন দায়িত্ব থেকে। স্বাভাবিকভাবেই সেই কষ্ট আছে তামিমের মনের গভীরে। “আমি যদি বলি যে, আমার খারাপ লাগছে না, তাহলে মিথ্যা বলা হবে। কারণ এতদিন একটা দলের সঙ্গে ছিলামৃ দিন শেষে ৯০ ভাগ মানুষ হয়তো স্বার্থপর হয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু যখন দল সামনে আসে তখন স্বার্থপরতার ব্যাপারটা দূরে রাখতে হবে। কারণ দল ও দেশ যে কোনো ব্যক্তির চেয়ে অনেক বড়।” “আমার এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে, এই একটাই কারণ ছিল যে, আমি নিজের সন্তুষ্টির কথা না ভেবে দল ও দেশের কথা ভেবেছি। এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথাও বলেছি। উনাকে যখন বুঝিয়েছি, উনি বুঝেছেন এবং আমাকে দোয়া দিয়েছেন ও বলেছেন ‘তুমি খেলো। তুমি মাঠে থাকো।’ এটাই আমার সবচেয়ে বড় চাওয়া। এই তো! এরপর আর কিছু বলার নেই।”